‘হলুদ সাংবাদিকতা’ বিরোধী স্লোগানে উত্তাল শিক্ষক মিছিল

বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে শিক্ষকদের সমাবেশের দৃশ্য
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওঠা অসৌজন্যমূলক আচরণ ও শাস্তির হুমকির অভিযোগের প্রেক্ষাপটে একদিকে যেমন ছাত্র-জনতা প্রতিবাদে নেমেছে, তেমনি ইউএনওর পক্ষাবলম্বন করে পাল্টা মিছিল ও সমাবেশ করেছেন এলাকার স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা।
আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাউফল উপজেলা পরিষদের পুরোনো ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে পাবলিক মাঠ ঘুরে পরিষদ চত্বরে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।
মিছিলে উচ্চারিত কিছু স্লোগান- ‘ধরি ধরি ধরি না, ধরলে কিন্তু ছাড়মু না’, ‘প্রশাসনের অপমান চলবে না, ইউএনও স্যারের অপমান সহ্য করা হবে না’,‘হলুদ সাংবাদিকদের কালো হাত, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’।
মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন শিক্ষক নেতা শাহিন রেজা, আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ ও কারখানা আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হাবিবুর রহমান। বক্তারা দাবি করেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুযোগ–সুবিধা নেওয়া হলুদ সাংবাদিকেরা বর্তমান ইউএনওকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তাঁকে তাড়াতে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করছে।”
মিছিলে আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত শিক্ষকরা সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদার ভাই ও নওমালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কে এম নাসির উদ্দিন (সবুজ), আওয়ামী লীগ–সমর্থিত শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নেতা মঞ্জুর মোর্শেদ (যিনি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন)।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু সহকারী শিক্ষক দাবি করেন, “বর্তমানে রাজনৈতিক সরকার অনুপস্থিত থাকায় ইউএনও-ই উপজেলার প্রধান ব্যক্তি। তাঁর নির্দেশেই প্রধান শিক্ষকরা শিক্ষকদের এই মিছিলে অংশ নিতে বাধ্য করেছেন।”
প্রসঙ্গত, গত সোমবার (২০ মে) একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জাতীয় একটি দৈনিকের স্থানীয় প্রতিনিধি এ এইচ এম শহীদুল হকের সঙ্গে ইউএনওর বিতণ্ডা হয়। অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে অবহিত না করার অভিযোগে ইউএনও অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে ক্ষুব্ধ হন। এ সময় শহীদুল হককে উদ্দেশ করে ইউএনও বলেন, “প্রজাতন্ত্রের আমি এমন কর্মচারী মালিককে শাস্তিও দিতে পারি।” এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
এর পর ২১ মে বুধবার বিকেলে ‘সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার ব্যানারে’ ইউএনওর অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
শহীদুল হকের অভিযোগ, ইউএনও তাঁকে সমঝোতার জন্য চাপ দিয়ে ব্যর্থ হয়ে শিক্ষক ও বিএনপির সাবেক নেতাদের ব্যবহার করছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে ইউএনও আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমি কাউকে চাপ দিইনি। অনুষ্ঠানটি অনুমতি ছাড়া আয়োজন করা হয়েছিল। শহীদুল হক ও তাঁর লোকজন আমার সঙ্গে চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। শিক্ষকদের মিছিল সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। হয়তো তাঁরা ফেসবুকে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার দেখে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।”