নতুন বেতন কাঠামো গঠনে ২২ সদস্যের পে কমিশন

অর্থ মন্ত্রণালয়
সরকার নতুন জাতীয় বেতন কাঠামো নির্ধারণে ২২ সদস্যের একটি পে কমিশন গঠন করেছে। সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান, সরকারি মঞ্জুরিপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনার ভিত্তিতে কমিশন এ বিষয়ে সুপারিশ পেশ করবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে রবিবার (২৭ জুলাই) এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা ১৫ অনুযায়ী জাতীয় বেতনস্কেলের আওতাভুক্ত প্রজাতন্ত্রের সব শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘জাতীয় বেতন কমিশন ২০২৫’ গঠন করা হয়েছে। এ কমিশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খান। পূর্ণকালীন সদস্য হিসেবে রয়েছেন সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ আলী খান, সাবেক হিসাব মহানিয়ন্ত্রক মো. মোসলেম উদ্দীন এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. ফজলুল করিম।
কমিশনে খণ্ডকালীন সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সাবেক মহা-হিসাব নিরীক্ষক আহমেদ আতাউল হাকিম, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জাহিদ হোসাইন, সাবেক সচিব ড. জিশান আরা আরাফুন্নেসা, মেজর জেনারেল (অব.) এ আই এম মোস্তফা রেজা নূর, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান, সাবেক গ্রেড-১ কর্মকর্তা মিজু তহমিনা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মাকছুদুর রহমান সরকার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিমেল ব্রিডিং অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামছুল আলম ভূঁঞা এবং বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. মাসুদ। আরও আছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক, বিআইডিএস মহাপরিচালক অধ্যাপক এ. কে. এনামুল হক, সশস্ত্র বাহিনী, আইন ও বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনোনীত প্রতিনিধিরা, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট, এফবিসিসিআই সভাপতি এবং অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব।
কমিশনের সদস্য সচিব হিসেবে থাকবেন সরকারের একজন সচিব বা অতিরিক্ত সচিব, যিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ পাবেন। প্রয়োজনে কমিশন খণ্ডকালীন সদস্য কো-অপ্ট করার ক্ষমতা রাখে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, কমিশন প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে সরকারকে সুপারিশ জমা দেবে। কমিশনের কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, বিদ্যমান বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনা করে সময়োপযোগী ও যথোপযুক্ত বেতন কাঠামো নির্ধারণ, বিশেষায়িত চাকরির জন্য আলাদা কাঠামো নির্ধারণ এবং আয়করসহ প্রযোজ্য কর বিবেচনায় বেতন কাঠামোর রূপরেখা তৈরি করা হবে।
এছাড়া বাড়িভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত, আপ্যায়ন, প্রেষণ, কার্যভার, মহার্ঘ, উৎসব ও শ্রান্তিবিনোদনসহ অন্যান্য ভাতাগুলো যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা হবে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন সমন্বয়ের পদ্ধতি, সময়োপযোগী পেনশন ও অবসর সুবিধা এবং কাজের মান মূল্যায়নের ভিত্তিতে বেতন কাঠামোয় প্রতিফলনের বিষয়টি সুপারিশে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
সরকারি সেবা যেমন টেলিফোন, মোবাইল, গাড়ি ইত্যাদি সুবিধাকে নগদায়ন করার বিষয় এবং রেশন সুবিধার যৌক্তিকীকরণের বিষয়েও কমিশন সুপারিশ দেবে।
সুপারিশ প্রণয়নে বিবেচনায় আনা হবে ছয় সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের জীবনযাত্রার ব্যয়, দুই সন্তানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যয়, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সরকারের সম্পদের পরিমাণ, প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা খাতের প্রয়োজনীয়তা এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের চিত্র। একই সঙ্গে দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তা নিয়োগ এবং সেবার মান উন্নয়নে উৎসাহদানের বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে।