বাংলাদেশে স্টারলিংকের যাত্রা, স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের নতুন যুগ

বাংলাদেশে স্টারলিংকের আনুষ্ঠানিক যাত্রার মাধ্যমে দেশে স্যাটেলাইট-নির্ভর ইন্টারনেট সংযোগের একটি নতুন যুগের সূচনা হলো বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “স্টারলিংকের যাত্রা অন্তর্বর্তী সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের প্রতীক। আজ আমরা স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের যুগে প্রবেশ করেছি।”
তিনি জানান, মাত্র ৯০ দিন আগেও বাংলাদেশে কোনও নন-জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট অপারেটরের (এনজিএসও) লাইসেন্স ছিল না। এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই সরকার একটি এনজিএসও গাইডলাইন তৈরি করেছে এবং স্টারলিংক একমাত্র অপারেটর হিসেবে আবেদন করে। আবেদন গ্রহণ থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু পর্যন্ত মাত্র চার মাস সময় লেগেছে, যা দেশের টেলিকম ইতিহাসে নজিরবিহীন।
ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, স্টারলিংকের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশের সেই সব অঞ্চল, যেখানে এখনো ফাইবার সংযোগ পৌঁছায়নি। তিনি জানান, বর্তমানে মাত্র ৩০% মোবাইল টাওয়ার ফাইবার সংযোগে যুক্ত, বাকিগুলোর ব্যান্ডউইথ অনেক কম, যা হাজারো গ্রাহকের মাঝে ভাগ হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, “স্টারলিংকের মাধ্যমে মাত্র একটি সেটআপ বক্স ব্যবহার করে একজন গ্রামীণ উদ্যোক্তা উচ্চগতির, লো লেটেন্সির নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট পেতে পারেন। এর গতি এমনকি সংসদ ভবন বা প্রধান উপদেষ্টার অফিসের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনেটের সমান হবে।”
উদ্যোক্তাবান্ধব নীতির কথা তুলে ধরে তিনি জানান, ৪৭,০০০ টাকায় একটি সেটআপ বক্স কিনে উদ্যোক্তারা আশপাশের দোকান বা আবাসিক এলাকায় ইন্টারনেট সেবা দিতে পারবেন। ওয়াইফাই রেঞ্জ ২০ থেকে ৫০ মিটার হওয়ায় গ্রামীণ এলাকাতেও এটি কার্যকরভাবে ব্যবহারযোগ্য হবে।
তিনি বলেন, “আমরা ‘ফোন লেডি’ ধারণায় বেড়ে উঠেছি। এখন সময় এসেছে ‘ওয়াইফাই লেডি’ তৈরির। বিশেষ ঋণের মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের এই উদ্যোগে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।”
স্টারলিংকের খরচ প্রসঙ্গে ফয়েজ তৈয়্যব জানান, মাসিক খরচ নেগোশিয়েশনের মাধ্যমে ৬,০০০ ও ৪,০০০ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। যদিও এটি কিছুটা বেশি, তবে ব্যবহার ও সেবার মান বিবেচনায় উদ্যোক্তাদের জন্য এটি একটি লাভজনক মডেল হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ভবনে একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট একত্রে এই সেবা গ্রহণ করলে খরচ অনেকটাই সহনীয় হয়ে উঠবে। সমবায় ভিত্তিতে ব্যবহারের ফলে গ্রাহকরা সহজেই এর সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
রিজিওনাল প্রাইস অ্যানালাইসিস তুলে ধরে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে স্টারলিংকের দাম শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের তুলনায় কম। যেহেতু শেয়ারিংয়ে বাধা নেই, তাই এটি সব শ্রেণির গ্রাহকের জন্য উপযোগী হবে।”
সরকারি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি জানান, সাবমেরিন কেবল কোম্পানি ও স্যাটেলাইট কোম্পানির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকবে। এ ছাড়া, ডিভাইস আমদানির ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী ভ্যাট, ট্যাক্স ও এনওসি প্রযোজ্য হবে।
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।