শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৬ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

কুরআন মাজীদের নাম-পরিচয় ‘আলফুরকান’ নামের তাৎপর্য

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মাজীদ

 প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১

কুরআন মাজীদের নাম-পরিচয় ‘আলফুরকান’ নামের তাৎপর্য

আলফুরকান কুরআন কারীমের অন্যতম নাম ও উপাধি। এই শব্দের মূল ধাতু (ف ـ ر ـ ق) ফা-রা-কাফ। এর অর্থ, দুটি জিনিসকে পৃথক করা কিংবা একই জিনিসের অংশগুলোকে আলাদা আলাদা করা। পঞ্চেন্দ্রিয় দ্বারা পার্থক্য করার ক্ষেত্রে যেমন ব্যবহৃত হয় তেমনি জ্ঞান-বুদ্ধি ও অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা পার্থক্য নির্ধারণ ও ফয়সালা করা অর্থেও উপরোক্ত ধাতুর শব্দ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কুরআনে কারীম থেকে কয়েকটি উদাহরণ উল্লেখ করছি-

১। সূরা মায়িদার ২৫ নং আয়াত-

فَافْرُقْ بَیْنَنَا وَ بَیْنَ الْقَوْمِ الْفٰسِقِیْنَ.

সুতরাং আপনি আমাদের ও নাফরমান স¤প্রদায়ের মধ্যে ফয়সালা করে দিন। -সূরা মায়েদা (৫) : ২৫

২। সূরা দুখানের ৪ নং আয়াত-

فِیْهَا یُفْرَقُ كُلُّ اَمْرٍ حَكِیْمٍ.

এ রাতে নির্ধারণ করা হয় প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ (অটল) বিষয়। -সূরা দুখান (৪৪) : ৪

৩। সূরা মুরসালাতের ৪ নং আয়াত-

فَالْفٰرِقٰتِ فَرْقًا.

অনন্তর কসম ঐসকল ফিরিশতার, যারা (সত্য-মিথ্যার মাঝে এবং ভালো-মন্দের মাঝে) পার্থক্য নির্ধারণ করে। -সূরা মুরসালাত (৭৭) : ৪

এই আয়াতের আরেকটি তরজমা হল, অনন্তর ঐসকল বায়ুর কসম, যারা (মেঘপুঞ্জকে) টুকরো টুকরো করে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

মনে রাখত হবে, فرقان শব্দের সমার্থক আরেকটি শব্দরূপ فرق তবে فرقان শব্দকাঠামোটি অধিকতর জোরালো ও বিশিষ্ট। কেননা فرقان শব্দটি সাধারণত ব্যবহৃত হয় হক-বাতিলের মাঝে এবং সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য করার ক্ষেত্রে, যা মূলত বসীরত ও অন্তদৃর্ষ্টির মাধ্যমে নিষ্পন্ন হয়। আর فرق শব্দটি সাধারণভাবে যে কোনো পার্থক্যকরণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

দ্রষ্টব্য: আলমুফরাদাত, রাগেব আসফাহানী ৬৩৩; রুহুল মাআনী ১০/১৮/২৩১; লুগাতুল কুরআন, আবদুর রশীদ নুমানী ৫/৪৫

উল্লেখ্য, فرقان শব্দটি যদিও মূলত  মাসদার বা ক্রিয়াবিশেষ্য, কিন্তু এটি ব্যবহারিক ক্ষেত্রে কখনো فارق ‘পার্থক্যকারী’ অর্থে, কর্তাবাচক বিশেষণ পদরূপে ব্যবহৃত হয় এবং কখনো مفروق ‘পার্থক্যকৃত’ অর্থে, কর্মবাচক বিশেষণ পদরূপে ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত পার্থক্যকারী ও ফয়সালাকারী এবং পার্থক্যকৃত ও ফয়সালাকৃত অর্থেই কুরআন কারীমের উপাধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

দ্রষ্টব্য : লুগাতুল কুরআন ৫/৪৫; জামালুল কুররা ওয়া কামালুল ইকরা ১/২৬-২৮

কুরআন মাজীদে ফুরকান’ শব্দের বিভিন্ন ব্যবহারক্ষেত্র

কুরআন কারীমে ব্যবহৃত فرقان শব্দটির আলাদা আবেদন ও তাৎপর্য রয়েছে। সম্ভবত বাংলাভাষায় এক শব্দে এর সমতুল্য কোনো প্রতিশব্দ নেই। কুরআন মাজীদে শব্দটি বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে :

১। হক-বাতিলের পার্থক্যকারী নূর, যা মুমিনের কলবে আল্লাহ তাআলা দান করেন। সূরা আনফালের ২৯ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِنْ تَتَّقُوا اللهَ یَجْعَلْ لَّكُمْ فُرْقَانًا وَّ یُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَیِّاٰتِكُمْ وَ یَغْفِرْ لَكُمْ .

হে মুমিনগণ! তোমরা যদি আল্লাহর সঙ্গে তাকওয়ার নীতি অবলম্বন কর, তবে তিনি তোমাদেরকে (সত্য-মিথ্যার মাঝে) পার্থক্য করার শক্তি দেবেন। তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদের মাগফিরাত দ্বারা ভূষিত করবেন।

২। বদর যুদ্ধের দিন, যা ছিল হক-বাতিলের মাঝে ফয়সালাকারী দিন। সূরা আনফালের ৪১ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

اِنْ كُنْتُمْ اٰمَنْتُمْ بِاللهِ وَ مَاۤ اَنْزَلْنَا عَلٰی عَبْدِنَا یَوْمَ الْفُرْقَانِ یَوْمَ الْتَقَی الْجَمْعٰنِ.

যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি এবং সেই বিষয়ের প্রতি ঈমান রাখ, যা আমি নিজ বান্দার উপর মীমাংসার দিন অবতারণ করেছি, যেদিন দু’ দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল।

৩। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক যুগের উপযোগী যেসব মুজিযা নবীদেরকে দান করেছেন এবং যেসব দলীল-প্রমাণ ও আসমানী কিতাব নবীদের প্রতি নাযিল করেছেন সেগুলোকে কুরআন কারীমে ‘ফুরকান’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। যেমন সূরা আলে ইমরানের ৪ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

نَزَّلَ عَلَیْكَ الْكِتٰبَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَیْنَ یَدَیْهِ وَ اَنْزَلَ التَّوْرٰىةَ وَ الْاِنْجِیْلَ مِنْ قَبْلُ هُدًی لِّلنَّاسِ وَ اَنْزَلَ الْفُرْقَانَ .

তিনি আপনার প্রতি সত্য কিতাব নাযিল করেছেন, যা তার পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সত্যায়নকারী এবং অবতারণ করেছেন তাওরাত-ইঞ্জিল ইতিপূর্বে মানুষের হেদায়েতের জন্য এবং তিনি অবতারণ করেছেন ফয়সালাসমূহ।

দ্রষ্টব্য : ফাওয়ায়েদে উছমানী পৃ. ৬৩

৪। হযরত মূসা আ.-এর প্রতি অবতীর্ণ ‘তাওরাত’ কিতাবের বিশেষণরূপে ‘ফুরকান’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। সূরা বাকারার ৫৩ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

وَ اِذْ اٰتَیْنَا مُوْسَی الْكِتٰبَ وَ الْفُرْقَانَ.

এবং সূরা আম্বিয়ার ৪৮ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

وَ لَقَدْ اٰتَیْنَا مُوْسٰی وَ هٰرُوْنَ الْفُرْقَانَ.

৫। এমনিভাবে কুরআন মাজীদকেও فرقان উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

تَبٰرَكَ الَّذِیْ نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلٰی عَبْدِهٖ لِیَكُوْنَ لِلْعٰلَمِیْنَ نَذِیْرَا.

মহিমাময় সেই সত্তা, যিনি নিজ বান্দার প্রতি ‘ফুরকান’ (অর্থাৎ ফয়সালাকারী কিতাব) নাযিল করেছেন। যাতে তা বিশ্ববাসীর জন্য হয় সতর্কবাণী। -সূরা ফুরকান (২৫) : ১

এবং সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন-

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِیْۤ اُنْزِلَ فِیْهِ الْقُرْاٰنُ هُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الْهُدٰی وَ الْفُرْقَانِ.

রমযান মাস, যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য আদ্যোপান্ত হেদায়েত এবং এমন সুস্পষ্ট প্রমাণাদি সম্বলিত, যা পথনির্দেশক এবং ‘ফুরকান’ (হক-বাতিলের মাঝে চূড়ান্ত ফয়সালাকারী)।

আলফুরকান’ নামের তাৎপর্য

১। فرقان শব্দটি কাঠামোগতভাবে মাসদার এবং এর অর্থের মাঝে জোরালো ভাব ও বিশিষ্টতা রয়েছে- সে কথা আমরা আগে আলোচনা করেছি। অতঃপর এই মাসদারটিকে যখন কোনো কিছুর নাম ও বিশেষণরূপে ব্যবহার করা হয় তখন এর অর্থ আরো জোরদার হয়। অর্থাৎ পার্থক্য করার ব্যাপারে ঐ বিশেষ ব্যক্তি বা বস্তুর যোগ্যতা ও ক্ষমতা এতটাই পূর্ণ যে, তা নিজেই যেন পার্থক্য। সুতরাং ‘ফুরকান’ নামটিকে যদি আমরা فارق ‘পার্থক্যকারী’ অর্থে গ্রহণ করি তবে এর বাংলা তরজমা ‘চূড়ান্ত ফয়সালাকারী মানদণ্ড’ হতে পারে। এই অর্থে নামটির তাৎপর্য হল, কুরআন তার সাক্ষাৎ ইজায ও অলৌকিকগুণের মাধ্যমে এবং অকাট্য প্রমাণাদি বয়ানের মাধ্যমে হক ও বাতিলের মাঝে চূড়ান্ত মীমাংসা করে দিয়েছে এবং হুকুম ও বিধানের মাধ্যমে হালাল ও হারামের মধ্যে একটিকে অপরটি থেকে সুস্পষ্টভাবে পৃথক করে দিয়েছে। সুতরাং কুরআন হল সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায় এবং আলো-অন্ধকারের মাঝে পার্থক্য নিরূপণকারী। হেদায়েত ও গোমরাহী এবং সুন্নত ও বিদআতের মাঝে সুস্পষ্ট পার্থক্যরেখা।

২। فرقان নামটিকে যদি مفروق ‘পার্থক্যকৃত’ অর্থে কর্মবাচক পদরূপে ধরা হয় তবে এর ভাবানুবাদ ‘আলাদা আলাদা অংশসম্পন্ন’ হতে পারে। চিন্তা করলে প্রতীয়মান হবে, উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যটি কুরআনে কারীমের শব্দ ও অর্থ উভয়ের মাঝেই বিদ্যমান। কুরআনের আয়াতসমূহ শব্দগত দিক থেকে যে পৃথক পৃথক তা তো সুস্পষ্ট, কেননা আল্লাহ তাআলা তাঁর কালাম কুরআন মাজীদকে সূরা ও আয়াতরূপে আলাদা আলাদা অংশ করে দিয়েছেন। ফলে ওজিফা হিসেবে নিয়মিত পাঠ করা, হিফয করা এবং বোঝা সহজ হয়েছে।

আর অর্থগত দিক থেকে তো হাজারো ধরনের জ্ঞান ও বিষয়বস্তুর বর্ণনা-বিশ্লেষণ ভিন্ন ভিন্ন আয়াতে সন্নিবেশিত হয়েছে। ভাষা সুসংক্ষিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও অর্থ-প্রাচুর্য ও ভাব সমৃদ্ধির কারণে প্রতিটি আয়াত ভাব ও মর্মের এক সমুদ্রকে সামান্য ক’টি শব্দের কুজোতে ধারণ করেছে। বিভিন্ন আয়াতে অনেক বিষয়বস্তু পুনরাবৃত্ত হওয়া সত্ত্বেও স্থানগত উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্য এবং নিজস্ব সৌন্দর্যের কারণে প্রতিটি আয়াতের স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। ফলে বিষয়বস্তুকে যথাযথভাবে হৃদয়ঙ্গম করা এবং কুরআন থেকে উপদেশ গ্রহণ করা সহজ হয়েছে। 

এমনিভাবে আল্লাহ তাআলা পূর্ণ কুরআনে কারীমকে একসাথে নাযিল করেননি; বরং পৃথক পৃথকভাবে প্রায় তেইশ বছরে নাযিল করেছেন। যেন বিভিন্ন পরিস্থিতি অনুযায়ী মুনাসিব হেদায়েত হাসিল করার সুযোগ হয় এবং যারা পরবর্তীকালে সমগ্র দুনিয়ার শিক্ষক হবেন অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম রা. যেন প্রত্যেক আয়াত ও হুকুমের ক্ষেত্র ও পরিস্থিতি উত্তমরূপে হৃদয়ঙ্গম করে স্মরণ রাখতে পারেন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কোনো আয়াতকে অযথা স্থানে ব্যবহার করার অবকাশ না থাকে।

সূরা বনী ইসরাঈলের ১০৬ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

وَ قُرْاٰنًا فَرَقْنٰهُ لِتَقْرَاَهٗ عَلَی النَّاسِ عَلٰی مُكْثٍ وَّ نَزَّلْنٰهُ تَنْزِیْلًا.

আমি কুরআনকে আলাদা আলাদা অংশ করে দিয়েছি। যাতে তুমি তা মানুষের সামনে থেমে থেমে পড়তে পার আর আমি এটা নাযিল করেছি অল্প অল্প করে।

এই আয়াতে শব্দগত ও অর্থগত দিক থেকে পৃথক হওয়া এবং অবতরণের বিবেচনায় পৃথক হওয়া সবকিছুই শামিল রয়েছে।

দ্রষ্টব্য : তাফসীরে ইবনে কাসীর ৫/১২৫; রুহুল মাআনী ৮/১৫/১৮৮; তাফসীরে উসমানী, পৃ. ৩৭৯

এছাড়া সূরা হা-মিম-সাজদার ৩ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

كِتٰبٌ فُصِّلَتْ اٰیٰتُهٗ قُرْاٰنًا عَرَبِیًّا لِّقَوْمٍ یَّعْلَمُوْنَ.

এ এমন কিতাব, যার আয়াতগুলো পৃথক পৃথক করা হয়েছে।

দ্রষ্টব্য : তাফসীরে উসমানী, পৃ. ৬১৮

৩। এই শব্দের মধ্যে কোনো বিষয়বস্তুকে সুস্পষ্টরূপে ও বিশদভাবে বর্ণনা করার মর্মও অন্তর্নিহিত রয়েছে। কারণ কোনো বিষয়বস্তুকে ভাগ ভাগ করে আলাদা আলাদা আলোচনা করা হলে তা সুস্পষ্ট হয়ে থাকে। এ হিসেবে কুরআনকে فرقان নামে অভিহিত করার একটি তাৎপর্য এটাও যে, এতে দ্বীনের সকল প্রয়োজনীয় ও মৌলিক বিষয়াবলি সুস্পষ্টরূপে ও বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে।

সূরা বনী ইসরাঈলের ১০৬ নং আয়াত وَ قُرْاٰنًا فَرَقْنٰهُ -এ فَرَقْنٰهُ শব্দের একটি তাফসীর হল, فصلناه وبيناه অর্থাৎ এ এমন কুরআন, যা স্পষ্টরূপে ও বিশদভাবে বর্ণনা করেছি।

দ্রষ্টব্য : তাফসীরুত তবারী ১৫/১১৩-১১৪

একইভাবে সূরা আনআমের ১১৪ নং আয়াত-

اَفَغَیْرَ اللهِ اَبْتَغِیْ حَكَمًا وَّ هُوَ الَّذِیْۤ اَنْزَلَ اِلَیْكُمُ الْكِتٰبَ مُفَصَّلًا.

এতে مُفَصَّلًا শব্দটির অর্থ তাফসীরের কিতাবে مُبَيَّن শব্দ দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ কুরআন এমন কিতাব, যার বিষয়বস্তুগুলো অত্যন্ত স্পষ্টরূপে বর্ণনা করা হয়েছে।১

দ্রষ্টব্য : তাফসীরুত তবারী ৯/৫০৬, ৫১৩ এবং ২৭৬-২৭৮; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৩১৫; বয়ানুল কুরআন, থানবী  ১/১২২

৪। কুরআন মাজীদের হেদায়েত অনুসরণ করলে এবং কুরআনের মাঝে তাদাব্বুর বা চিন্তাভাবনা করলে এমন হেকমত ও প্রজ্ঞা, বসীরত ও অন্তর্দৃষ্টি এবং তাফাক্কুহ ও সমঝ-বুঝ অর্জন হয়, যা দ্বারা হক ও বাতিলের এবং সত্য ও মিথ্যার মাঝে পার্থক্য করা যায়। আল্লাহ তাআলা সূরা আনফালের ২৯ নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِنْ تَتَّقُوا اللهَ یَجْعَلْ لَّكُمْ فُرْقَانًا.

হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আল্লাহর সঙ্গে তাকওয়ার নীতি অবলম্বন কর, তবে তিনি তোমাদেরকে ফুরকান দান করবেন (অর্থাৎ হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী শক্তি দান করবেন।)

সূরা আনআমের ১২২ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

اَوَ مَنْ كَانَ مَیْتًا فَاَحْیَیْنٰهُ وَ جَعَلْنَا لَهٗ نُوْرًا یَّمْشِیْ بِهٖ فِی النَّاسِ كَمَنْ مَّثَلُهٗ فِی الظُّلُمٰتِ لَیْسَ بِخَارِجٍ مِّنْهَا كَذٰلِكَ زُیِّنَ لِلْكٰفِرِیْنَ مَا كَانُوْا یَعْمَلُوْنَ.

বলুন তো, যে ব্যক্তি ছিল মৃত, অতঃপর আমি তাকে জীবন দিয়েছি এবং তার জন্য এক আলোর ব্যবস্থা করেছি। যা নিয়ে সে মানুষের মধ্যে চলাফেরা করে, সে কি ঐ ব্যক্তির মতো হতে পারে, যার অবস্থা এই যে, সে অন্ধকার দ্বারা পরিবেষ্টিত, যা থেকে সে কখনো বের হতে পারবে না? এভাবেই কাফেরদের দৃষ্টিতে তাদের কর্মসমূহ শোভন করে দেওয়া হয়েছে।

সূরা হাদীদের ২৮ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَ اٰمِنُوْا بِرَسُوْلِهٖ یُؤْتِكُمْ كِفْلَیْنِ مِنْ رَّحْمَتِهٖ وَ یَجْعَلْ لَّكُمْ نُوْرًا تَمْشُوْنَ بِهٖ وَ یَغْفِرْ لَكُم وَ اللهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ.

হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন; তাহলে তিনি তোমাদেরকে তাঁর রহমতের দুটি অংশ দান করবেন এবং তোমাদের জন্য সৃষ্টি করবেন এমন আলো, যার সাহায্যে তোমরা চলবে এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

৫। আলফুরকান নামের মধ্যে এই ইঙ্গিতও রয়েছে যে, মুমিন বান্দাগণ যদি কুরআন মাজীদের হেদায়েত ও বিধান অনুসরণের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করে তবে আল্লাহ তাআলা তাদের মধ্যে ও তাদের শত্রুদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন। দুনিয়ায় মুমিনদেরকে ইজ্জত ও বিজয় দান করবেন এবং কাফেরদেরকে পরাজিত ও লাঞ্ছিত করবেন। যেমন বদর যুদ্ধে করেছেন, যাকে কুরআনে يوم الفرقان বলা হয়েছে। আর আখেরাতে তিনি কাফেরদেরকে দেবেন চিরস্থায়ী আজাব ও জাহান্নাম এবং মুমিনদেরকে দান করবেন নাজাত ও মুক্তি। হ

 

১. ফুরকান শব্দের তাফসীর ও তাৎপর্য সম্পর্কে নিম্নোক্ত কিতাবদুটি বিশেষভাবে দেখা যেতে পারে- তাফসীরে আবিস সাউদ ৪/৪৯১, তাফসীরে রুহুল মাআনী ১০/১৮/২৩১ (সূরা ফুরকানের ১ নং আয়াতের তাফসীর)

মন্তব্য করুন: