রংপুর থেকে খুলনা, পদযাত্রায় যে বার্তা দিচ্ছে এনসিপি।

বুধবার চুয়াডাঙ্গায় জুলাই পথযাত্রার পথসভায় বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও অন্য নেতারা
দেশজুড়ে ‘জুলাই পদযাত্রা’র মাধ্যমে আবারও আলোচনায় এসেছে তরুণদের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গত ১ জুলাই রংপুর থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি ইতিমধ্যে মানুষের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ ও মিডিয়া কাভারেজ পেয়েছে, যা রাজনীতির মাঠে এনসিপির প্রভাব বৃদ্ধির আভাস দিচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এনসিপি নেতারা বলছেন, ‘জুলাই পদযাত্রা’র মাধ্যমে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর পক্ষে একটি নতুন জাগরণ তৈরি হয়েছে। তাদের দাবি, এই তারুণ্যনির্ভর শক্তিকে উপেক্ষা করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেউ সফল হতে পারবে না। তারা মনে করেন, ‘জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা’কে ধারণ করে রাজনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে।
২০২৪ সালের ‘জুলাই অভ্যুত্থান’-এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গত ২৯ জুন এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকার বাংলামোটরে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ৩৬ দিনের কর্মসূচির ঘোষণা দেন। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১ জুলাই পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত ও তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে দলটি।
প্রথমে রংপুর বিভাগে, এরপর রাজশাহী এবং এখন খুলনা বিভাগে চলমান পদযাত্রা ১২ জুলাই পর্যন্ত এ অঞ্চলে চলবে। এরপর অন্যান্য বিভাগেও এই কর্মসূচি ৩০ জুলাই পর্যন্ত চলবে।
দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা—আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্থা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, এবং সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা—এ কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন।
৮ জুলাই কুষ্টিয়ায় এক সমাবেশে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা ভারতের গোলামি থেকে মুক্তি পেয়েছি। এবার বাংলাদেশের মানুষ মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়। রাষ্ট্র ও রাজনীতি আমাদেরকেই গড়তে হবে।” তিনি আধিপত্যবিরোধী রাজনীতির বার্তা দেন।
সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “এ কর্মসূচিতে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রমাণ করে অতীতের নেতৃত্ব ব্যর্থ হয়েছে। জনগণ এখন পরিবর্তন চায় এবং সেই পরিবর্তনের আশ্বাস তরুণ নেতৃত্ব দিচ্ছে।”
এনসিপির জুলাই পদযাত্রাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, “এর মাধ্যমে নতুন রাজনীতির সূচনা হবে। আমি যদি সাংবাদিক হতাম, তাহলে এনসিপির সঙ্গে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া যেতাম।”
তবে বিষয়টি নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে রয়েছে ভিন্ন মত। সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “পদযাত্রার ভিড়ে কারা আছেন, তা নির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন। যদি এনসিপি সত্যিই সরকারি ছত্রছায়ায় গড়া দল হয়, তাহলে তাদের রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেন, “এনসিপি শুরুর দিকেই তৃণমূলে যাত্রা করলে ভালো করত। তারা ঢাকায় শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করে ভুল করেছে। তবুও জুলাই ইস্যুতে মানুষের আগ্রহ থাকায় তারা সাড়া পাচ্ছে।” তবে তিনি মনে করেন, “এটি ভোটে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখনও বলা যাচ্ছে না। তাদের সাংগঠনিক শক্তি, আর্থিক সামর্থ্যসহ নানা বিষয়ের ওপর তা নির্ভর করবে।”
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “এনসিপির পদযাত্রা বেশ সফল। বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে যে সাড়া দেখা যাচ্ছে, তা আশাব্যঞ্জক। তবে নির্বাচনী রাজনীতিতে সফলতা পেতে হলে তাদের সংগঠনিক ভিত্তি আরও শক্ত করতে হবে।”
‘জুলাই পদযাত্রা’র মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নিজেদের রাজনীতির মাঠে দৃঢ় অবস্থান জানান দিতে চাচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়ের সরব উপস্থিতি, তারুণ্যের প্রতিক্রিয়াশীল জাগরণ এবং জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতিকে কেন্দ্র করে নতুন রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে দলটি। যদিও এর ভবিষ্যৎ সাফল্য নির্ভর করছে দলটির সংগঠনিক পরিপক্বতা, জনআস্থা এবং সরকারের সঙ্গে সম্ভাব্য সম্পর্কের স্বচ্ছতার ওপর।