সিজারিয়ান মায়েদের জন্য যেসব সমস্যার ঝুঁকি বেশি

সিজারিয়ানে যন্ত্রণা কম হলেও পরবর্তী জটিলতা ও যত্নের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার।
মা ও নবজাতকের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই অনেক সময় চিকিৎসকেরা সিজারিয়ান অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। তবে অনেক মা আবার নিজের ইচ্ছাতেই প্রসবযন্ত্রণা এড়াতে এ পথ বেছে নেন। যদিও সিজারিয়ানে প্রসবের সময় যন্ত্রণা নেই, কিন্তু অপারেশনের পরবর্তী ধাপগুলো সহজ নয়। ঝুঁকি ও জটিলতাও থাকে কম না।
সিজারিয়ান–পরবর্তী সাধারণ জটিলতা
সিজারিয়ান করার পরপরই শুরু হয় ব্যথা, যা কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। ব্যথানাশক দেওয়া হলেও অনেক মাকে এই ব্যথা সহ্য করতে হয়। এর সঙ্গে রয়েছে নবজাতককে শালদুধ খাওয়ানোর কষ্ট, যা অপারেশনের ব্যথার কারণে আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
অপারেশনের জায়গায় সংক্রমণ, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, কোষ্টকাঠিন্য এবং চলাফেরায় সমস্যা হতে পারে। চিকিৎসকেরা সাধারণত ছয় মাস ভারী কাজ না করার পরামর্শ দেন, তা না মানলে হার্নিয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। যাঁদের একাধিকবার সিজার হয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে পেটের পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ভবিষ্যতে কাশি বা কোষ্টকাঠিন্যে ভুগলে হার্নিয়ার আশঙ্কা বাড়ে। কিছু মায়ের ক্ষেত্রে অপারেশনের কয়েক বছর পরও সেই কাটা জায়গায় ব্যথা থেকে যায়।
পরবর্তী গর্ভাবস্থার ঝুঁকি
দুই–তিনবার সিজার করানো মায়েদের পরবর্তী গর্ভধারণে ‘প্লাসেন্টা প্রিভিয়া’ বা গর্ভফুলজনিত জটিলতা দেখা দিতে পারে। ফলে ভবিষ্যতে গর্ভধারণের আগে ভালোভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সিজার–পরবর্তী যত্ন
অপারেশনের ধকল কাটাতে আগে থেকেই রক্তদাতা ঠিক করে রাখা উচিত। কাটা জায়গায় ব্যথা কমাতে হাঁচি–কাশির সময় বালিশ বা তোয়ালে চেপে ধরা যেতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যাবডোমিনাল বাইন্ডার ব্যবহার, ঢিলেঢালা ও কোমরের ওপর পর্যন্ত কাপড় পরা এসব উপকারি হতে পারে।
স্বাভাবিক প্রসবের উপকারিতা
প্রসবযন্ত্রণার তীব্রতা অনেক হলেও স্বাভাবিক প্রসবে মা দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। নবজাতকের দেখভাল করতেও সুবিধা হয়। এখন এপিডুরাল অ্যানালজেসিয়া ব্যবহারে প্রসবযন্ত্রণা অনেকটাই কমানো যায়। চিকিৎসকেরা বলছেন, ঝুঁকি না থাকলে প্রাকৃতিকভাবে সন্তান জন্ম দেওয়াই উত্তম।
সঠিক সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ
মায়ের বয়স, শারীরিক অবস্থা ও গর্ভের শিশুর অবস্থান বিবেচনায় স্বাভাবিক না সিজার—সে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। শিশুর পজিশন, মায়ের উচ্চ রক্তচাপ বা অন্য জটিলতা থাকলে সিজার করা লাগতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া–ই সবচেয়ে নিরাপদ।