জিলহজ মাসের আমল ও কোরবানির তাৎপর্য

জিলহজের বরকতময় দিন ও কোরবানির মহান শিক্ষা
ইসলাম ধর্মে জিলহজ মাস অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এই মাসের প্রথম দশ দিনকে আল্লাহতায়ালা বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। এ সময়ের ইবাদত অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিক পুণ্যময়।
ক্ষৌরকর্ম ও কোরবানির সুন্নত
জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার আগে প্রয়োজনীয় ক্ষৌরকর্ম সম্পন্ন করা সুন্নত—যেমন: নখ কাটা, গোঁফ ছাঁটা, চুল কাটা এবং শরীর পরিষ্কার রাখা। আর জিলহজের চাঁদ ওঠার পর থেকে ১০ তারিখে কোরবানি করার আগ পর্যন্ত এসব কাজ না করাই সুন্নত। কোরবানির পর ওই দিনই ক্ষৌরকর্ম (অন্তত নখ কাটা) করা উত্তম। এতে কোরবানির সওয়াব লাভ হয়।
হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা কোরবানি করতে চায়, তারা যেন (এই ১০ দিন) চুল ও নখ না কাটে।’ (সহিহ মুসলিম)
যাদের কোরবানির সামর্থ্য নেই, তারা যেন পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে মাথার চুল, নখ, গোঁফ ইত্যাদি ছাঁটে। এটি আল্লাহর কাছে তাদের প্রতীকী কোরবানি হিসেবে গৃহীত হয়।
রোজা ও ইবাদতের ফজিলত
জিলহজের প্রথম ৯ দিনে রোজা রাখা এবং রাতে ইবাদত করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জিলহজের এই দশ দিনের ইবাদত আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। প্রতিদিনের রোজা এক বছরের রোজার সমান আর প্রতিরাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের মতো মর্যাদাপূর্ণ।’ (তিরমিজি)
বিশেষভাবে ৯ জিলহজ, অর্থাৎ আরাফার দিন রোজা রাখা সুন্নত। হাদিসে এসেছে, ‘এই দিনের রোজা এক বছর পূর্বের এবং এক বছর পরের গুনাহ মাফের কারণ হয়।’ তবে হাজিদের জন্য এই রোজা প্রযোজ্য নয়।
তাশরিকের তাকবির
জিলহজের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রতিটি ফরজ নামাজের পর তাকবির বলা ওয়াজিব। পুরুষরা উঁচু স্বরে ও নারীরা নিচু স্বরে বলবেন:
“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।”
কোরবানির ঐতিহাসিক পটভূমি
ইতিহাসে প্রথম কোরবানি করেন আদম (আ.)-এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিল। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তাদের মধ্যে একজনের কোরবানি গ্রহণ করা হয়, আর অপরজনেরটি নয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের কোরবানি কবুল করেন।’ (সূরা মায়িদা: ২৭)
তবে ইসলামী কোরবানির প্রকৃত প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয় হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি দেওয়ার প্রস্তুতির ঘটনা। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘ইব্রাহিম (আ.) যখন স্বপ্নে দেখলেন তাঁর পুত্রকে কোরবানি করছেন, তখন তা পালন করতে উদ্যত হলে আল্লাহ তাঁকে একটি বড় কোরবানির মাধ্যমে মুক্তি দেন।’ (সূরা ছাফফাত: ১০০-১১০)
কোরবানির নির্দেশনা ও গুরুত্ব
আল্লাহ বলেন, ‘প্রতিটি উম্মতের জন্য কোরবানির বিধান দেওয়া হয়েছে যেন তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে চতুষ্পদ জন্তু জবাই করার সময়।’ (সূরা হজ: ৩৪)
আরও বলা হয়েছে, ‘আপনি (হে নবী) আপনার রবের উদ্দেশে নামাজ পড়ুন ও কোরবানি দিন।’ (সূরা কাউসার: ২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোরবানির সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারেকাছে না আসে।’ (ইবনে মাজাহ)
উপসংহার
জিলহজ মাসের আমল ও কোরবানি মুসলমানদের জন্য এক অনন্য আত্মশুদ্ধি, ইবাদত ও ত্যাগের প্রশিক্ষণ। এই মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে পালন করাই প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব।