ঢাকার ৪ থানায় সক্রিয় অর্ধশতাধিক অপরাধী দল

ঢাকার পশ্চিমাঞ্চলের চার থানা এলাকায় অর্ধশতাধিক অপরাধী দল সক্রিয়, বাড়ছে মাদক, ছিনতাই ও খুনোখুনির ঘটনা
রাজধানীর পশ্চিমাঞ্চলের চার থানা—আদাবর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি ও হাজারীবাগ—এ এলাকায় গড়ে উঠেছে অন্তত ৫০টির বেশি সক্রিয় অপরাধী দল। এসব দল জড়িত মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি এবং হত্যার মতো গুরুতর অপরাধে। সম্প্রতি হাজারীবাগে দুটি খুনের ঘটনায় এ অঞ্চল আবারো আলোচনায় উঠে এসেছে।
গ্রেপ্তার, দল ও বয়স
পুলিশ ও র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে চার থানায় অন্তত ১,৫০০ অপরাধী গ্রেপ্তার হয়েছে। এর মধ্যে র্যাবই গ্রেপ্তার করেছে ১,০৫৬ জনকে। অধিকাংশের বয়স ১৫-২২ বছরের মধ্যে।
দলগুলোর অদ্ভুত নাম
অপরাধী দলগুলো নিজেরাই ফেসবুকে পরিচিত হচ্ছে বিচিত্র সব নামে—
‘টিন এজ টর্নেডো’, ‘পাটালি গ্রুপ’, ‘লও ঠেলা’, ‘কবজি কাটা’, ‘ডার্ক স্ট্রাইকার্স’, ‘রেড ভলক্যানো’, ‘ডাইল্লা’, ‘অ্যালেক্স ইমন’, ‘লেভেল হাই’, ‘চাঁন গ্রুপ’, ‘মেমোরি গ্রুপ’, ‘ঠোঁটে ল’ ইত্যাদি।
রাজনৈতিক ও সন্ত্রাসী প্রশ্রয়
পুলিশ জানায়, অনেক দল স্থানীয় রাজনীতি বা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ছত্রচ্ছায়ায় চলে। ফলে তাদের দাপট বাড়ছে এবং একে অন্যের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে খুনোখুনির ঘটনা ঘটছে।
কিছু আলোচিত ঘটনা
-
রায়ের বাজার (২০ সেপ্টেম্বর): ‘অ্যালেক্স ইমন’ ও ‘ডাইল্লা’ গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হন নাছির ও মুন্না। অ্যালেক্স ইমন গ্রুপকে সন্ত্রাসী ‘পিচ্চি হেলাল’ প্রশ্রয় দেন।
-
শের শাহ সুরী সড়ক (মার্চ-এপ্রিল): চাঁদা না দেওয়ায় আবাসন ব্যবসায়ী মনির আহমেদের বাসায় হামলা।
-
জাফরাবাদ (১৫ মে): ‘পাটালি গ্রুপ’ একটি পরিবারে হামলা চালিয়ে ৭ জনকে কুপিয়ে জখম করে। গ্রেপ্তার ৪৪ জনের মধ্যে ২০ জন ওই দলের।
-
নুরুল ইসলাম হত্যাকাণ্ড (১৫ মে সন্ধ্যা): আলোকচিত্রীকে ক্যামেরার জন্য কিশোর গ্যাং হত্যা করে।
-
সামিউর রহমান খুন: একই দিন জিগাতলায় মাদকের ঘটনায় তরুণ খুন হন।
ভাসমান অপরাধী ও এলাকা
এদের বেশিরভাগের স্থায়ী ঠিকানা নেই। তারা এলাকায় এলাকায় ঘুরে অপরাধ করে। বিশেষ করে চাঁদ উদ্যান, ঢাকা উদ্যান, রায়ের বাজার, জাফরাবাদ, বছিলা এলাকায় এসব দলের তৎপরতা বেশি।
পুলিশের দাবি
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি ইবনে মিজান জানান, পুলিশের তৎপরতায় অপরাধ অনেকটাই কমেছে। তবে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা এখনো ঘটে।
এই প্রতিবেদনে পশ্চিম ঢাকার চার থানার অন্তত ৫০টি গ্যাংয়ের তৎপরতা, তাদের অপরাধ, রাজনৈতিক-সন্ত্রাসী সংযোগ, এবং পুলিশের ভূমিকা বিস্তারিতভাবে উঠে এসেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন আরও কঠোর নজরদারি, বিচারিক প্রক্রিয়ার ত্বরান্বিতকরণ এবং তরুণদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ।