এনবিআর সংস্কার পরিষদের বহু সদস্যের ‘ক্ষমা প্রার্থনা’, মাঠে ফেরার প্রস্তুতি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চলমান অস্থিরতা ও আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দুই শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী সংস্থার চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে ব্যাচভিত্তিক একাধিক সাক্ষাতে তারা ক্ষমা চান এবং ভবিষ্যতে শৃঙ্খলার পথে ফিরে আসার অঙ্গীকার করেন।
এনবিআরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ক্ষমা চাওয়া কর্মকর্তাদের অনেকেই পূর্বে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দেখা করা ব্যাচগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— ৪০তম, ৩৮তম, ৩৩তম, ৩১তম, ৩০তম, ২৯তম ও ২৮তম ব্যাচ। এদের অনেকেই মাঠ প্রশাসনে কর্মরত এবং তারা সম্মিলিতভাবে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এই উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়াও, সদ্য পদোন্নতি পাওয়া প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাও চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তারা শুধু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেই থেমে থাকেননি, বরং দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকারও করেছেন।
এই প্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, "দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুন। রাজস্ব আদায়ে যেন কোনও ঘাটতি না ঘটে, সেদিকে বিশেষ মনোযোগ দিন।"
এর আগের দিন সোমবারও কয়েকজন কর্মকর্তা এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ক্ষমা চেয়েছেন বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে সরকার এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠন করে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলম বিরতি, কর্মবিরতি ও ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ সহ নানা কর্মসূচি পালন করেন।
পরবর্তীতে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের অনুরোধ ও বৃহত্তর অর্থনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় এনে ‘সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ আন্দোলন প্রত্যাহার করে। তবে এরপরই কয়েকজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অবসর এবং ডজনখানেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর অনুসন্ধান শুরুর খবরে প্রশাসনিক স্তরে এক ধরনের চাপা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সোমবার (৭ জুলাই) ঢাকা কাস্টমস ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “প্রত্যেকে যদি দায়িত্বশীল আচরণ করে, তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে কেউ কেউ বড় ধরনের সীমা লঙ্ঘন করেছেন— সেসব বিষয়ে আলাদাভাবে বিবেচনা করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আতঙ্ক বা অনিশ্চয়তা রাজস্ব আহরণে ব্যাঘাত ঘটাবে না। আমাদের কর্মকর্তারা অতীতেও চাপের মধ্যেও কাজ করেছেন, এখনও করবেন। সব ঠিক হয়ে যাবে।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই ক্ষমা প্রার্থনার ঘটনা এনবিআরের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি ইতিবাচক বার্তা দিতে পারে। তবে এটি কতটা টেকসই হয়, তা নির্ভর করবে সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্ত এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আচরণগত পরিবর্তনের ওপর।