“ত্রাণ নিতে এলে গুলি করতাম”—গাজার ঘটনায় মুখ খুললেন ইসরায়েলি সেনারা

গাজায় ত্রাণ নিতে আসা নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে কোনো কারণ ছাড়াই হত্যার ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছেন ইসরায়েলি সেনারা। তারা ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব নির্মমতার বিবরণ তুলে ধরেছেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ত্রাণ কার্যক্রম বাদ দিয়ে নতুনভাবে ‘গাজা মানবিক ফাউন্ডেশন’ নামক একটি বিতর্কিত সংস্থার মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ শুরু করে ইসরায়েল, যার পেছনে সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু শুরুর পর থেকেই এই সংস্থার ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলো মৃত্যুকেন্দ্রে পরিণত হয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে ত্রাণ নিতে এসে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৫০০ জন মানুষ এবং আহত হয়েছেন প্রায় ৪,০০০ জন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি সেনা বলেন, “এটি ছিল এক হত্যাযজ্ঞের মাঠ। যেখানে আমি মোতায়েন ছিলাম, সেখানে প্রতিদিন অন্তত এক থেকে পাঁচজনকে হত্যা করা হতো। সাধারণ মানুষকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ভিড় নিয়ন্ত্রণে কোনো কাঁদানে গ্যাস, জলকামান বা বিকল্প কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়নি—সরাসরি গুলি চালানো হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “গোলাবর্ষণ হয়েছে ভারী মেশিনগান, গ্রেনেড লঞ্চার ও কামান দিয়ে। মানুষ বুঝে নিত, আমরা যখন গুলি থামাই তখনই তারা সামনে এগোতে পারবে। আমাদের যোগাযোগের ভাষা ছিল গুলি।”
অপর এক সেনার ভাষ্য, “ক্ষুধার্ত মানুষকে ঠেকাতে কামান থেকে গোলা ছোড়া কোনোভাবেই পেশাদার বা মানবিক নয়। আমি জানি, কিছু হামাস যোদ্ধাও মাঝে মাঝে সেখানে ছিল। তবে তাদের পাশাপাশি যাঁরা এসেছিলেন, তাদের অনেকেই শুধু ত্রাণ নিতে এসেছিলেন। তারা কোনো হুমকি ছিল না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এটি এমন এক স্থান হয়ে উঠেছে যেখানে মানবজীবনের কোনো মূল্য নেই। এসব মৃত্যু এমনকি দুঃখজনক ঘটনাও হিসেবে বিবেচিত হয় না।”
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এসব অভিযোগ স্বীকার বা অস্বীকার—দু'টোর কোনোটিই করেনি। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর স্বাধীন তদন্তকারী সংস্থা মিলিটারি অ্যাডভোকেট জেনারেল অফিস জানিয়েছে, নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে সেনারা যদি যুদ্ধাপরাধ করে থাকে, তাহলে তা তদন্ত করে দেখা হবে।