মাতৃত্ব - ইসলামের আলোয় সম্মান ও সান্ত্বনার প্রতিচ্ছবি

মাতৃত্বের কঠিন পথেও ইসলামের পরম সান্ত্বনা একজন মায়ের পাশে থাকে।
একজন মা যখন এক বা একাধিক সন্তানকে লালন–পালন করতে গিয়ে হিমশিম খান, সমাজ তখন বলে, "এমন তো হবেই।" কিন্তু বাস্তবে মা হওয়ার অভিজ্ঞতা শুধুই স্বাভাবিক একটি ঘটনা নয়, বরং এটি শারীরিক, মানসিক ও আত্মিকভাবে এক বিপুল আত্মত্যাগের নাম।
নারীর শরীরে যখন মাতৃত্বের সূচনা ঘটে, তখন থেকেই শুরু হয় নতুন এক যাত্রা। প্রতিদিন তার শরীর ও মনের ভেতর ঘটে যায় পরিবর্তন, যা তার সমগ্র জীবনধারাকে প্রভাবিত করে। একজন শিশু যখন পৃথিবীতে আসে, তখন সে সম্পূর্ণভাবে মায়ের ওপর নির্ভরশীল। সন্তান প্রতিপালনের এই পথে একজন মা শুধুই দায়িত্ব পালন করেন না, বরং তিনি ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন ত্যাগ, ধৈর্য ও ভালোবাসার প্রতীক।
কুরআন ও হাদিসে মাতৃত্বের মর্যাদা
ইসলাম একজন মায়ের এই ত্যাগ ও কষ্টকে সম্মানিত করেছে সর্বোচ্চ মর্যাদায়। কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সুরা আহকাফ (আয়াত ১৫)-এ আল্লাহ বলেন:
“তার মা তাকে অতি কষ্টে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে তাকে প্রসব করেছে…”
সুরা লুকমান (আয়াত ১৪)-এ বলা হয়েছে:
“তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারণ করে... আমার ও তোমার মাতা–পিতার শুকরিয়া আদায় কর।”
সুরা বনি ইসরাঈল (আয়াত ২৩–২৪)-এ মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণের পাশাপাশি তাঁদের জন্য দোয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ:
“হে আমার প্রভু, আপনি তাঁদের প্রতি তেমনি দয়া করুন, যেমন তাঁরা আমাকে শিশুকালে লালন–পালন করেছেন।”
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভাষায় মায়ের মর্যাদা
হাদিসে মায়ের স্থান বারবার উচ্চারিত হয়েছে। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত একটি হাদিসে আবু হুরায়রা (রা.) বলেন:
“হে আল্লাহর রাসুল, আমার প্রতি সবচেয়ে বেশি হক কার?”
তিনি বললেন: “তোমার মা।”
লোকটি জিজ্ঞাসা করলেন, “তারপর কে?”
তিনি আবার বললেন, “তোমার মা।”
লোকটি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “তারপর কে?”
তিনি বললেন, “তোমার মা।”
চতুর্থবারে বললেন, “তোমার বাবা।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৯৭১)
এমনকি সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে কোনো নারী যদি মৃত্যুবরণ করেন, তাঁর সেই মৃত্যু শহীদের মর্যাদা পায়। (সুনানে আবু দাউদ: হাদিস ৩১১৩)
একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) এক সাহাবিকে জিহাদে না গিয়ে মায়ের সেবা করার নির্দেশ দেন, কারণ তাঁর অনুপস্থিতিতে মায়ের দেখভালের কেউ ছিল না।
এক বিপ্লবী স্বীকৃতি
যে সময়টিতে নারীর কোনো অধিকার ছিল না—সামাজিক, অর্থনৈতিক বা পারিবারিক—সে অন্ধকার যুগে ইসলাম একজন মাকে দিয়েছে সর্বোচ্চ মর্যাদা। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) মা হওয়ার যন্ত্রণাকে করেছেন ইবাদতের সমান, আর মাতৃত্বের কষ্টকে দেখেছেন করুণার চোখে।
এই দৃষ্টিভঙ্গি কেবল ধর্মীয় নির্দেশ নয়, বরং মায়েদের প্রতি একটি নিঃস্বার্থ সম্মান, যা সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রতিফলিত হওয়া উচিত।