আদালতে রাজ্জাকদের বিরুদ্ধে দুয়োধ্বনি: ‘জুলাই চেতনা বিক্রি করে চাঁদাবাজি করেছিস’

মুখ ঢেকে রাখার চেষ্টা করছেন ছাত্রসংসদের নেতা আবদুর রাজ্জাক ওরফে রিয়াদ।
চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন (মুন্না) ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় সদস্য আবদুর রাজ্জাক ওরফে রিয়াদসহ চারজনকে আজ রোববার বিকেলে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করলে আদালত প্রাঙ্গণে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
বিকেল চারটায় পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যান আদালতের মূল ফটকের সামনে পৌঁছালে রাজ্জাকসহ চারজনকে নামিয়ে আদালতের দিকে নেওয়া হয়। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে রাজ্জাক মুখ ঢেকে ফেলেন। অন্য তিনজন—ইব্রাহিম হোসেন, সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব—পুলিশ সদস্যদের পিঠে মুখ রেখে নিজেদের পরিচয় আড়াল করার চেষ্টা করেন।
তাঁদের আদালতের সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে তোলার সময় উপস্থিত সাধারণ মানুষ ও কিছু আইনজীবী তাঁদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কেউ কেউ অভিযুক্তদের মারধরের চেষ্টা করলে পুলিশ কড়া নজরদারিতে তাঁদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
একজন আইনজীবী স্লোগান দিয়ে বলেন, “তোরা জুলাই চেতনা বিক্রি করে চাঁদাবাজি করেছিস!” এ সময় রাজ্জাক ও অন্যরা বারবার নিজেদের মুখ ঢেকে রাখার চেষ্টা করেন।
চাঁদাবাজির মামলায় রাজ্জাকসহ চারজনকে চারতলায় আদালতকক্ষে নেওয়া হলে, সেখানেও উপস্থিত ৩০-৪০ জন আইনজীবী তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান আদালতের কাছে আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। তিনি আদালতে জানান, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে রাজ্জাক ও তাঁর সহযোগীরা গুলশান ও বারিধারার মতো অভিজাত এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, তাঁরা সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে তাঁর স্বামীর কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং হুমকি দেন। একপর্যায়ে ১০ লাখ টাকা আদায় করেন বলেও জানান তিনি।
পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান আরও দাবি করেন, রাজ্জাক ও কাজী গৌরব ওই বাসায় গিয়ে চাঁদা দাবি করেছিলেন, এমন ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এই অপরাধচক্রের মূল হোতাকে খুঁজে বের করতেই রিমান্ড প্রয়োজন।
রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পিপি মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন বলেন, “এই চাঁদাবাজদের বয়সই বা কত! এরা রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় গিয়ে পরিকল্পিতভাবে অভিজাত নাগরিকদের টার্গেট করে চাঁদা আদায় করেছে। এটি কোনো সাধারণ অপরাধ নয়।” তিনি আরও বলেন, “চাঁদাবাজির অর্থ কোথায় গিয়েছে, আর এর পেছনে কারা জড়িত—তা জানতে রিমান্ড অপরিহার্য।”
অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী আক্তার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, তাঁর মক্কেল নির্দোষ এবং ষড়যন্ত্রের শিকার। তিনি কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত নন।
প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলা শুনানি শেষে বিচারক আবদুর রাজ্জাক, ইব্রাহিম হোসেন, সিয়াম ও সাদাবকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।
আদালত থেকে তাঁদের হাজতখানায় নেওয়ার সময়ও আইনজীবীদের একাংশ চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পুলিশ তাঁদের কড়া নিরাপত্তায় নিয়ে যায়, এবং হাতকড়া পরিয়ে দু’হাত পেছনে বাঁধা ছিল।