মৌলিক সংস্কারে বিএনপি বাধা দিচ্ছে: এনসিপি

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় মৌলিক সংস্কার সংক্রান্ত প্রস্তাব আসলেই বিএনপি ও তাদের কয়েকটি মিত্র দল দ্বিমত পোষণ করে আলোচনায় বাধা সৃষ্টি করছে—এমন অভিযোগ তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার ১৪তম দিনের শেষে সাংবাদিকদের এসব অভিযোগ করেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
তিনি বলেন, “মৌলিক সংস্কারের মোটাদাগের যে বিষয়গুলো আছে, সেই প্রশ্নটা উত্থাপিত হলেই বিএনপির তরফ থেকে এবং তাদের সঙ্গে আরও কতিপয় দল সেখানে বাধা তৈরি করছে। তারা ঐকমত্যের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। তারা চায় না এসব এজেন্ডা আলোচনার মধ্যে থাকুক।”
আখতার হোসেন জানান, সংসদের উচ্চকক্ষে ‘প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর)’ পদ্ধতির প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি ও আরও কয়েকটি দল। এনসিপির মতে, মাত্র ১ শতাংশ ভোট পেলেও দলগুলো উচ্চকক্ষে প্রতিনিধিত্ব পেলে তা ভিন্নমতের চর্চা ও অংশগ্রহণমূলক রাজনীতিকে উৎসাহিত করবে।
এনসিপির প্রস্তাবিত মৌলিক সংস্কারের রূপরেখায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে: ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহি, বিকেন্দ্রীকরণ, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, প্রধান বিচারপতির নিয়োগ প্রক্রিয়া, উচ্চকক্ষের গঠন ও কার্যাবলি, এবং সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষ নিয়োগ।
তিনি বলেন, “সংস্কার মানে শুধু নমনীয় বিষয়ে একমত হওয়া নয়; রাষ্ট্রের কাঠামোগত রূপান্তর জরুরি। কিন্তু বিএনপির মতো দলগুলো মৌলিক সংস্কারের বদলে শুধু সংখ্যার হিসাব কষে এড়িয়ে যেতে চায়।”
আলোচনায় সংসদীয় কাঠামোয় উচ্চকক্ষের ভূমিকা নিয়েও মতবিনিময় হয়েছে। এনসিপির মতে, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে কেবল নিম্নকক্ষে নয়, উচ্চকক্ষেও দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে সংবিধানের ৪৮, ৫৬, ১৪২ এবং ৫৮ ক অনুচ্ছেদ সংশোধনে গণভোটের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
আখতার হোসেন বলেন, “কিছু দল বলছে, সব প্রস্তাব মানতে হবে কেন? কিন্তু এই দৃষ্টিভঙ্গি সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যকেই খর্ব করে। যখন ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহি, উচ্চকক্ষের ক্ষমতা ইত্যাদি মৌলিক বিষয়ে আলোচনা হয়, তখনই বিএনপি পিছিয়ে আসে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সংস্কার বলতে আমরা বুঝি রাষ্ট্রের কাঠামোগত রূপান্তর—যেখানে থাকবে ক্ষমতার ভারসাম্য, ন্যায্য নিয়োগ, আইন প্রণয়নে সংসদের উভয় কক্ষের অংশগ্রহণ এবং জনগণের প্রত্যক্ষ মতামতের প্রতিফলন। কেবল নমনীয় বিষয়ে ঐকমত্য প্রকৃত সংস্কার নয়।”
আজকের আলোচনায় অংশ নেয় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, সিপিবি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।
সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ এবং সঞ্চালনায় ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার সহকারী মনির হায়দার। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক এবং মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।