অভাবের মধ্যে বেড়ে ওঠা ছাত্রের বাড়িতে হঠাৎ পাকা ভবন, এলাকায় নানা গুঞ্জন

চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্রনেতা আবদুর রাজ্জাকের নোয়াখালীর বাড়িতে নির্মাণাধীন পাকা ভবন।
রাজধানীর গুলশানে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবদুর রাজ্জাক ওরফে রিয়াদের গ্রামের বাড়িতে নির্মাণাধীন একটি পাকা ভবন নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বাড়িটি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুর গ্রামে অবস্থিত।
সরেজমিনে আজ রোববার দুপুরে দেখা গেছে, প্রায় এক হাজার বর্গফুট আয়তনের একতলা ভবনটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কয়েক দিন আগেই ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। এতে চারটি কক্ষ রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, মাত্র আড়াই মাস আগে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।
আবদুর রাজ্জাক বর্তমানে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। শনিবার রাতে গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে রাজ্জাকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ঘটনায় গুলশান থানায় দায়ের করা মামলায় রাজ্জাকসহ চারজনকে আজ সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
আলোচনার কেন্দ্রে বাড়ি নির্মাণ
নবীপুর গ্রামের বাসিন্দাদের মতে, আর্থিক সংকটের মধ্যে বেড়ে ওঠা একটি পরিবারের হঠাৎ পাকা ভবন নির্মাণ শুরু করাকে কেন্দ্র করে গ্রামে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, একজন ছাত্র কীভাবে এমন ব্যয়বহুল নির্মাণ কাজ চালাতে পারেন।
রাজ্জাকের চাচা জসিম উদ্দিন জানান, আগে জায়গাটিতে একটি টিনশেড ঘর ছিল। সেটি ভেঙে পাকা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। রাজ্জাকের বাবা-মা এখন পাশের একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকছেন।
রাজ্জাকের মা রেজিয়া বেগম বলেন, “ছেলে ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। পড়াশোনার খরচ মেটাতে টিউশনি করে। ভবন নির্মাণের অর্থ এসেছে ব্র্যাকের ঋণ, স্বামীর জমানো টাকা এবং আত্মীয়স্বজনের সহায়তা থেকে।”
তিনি আরও জানান, গত বছরের বন্যায় তাঁদের টিনের ঘর সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। পরে সরকার চার বান্ডিল ঢেউটিন দেয়, যেগুলো বিক্রি করে ভবনের খরচে যোগ করা হয়েছে। আল-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন থেকেও ৫০ হাজার টাকা সহায়তা পেয়েছেন বলে জানান তিনি। তবে ব্র্যাক থেকে নেওয়া ঋণের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
স্থানীয়দের সন্দেহ
রাজ্জাকের হঠাৎ আর্থিক পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে। সৌদিপ্রবাসী মো. সোহেল বলেন, “রাজ্জাক নাকি দামি বাইক কিনেছে, পাকা বাড়ি করছে। শোনা যায়, তার এখন কোটি টাকার মালিকানা। এসব খবর শুনে আমরা অবাক।”
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, “একজন ছাত্র এত টাকা কোথা থেকে পেল, বুঝে উঠতে পারছি না। এখন আবার চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার হলো, আমরা এর নিন্দা জানাই।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রকৌশলী বলেন, ১ হাজার বর্গফুটের একটি একতলা ভবন নির্মাণে আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। এখন পর্যন্ত ছাদ ঢালাইসহ যেসব কাজ সম্পন্ন হয়েছে, তাতে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হওয়ার কথা।
রাজনীতি ও গ্রেপ্তার
রাজ্জাকের সহপাঠী কোরবান আলী জানান, স্কুলজীবনে তাঁরা একসঙ্গে পড়েছেন। পরে ঢাকায় গিয়ে রাজ্জাক রাজনীতিতে সক্রিয় হন। গত ৫ আগস্ট তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সমন্বয়ক হন। কোরবান বলেন, “সে এলাকায় কোনো রাজনৈতিক দাপট দেখাত না। তবে বাড়িতে আসত মাঝে মাঝেই।”
রাজ্জাকের সঙ্গে আরও তিন নেতা—ইব্রাহিম হোসেন (মুন্না), মো. সাকাদাউন সিয়াম এবং সাদমান সাদাব—চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার হন। ঘটনার পর রোববার সন্ধ্যায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারা দেশের সব ইউনিটের কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়।