ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর মরিচের গুঁড়া ছুড়লেন বর্বর ইসরায়েলিরা

গাজায় জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে ভিড় করেছেন ফিলিস্তিনিরাছবি: এএফপি ফাইল ছবি
গাজা উপত্যকার রাফা শহরের শাকুশ এলাকায় একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ছত্রভঙ্গ করতে মরিচের গুঁড়ার স্প্রে ব্যবহার করেছে ইসরায়েলি সেনারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে এমন চিত্র উঠে এসেছে, যা পরে আল–জাজিরার ফ্যাক্ট–চেকিং সংস্থা ‘সানাদ’ দ্বারা যাচাই করা হয়।
১০ জুলাই ধারণকৃত ২০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, তিনজন সশস্ত্র ইসরায়েলি সেনা বিতর্কিত ত্রাণ সংস্থা জিএইচএফ পরিচালিত একটি কেন্দ্রের আশপাশে জড়ো হওয়া নারী, পুরুষ ও শিশুর দিকে মরিচের গুঁড়া স্প্রে করছেন। আতঙ্কে মানুষ চারদিকে ছুটে পালাচ্ছেন। কারও মুখ ঢাকা, কেউ বা পিঠে ময়দার বস্তা নিয়ে দৌড়াচ্ছেন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের শেষ দিক থেকে গাজায় জিএইচএফ কার্যক্রম শুরুর পর এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৮৯১ জন ফিলিস্তিনি ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের ১৫ জুলাইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে ৬৭৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে ত্রাণকেন্দ্রের আশপাশেই।
জিএইচএফ কার্যক্রম ইসরায়েলের পূর্ণ অবরোধ শিথিল হওয়ার পর চালু হলেও, এটি জাতিসংঘের ত্রাণ কাঠামোকে পাশ কাটিয়ে পরিচালিত হওয়ায় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
গাজা নগরীর আল-আকসা মারটায়ার হাসপাতালের সূত্র জানিয়েছে, গত রোববার চার বছর বয়সী রাজান আবু জাহের অপুষ্টি ও অনাহারের কারণে মারা গেছে। এর আগের দিন, আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক জানান, সেখানে অনাহারে প্রাণ হারিয়েছে আরও দুইজন, যাদের একজন মাত্র ৩৫ দিনের শিশু।
আরও প্রাণহানির ঘটনা:
শনিবার (১৯ জুলাই): গাজার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১১৬ জনের মধ্যে অন্তত ৩৮ জন ছিলেন ত্রাণপ্রত্যাশী।
রোববার (২০ জুলাই): গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৮৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাদের মধ্যে ৭৩ জনই ছিলেন ত্রাণ সংগ্রহে নিয়োজিত সাধারণ মানুষ।
গাজার বাসিন্দা মাহমুদ মোকাইমার বলেন, তিনিও জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রে যাচ্ছিলেন, যখন ইসরায়েলি সেনারা প্রথমে সতর্কতামূলক গুলি, পরে সরাসরি গুলি চালায়। তিনি আরও বলেন, ‘দখলদার বাহিনী আমাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। আমি নিজের চোখে অন্তত তিনজনের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেছি।’
আল-জাজিরার গাজা প্রতিনিধি হিন্দ খোদারি জানান, খাবারের ঘাটতিতে মানুষ এতটাই মরিয়া যে, ত্রাণ সংগ্রহে গিয়েই প্রাণ হারানোর আশঙ্কা থাকলেও তাঁরা যেতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘যদি ইসরায়েল গাজায় খাবার প্রবেশ বন্ধ করে দেয়, তাহলে ফিলিস্তিনিদের সামনে জীবন ঝুঁকিতে ফেলা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না।’
গাজার বাজারে খাবারপণ্য অতি দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে, মূল্যস্ফীতি চরমে। ফলে লাখো মানুষের জন্য একমাত্র আশার আলো—ত্রাণ—সেই আশাও আজ সহিংসতার ছায়ায় ঢেকে যাচ্ছে।