দামেস্কে হামলা - ইসরায়েলি নীতির মারাত্মক ভুল হিসাব

দামেস্কে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাশে ইসরায়েলের বিমান হামলা।
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কেন্দ্রস্থলে ইসরায়েলি বিমান হামলাকে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আক্রমণাত্মক নীতির অংশ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। সামরিক সদর দপ্তর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের নিকটস্থ এলাকায় চালানো এই হামলায় একদিকে যেমন সিরিয়ার প্রতীকী ক্ষমতার স্থাপনাগুলো লক্ষ্যবস্তু হয়েছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিকভাবে এটি একটি পরিকল্পিত বার্তা বহন করে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েল দাবি করেছে, সিরিয়ার দ্রুজ সম্প্রদায়কে রক্ষার জন্য এই হামলা চালানো হয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি আসলে আঞ্চলিক বিভাজনের দীর্ঘদিনের ইসরায়েলি কৌশলেরই অংশ। গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পর এবার ইসরায়েল সিরিয়ার রাজধানীতে চোখ রেখেছে, যার মূল উদ্দেশ্য নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা।
বিশ্লেষণধর্মী এক লেখায় সৌমায়া ঘান্নুশি বলেন, এই হামলা ছিল কেবল একটি সামরিক অভিযান নয়, বরং একটি প্রতীকী ও প্রচার-ভিত্তিক বার্তা। হামলার সময় ও স্থান এমনভাবে নির্ধারিত ছিল যেন তা আন্তর্জাতিক টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এক সিরীয় উপস্থাপকের আতঙ্কিত হয়ে সম্প্রচার বন্ধ করে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিজেই শেয়ার করেছেন সামাজিক মাধ্যমে, যা এ হামলার উদ্দেশ্য আরও স্পষ্ট করে।
ঘান্নুশি লেখেন, এই হামলা ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ, যার মূল লক্ষ্য মধ্যপ্রাচ্যে একটি দুর্বল ও খণ্ডিত কাঠামো তৈরি করা, যেখানে ইসরায়েলই হবে প্রধান শক্তি। সিরিয়ার দ্রুজ ও কুর্দিদের সঙ্গে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠতা এবং সিরিয়ার আভ্যন্তরীণ বিভাজনকে উসকে দেওয়ার চেষ্টাও এই নীতির অংশ।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল আজ ‘পেরিফেরি নীতি’র নতুন সংস্করণ বাস্তবায়ন করছে, যার মূল ছিল অ-আরব, পশ্চিমাপন্থী শক্তিগুলোর সঙ্গে জোট গড়ে তোলা এবং আরব দেশগুলোকে বিভাজনের মাধ্যমে দুর্বল করা। লেবানন, ইরাক, সুদান ও এখন সিরিয়াতে এই কৌশল প্রয়োগ হচ্ছে।
বিশ্লেষকের মতে, সিরিয়া এখন ইসরায়েলি কৌশলের মূল লক্ষ্য। কারণ, এটি ফিলিস্তিনের প্রতিবেশী এবং এখানকার জনগণ ফিলিস্তিনকে তাদের ইতিহাস ও পরিচয়ের অংশ হিসেবে দেখে। এছাড়া সিরিয়ার ভূমির একটি অংশ এখনো ইসরায়েলের দখলে, যা এই শত্রুতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
তবে ইসরায়েলের এই আগ্রাসী কৌশল তার নিজের জন্যই হুমকি তৈরি করছে বলে ঘান্নুশির মন্তব্য। তিনি বলেন, ইসরায়েল যত বেশি আঞ্চলিক আধিপত্যের চেষ্টা করছে, তত বেশি প্রতিবেশী দেশগুলো তাকে শত্রু হিসেবে দেখছে।
গাজা, দামেস্ক, বৈরুত থেকে তেহরান পর্যন্ত একের পর এক হামলা ইসরায়েলকে সাময়িক শক্তি দিলেও, এর মাধ্যমে তারা দীর্ঘমেয়াদে স্থায়িত্ব অর্জন করতে পারবে না। কারণ, এই অঞ্চল সাম্রাজ্য দেখেছে, সাম্রাজ্যের পতনও দেখেছে।