জার্মান পার্লামেন্টে রংধনু পতাকা নিষিদ্ধ

জার্মানির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগে আর রংধনু পতাকা উড়বে না— এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইয়ুলিয়া ক্লকনার। এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের গৌরবের প্রতীক হিসেবে পরিচিত এই পতাকা সরিয়ে নিতে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তার এ সিদ্ধান্ত ঘিরে বাম দল ও গ্রিন পার্টির সঙ্গে তীব্র বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি।
ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটস (সিডিইউ) দলের শীর্ষ নেত্রী ক্লকনার মার্চ মাসের শেষ থেকে বুন্ডেসটাগের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে আছেন। এর আগে তিনি কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। কূটনীতিকদের মতে, তিনি লড়াকু হলেও রক্ষণশীল মতাদর্শের প্রতিনিধি।
সংসদীয় মুখপাত্র জানান, ক্লকনারের নির্দেশে সংসদের যেসব দপ্তর বাইরে থেকে দেখা যায়, সেগুলোর জানালা বা দেয়াল থেকে রংধনু পতাকা সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, বুন্ডেসটাগের সাধারণ প্রবেশযোগ্য দপ্তরগুলোর জানালা, দেয়াল বা দরজায় কোনো প্রতীক, স্টিকার বা পতাকা লাগানো নিষিদ্ধ।
বাম দলের সদস্য স্টেলা মেরেডিনো জানান, তার দপ্তরে রংধনু পতাকা টাঙানো ছিল বলে ফেডারেল পুলিশে জানানো হয়। এই আচমকা নিষেধাজ্ঞা ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায় ও তাদের মিত্ররা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।
২০২২ সাল থেকে ‘ক্রিস্টোফার স্ট্রিট ডে’-তে বুন্ডেসটাগে রংধনু পতাকা উত্তোলনের ঐতিহ্য গড়ে উঠেছিল। তবে ক্লকনার এ বছর তা বাতিল করেছেন। যদিও তিনি দাবি করেন, নিরপেক্ষতা বজায় রাখতেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এই সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে ২ লাখ ২০ হাজার মানুষের স্বাক্ষরসহ আবেদন পেশ করা হলেও তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
সমালোচকদের মতে, ক্লকনারের এই পদক্ষেপ রক্ষণশীল মনোভাবের প্রতিফলন। গ্রিন পার্টির লামিয়া কদ্দোর বলেন, “এটা এমন সময় যখন এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের মানুষরা নানা ধরনের হামলার শিকার হচ্ছে। তাই নিরপেক্ষতার অজুহাতে তাদের অধিকার খর্ব করা মেনে নেওয়া যায় না।”
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস ক্লকনারের সিদ্ধান্তের পক্ষে মত দিয়েছেন। সম্প্রতি একটি টক শোতে তিনি বলেন, “বুন্ডেসটাগ কোনো সার্কাসের তাঁবু নয়।” যদিও তিনি সমকামী জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তবে ক্লকনারের এক ডেপুটি, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস দলের জোসেফাইন অর্টলেব জানান, তার দফতরে রংধনু পতাকা টাঙানো রয়েছে। তার মতে, এলজিবিটিকিউ+ প্রতীককে দমন করার উদ্দেশ্যে নয়, বরং নিয়ম রক্ষার দিকটি বিবেচনায় নিয়েই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এবারের ‘ক্রিস্টোফার স্ট্রিট ডে’ ২৬ জুলাই হলেও বুন্ডেসটাগের ওপর রংধনু পতাকা আর উড়বে না এবং কোনো সজ্জিত গাড়ি বা প্ল্যাটফর্মও অংশ নেবে না— এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।