নির্বাচন নিয়ে তরুণদের প্রতি অসত্য অভিযোগ ও বাস্তবতা

তরুণেরা নির্বাচন চান, কিন্তু শুধু ভোট নয়—তারা চাই দেশকে বদলের সত্যিকারের সংস্কার ও ন্যায়বিচার।
গত দিনগুলোতে তরুণ নেতাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনের বিরোধী হিসেবে মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, তারা এবং মুহাম্মদ ইউনূস সরকার নির্বাচন চায় না। কিন্তু আসলে ইউনূস নিজেই নির্দিষ্ট সময়সীমা দিয়ে বলেছেন, নির্বাচন এই বছরের ডিসেম্বরে শুরু হয়ে আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
তরুণ নেতারা এই সময়সীমা মেনে নিয়েছেন, তবে শর্তসাপেক্ষে যে সরকার শেখ হাসিনা ও সহযোগীদের বিচার করবে, রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সংস্কার আনবে এবং নির্ধারিত সময়ে ক্ষমতা নির্বাচিত সরকারের হাতে হস্তান্তর করবে।
আমাদের বুঝতে হবে, ইউনূস সরকার একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এটি সাধারণ নির্বাচনকালীন সরকার নয়। দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল মনে করে এই সরকারের তিনটি বিশেষ ম্যান্ডেট রয়েছে, যদিও কিছু পক্ষ তা বৈধ বলে স্বীকার করে না। তবে এটাই এখন দেশের নতুন সামাজিক চুক্তি।
যারা মনে করেন মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন না দিয়ে ক্ষমতা ধরে রেখেছেন, তারা ভুল বুঝেছেন। জুলাই বিপ্লবের পর গড়ে ওঠা এই সরকারের ম্যান্ডেট ভুল ধারণার ভিত্তিতে বিচার করা ঠিক নয়।
বিএনপি ১৭ বছর ধরে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়েছে, কিন্তু সফল হয়নি। কারণ সাধারণ মানুষ তাদের ডাকে যথেষ্ট সাড়া দেয়নি। বিএনপির নেতারা জেলে গেছেন, দলের স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংস হয়েছে। শেখ হাসিনার কঠোর দমন-পীড়নের কারণে তারা পরাজিত হয়েছেন।
অন্যদিকে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে তরুণ নেতাদের ডাকে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। তারা নির্বাচন নয়, বৈষম্যহীন সমাজ ও ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ চেয়েছে। তরুণরা এই দাবিতে সাধারণ মানুষের আস্থা ও সমর্থন পেয়েছে।
তরুণ নেতারা শেখ হাসিনামুক্ত বাংলাদেশের একটি বড় অংশ। তারা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা উৎখাতের সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।
তবে কেউ বলছেন তরুণেরা ‘নির্বাচন চাই না’, এটা মিথ্যা। তরুণেরা অবশ্যই নির্বাচন চান, কিন্তু শুধুমাত্র নির্বাচন নয়, তারা সংস্কার এবং ন্যায় বিচার চায়। তাদের দাবি উপেক্ষা করলে সবার ক্ষতি হবে।
তরুণদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনায় আসতে হবে। যারা জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করেছে, তাদের ভয় দেখানো উচিত নয়।
তরুণেরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, দেশের জন্য কাজ করতে চায়। তারা ইতোমধ্যে ইতিহাসে জাতীয় বীরের মর্যাদা পেয়েছে এবং দেশের জন্য তাদের দেওয়া অনেক কিছু বাকি রয়েছে।
সুতরাং তরুণদের দাবি গ্রহণ করে একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়াই দেশের জন্য প্রয়োজনীয়।