বিহারে ভোটার যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত, আতঙ্কে সংখ্যালঘু ও প্রান্তিকরা

বিহারে ভোটার যাচাই: আতঙ্কে সংখ্যালঘু ও দরিদ্ররা
ভারতের বিহার রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রায় আট কোটি ভোটারের নাগরিকত্ব যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন (ইসিআই)। কমিশনের দাবি, তালিকায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতেই এই পদক্ষেপ। তবে বিরোধীদল ও বিশ্লেষকদের মতে, এ সিদ্ধান্ত জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) বাস্তবায়নেরই অংশ, যা সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক তৈরি করেছে।
২৪ জুন নির্বাচন কমিশন জানায়, বিহারের সব ভোটারকে ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে নতুন করে নিবন্ধন করতে হবে। যাঁরা তা করতে পারবেন না, তাঁদের ভোটাধিকার বাতিলের পাশাপাশি ‘সন্দেহভাজন বিদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হতে পারে।
কী নিয়ে বিতর্ক
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত স্বল্প সময়ে বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে নাগরিকত্ব যাচাই করা অত্যন্ত কঠিন। বিরোধী দল কংগ্রেস ও তাদের জোটসঙ্গী রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও আইনি লড়াই শুরু করেছে। তাঁদের মতে, এতে প্রকৃত ভোটাররাও তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিহারে শিক্ষার হার কম এবং অনেকের জন্মসনদ, শিক্ষাসনদ বা পাসপোর্ট নেই। ফলে কোটি কোটি দরিদ্র মানুষ প্রমাণপত্র দিতে ব্যর্থ হতে পারেন। এর ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘু, বিশেষত মুসলিমদের ভোটাধিকার হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
নতুন নিয়ম কী বলছে
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০০৩ সালের পর যাঁরা ভোটার হয়েছেন, তাঁদের জন্মস্থান, জন্মতারিখ ও পিতা-মাতার পরিচয়পত্র দিতে হবে। আগে যেসব ভোটার আইডি বা আধার কার্ড যথেষ্ট ছিল, এখন তা আর গ্রহণযোগ্য নয়।
আন্দোলনকারী নাগরিক সমাজ বলছে, এই প্রক্রিয়া নতুন করে এনআরসি চালুর দিকেই ইঙ্গিত করে। টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের সাবেক ডিন পুষ্পেন্দ্র বলেন, “প্রান্তিক ও সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করেই এই ব্যবস্থা।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও আশঙ্কা
বিজেপি এই উদ্যোগকে সমর্থন করে বলছে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ ঢুকেছে, তাই সারা দেশেই এমন পদক্ষেপ প্রয়োজন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অপূর্বানন্দ বলেন, “নির্বাচন কমিশন এখনো প্রমাণ দিতে পারেনি যে ভোটার তালিকায় অনুপ্রবেশকারী রয়েছে। ফলে এ উদ্যোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে হচ্ছে।”
ভবিষ্যৎ শঙ্কা
বিশ্লেষকদের মতে, এনআরসি কার্যকর না করেও নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপ মুসলিমদের টার্গেট করার কৌশল। কারণ, ২০১৯ সালে পাশ হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) অনুযায়ী, অমুসলিম ‘অবৈধ’ অভিবাসীরা নাগরিকত্ব পেতে পারেন, মুসলিমরা নয়। ফলে এই যাচাই প্রক্রিয়ায় মুসলিমদের দেশছাড়া হওয়া কিংবা কারাগারে পাঠানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে এই প্রক্রিয়া স্থগিতের আবেদন করা হয়েছে। আবেদনকারীরা বলছেন, এর ফলে বিহারের অর্ধেকেরও বেশি ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার হারাতে পারেন।