‘ভালোবাসার ক্রিকেটে’ যুক্তির অভাব, আবারও হেরে গেল বাংলাদেশ

ক্যান্ডিতে সিরিজ হারের পর মাঠ ছাড়ছে বাংলাদেশ দল।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হেরে গেছে বাংলাদেশ। ক্যান্ডিতে তৃতীয় ওয়ানডেতে হার নিশ্চিত হওয়ার পর আবারও এক প্রশ্ন সামনে উঠে এসেছে—বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতার পেছনে কি কেবল পারফরম্যান্স, নাকি সিদ্ধান্ত গ্রহণে যুক্তির ঘাটতি?
অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ম্যাচ শেষে বললেন, "ব্যাটিং উইকেটেও বাজে ব্যাটিং হয়েছে।" আবার তিনি এটাও বললেন, "ব্যাটসম্যানরা যেমন খেলতে পছন্দ করেন, সেভাবেই খেলেছেন। পছন্দে বাধা দেওয়া উচিত না।" প্রশ্ন ওঠে—যদি সেটা ব্যাটসম্যানদের ‘ভালোবাসা’র মতো কিছু হয়ে থাকে, তাহলে হারকে আর বাজে ব্যাটিং বলা চলে না। বাস্তবতা হলো, যুক্তির চেয়ে আবেগের প্রাধান্য থাকলে ক্রিকেটীয় কৌশল ম্লান হয়ে যায়।
হৃদয়ের ইনিংস ও সমালোচনা
তাওহিদ হৃদয় একসময় ছিলেন আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের প্রতীক। এখন তাঁর ইনিংস ধীরগতির, যেন আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি রয়েছে। অনেকে কটাক্ষ করছেন, হয়তো এলপিএলের দিকে চোখ রেখে নিরাপদ ইনিংস খেলতে চান তিনি। যদিও এমনটা বিশ্বাস করতে চায় না কেউ—যে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে, সে ব্যাটসম্যান শুধু নিজের লিগ ক্যারিয়ার ভাববে!
মোস্তাফিজ ও জাতীয় দলের দায়বদ্ধতা
আইপিএলে খেলে এসে জাতীয় দলের হয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের পারফরম্যান্স নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। বোলিংয়ে আগের মতো ধার নেই, ফিল্ডিংয়েও মনে হচ্ছে উদাসীন। জাতীয় দলে তাঁর উপস্থিতি যেন আইডেনটিটির ভারসাম্য রক্ষা, পারফরম্যান্স নয়। কোচ ফিল সিমন্স তাঁকে 'এ' দলে পাঠানোর প্রস্তাবে সম্মত নন, যেন মর্যাদার প্রশ্ন। অথচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের সেরাটা দেওয়ার প্রত্যাশা তো সব ক্রিকেটারের কাছেই থাকা উচিত।
স্পিন কোচের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
পাকিস্তানের সাবেক লেগ স্পিনার মুশতাক আহমেদ বাংলাদেশ দলের স্পিন কোচ হলেও, তিনি আছেন খণ্ডকালীন দায়িত্বে। গল টেস্ট শেষে দেশে ফিরে গিয়েছিলেন, আবার ফিরেছেন শেষ ওয়ানডের ঠিক আগে। এমন ‘দিনমজুর’ কোচ কতটা কার্যকর, সেটাই প্রশ্ন। তিনি যদি রিশাদ হোসেনের মতো তরুণ স্পিনারদের সময়মতো কিছু দিকনির্দেশনা দিতে পারতেন, সেটাও হতো ফলপ্রসূ।
যুক্তির বদলে আবেগের জয়
বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন টিম কম্বিনেশনের চেয়ে বড় হয়ে উঠছে কে বাদ পড়লে কে কষ্ট পাবে, কিংবা সম্পর্ক রক্ষা করা যাবে কি না—এই ভাবনা। পছন্দের ব্যাটিং শৈলীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে ম্যাচ পরিস্থিতির চাহিদার চেয়ে। কেউ যেন না কষ্ট পায়, সেটাই যেন সিদ্ধান্তের মূল বিবেচ্য।
যখন ক্রিকেটীয় বাস্তবতা নয়, আবেগ ও সম্পর্ক হয়ে ওঠে প্রাধান্যসূচক, তখন হারটাও অনিবার্য হয়। যুক্তিবোধহীন ভালোবাসার ক্রিকেটে ফলাফল হয়ত চটকদার, কিন্তু জয় প্রায় অধরা।