জুলাই আহতদের পাশে সুহানা অ্যান্ড আনিস আহমেদ ফাউন্ডেশন

সুহানা অ্যান্ড আনিস আহমেদ ফাউন্ডেশন
২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের রাজপথে নেমে আসে হাজারও শিক্ষার্থী। এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল ছাত্রদের মাধ্যমে, কিন্তু অল্প সময়েই তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষাঙ্গন ছাড়িয়ে সাধারণ মানুষও এই আন্দোলনে অংশ নেয় এবং এটি এক অভূতপূর্ব গণজাগরণে রূপ নেয়। আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। এ আন্দোলন পরিচিতি পায় “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন” নামে। রাজপথে তরুণরা জীবন বাজি রেখে একটি ন্যায্য ও মানবিক বাংলাদেশের স্বপ্নে লড়াই করে।
এই আন্দোলন ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেষ হলেও তার আগেই অনেক তরুণ প্রাণ ঝরে যায়, অনেকেই আহত হন এবং জীবনের গতিপথ পরিবর্তিত হয়। এ সময় আহতদের পাশে দাঁড়ায় সুহানা অ্যান্ড আনিস আহমেদ ফাউন্ডেশন। আগস্ট ২০২৪ থেকে ফাউন্ডেশনটির ১১৭ জন স্বেচ্ছাসেবক দেশের সকল বিভাগীয় শহরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে গিয়ে আন্দোলনে আহতদের খুঁজে বের করেন এবং তাদের চিকিৎসা ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। ঢাকা মেডিকেল, চট্টগ্রাম মেডিকেল, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, রংপুর, নিটোর, কুর্মিটোলা, সোহরাওয়ার্দী, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে এই কার্যক্রম চালানো হয়। আগস্ট থেকে অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত ২৭২ জন গুরুতর আহত ব্যক্তি চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার, ওষুধ এবং নগদ সহায়তা পেয়েছেন।
এই সহায়তা থেমে থাকেনি। ফাউন্ডেশনটি এখন আহতদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন কুরিয়ার ও অনলাইন ডেলিভারি কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছে। ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে এখন পর্যন্ত ১০০ জন আহত ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিকে নিয়মিত মাসিক আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ২৫ জন আহত শিক্ষার্থীকে পূর্ণ শিক্ষাবৃত্তির আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি কোনো এককালীন সহায়তা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ নির্মাণের অংশ।
ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আনিস আহমেদ বলেন, “ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো মানুষদের পাশে থাকা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তারা ১৭ বছর পর আমাদের স্বাধীনতার স্বাদ দিয়েছে, তাই আমরা আহতদের পাশে আছি নিরবে, কিন্তু অটলভাবে।” তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি সহায়তার পেছনে একজন মানুষের কষ্ট, লড়াই ও সাহসের গল্প আছে।”
আহতদের মধ্যে ছিলেন কুষ্টিয়ার সারোয়ার, যিনি ১৮ জুলাই মিরপুর-২ এ চোখে গুলিবিদ্ধ হন; ফরিদপুরের গাড়িচালক সুজন মোল্যা, যিনি মিরপুর-১০ এ গুলিবিদ্ধ হন এবং এখন তার মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছেন এই সহায়তায়; মিঠুন নামে এক ডেলিভারিম্যান যিনি পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে পরিবার চালাতে এই অর্থে সহযোগিতা পেয়েছেন; গাজীপুরের জুয়েল যিনি মেয়ের চিকিৎসার খরচ চালাচ্ছেন; এবং মাদারীপুরের শিক্ষক নেসার উদ্দিন যিনি বনশ্রীতে গুলিবিদ্ধ হন এবং এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন।
এইচএসসি পরীক্ষার্থী আবদুল্লাহ আহমেদের বাবা জানান, তার ছেলের চিকিৎসায় এককালীন সহায়তা অনেক কাজে দিয়েছে। লক্ষীপুরের জুবায়ের হাবিব, আজমপুরের জুলফিকার, কুষ্টিয়ার তামজিদ হোসেন জনি, জামালপুরের পারভেজ আলী প্রমুখ এই সহায়তায় পরিবার চালাতে পেরেছেন, ব্যবসা শুরু করেছেন কিংবা পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
শুধু আহতদের সহায়তা নয়, ফাউন্ডেশন দেশের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে, নারীর ক্ষমতায়নসহ নানা ক্ষেত্রে কাজ করছে। ১৫টি ফোটোথেরাপি মেশিন, ৮টি ইনকিউবেটর, আইসিডিডিআরবি ও ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে সহযোগিতা ছাড়াও তারা এতিমখানা ও শিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে কল্যাণমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
সুহানা অ্যান্ড আনিস আহমেদ ফাউন্ডেশনের এই প্রচেষ্টা নিছক সেবা নয়, বরং এটি একটি বড় অঙ্গীকার—বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আশার আলো ছড়িয়ে দেওয়া।