ডেঙ্গু না চিকুনগুনিয়া? লক্ষণ দেখে বুঝবেন যেভাবে

গায়ে ব্যথা ও জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
বর্ষা এলেই ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বাড়ে। তবে চলতি মৌসুমে দুটো রোগই একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, গত দুই সপ্তাহে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হঠাৎ করে বেড়েছে। বিশেষ করে বহির্বিভাগ ও ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগীর চাপ বেশি।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. টিটো মিঞা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া উভয় রোগই মশাবাহিত, তবে লক্ষণে কিছু ভিন্নতা আছে। ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে সাধারণত চোখের পেছনে, কোমর, পিঠ ও মাংসপেশিতে ব্যথা থাকে। অন্যদিকে, চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে ব্যথা হয় মূলত হাত-পায়ের গাঁটে গাঁটে, পা ফুলে যায়, হাঁটাচলা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে রোগী হুইলচেয়ারে করে চিকিৎসকের কাছে আসেন।
এ দুই রোগে সর্দি-কাশি বা গলা ব্যথা সাধারণত দেখা যায় না। তবে জ্বর থাকে প্রবল। গায়ে র্যাশ বা ফুসকুড়ি হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। তাই গায়ে ব্যথাসহ জ্বর হলে কোন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তা বুঝতে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।
ডেঙ্গুতে কখন বেশি ভয়?
ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে জ্বর কমে যাওয়ার পরই বেশি সতর্ক থাকতে হয়। অনেকের ধারণা, প্লাটিলেট কমলেই ভয় বেশি। কিন্তু চিকিৎসক টিটো মিঞা বলছেন, প্লাটিলেটের চেয়ে রক্তচাপ কমে গেলে বেশি ঝুঁকি তৈরি হয়।
তিনি বলেন, “কারও প্লাটিলেট যদি ৫ হাজারেও নেমে যায়, কিন্তু রক্তচাপ ঠিক থাকে, তাহলে তেমন বিপদ নেই। কিন্তু রক্তচাপ কমে গেলে রোগী শকে চলে যায়, তখনই বেশি বিপদ হয়।”
এ কারণে ডেঙ্গু রোগীর রক্তচাপের দিকেই বেশি নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
চিকুনগুনিয়ায় কষ্ট বেশি, মৃত্যু ঝুঁকি কম
চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যুঝুঁকি তুলনামূলক কম হলেও রোগীর কষ্ট বেশি হয়। প্রায় ৭০ শতাংশ রোগী ১–২ সপ্তাহে সুস্থ হয়ে উঠলেও ৩০ শতাংশ রোগীর গাঁটে ব্যথা তিন মাস পর্যন্ত থাকতে পারে। আবার ৫ থেকে ৭ শতাংশ ক্ষেত্রে এই ব্যথা বছরজুড়েও চলতে পারে।
দুই রোগেই রোগীকে স্যালাইন দেওয়া, বিশ্রাম, পানিশূন্যতা রোধের ব্যবস্থা নেওয়া এবং নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখা জরুরি।
মশা দমনেই মূল প্রতিরোধ
চিকিৎসক টিটো মিঞা মনে করেন, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মশা নিয়ন্ত্রণ। স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে।
বাসা-বাড়ির চারপাশে, টব, ফুলদানি, টায়ার কিংবা বাথরুমের কোণে জমে থাকা পানি পরিষ্কার রাখতে হবে। কারণ, এসব জায়গাতেই এডিস মশা জন্ম নেয়। সবাইকে মিলে সচেতনতা তৈরি করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।