মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, বৈশাখ ৩০ ১৪৩২, ১৫ জ্বিলকদ ১৪৪৬

ব্রেকিং

আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধে ভারতের উদ্বেগ শ্রীনগরজুড়ে বিস্ফোরণ, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওমর আব্দুল্লাহর উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত: আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ ‘চলবে’, শনিবার গণজমায়েত ড্রোন যুদ্ধ: ভারত-পাকিস্তান বিরোধের নতুন অধ্যায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সরকার গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আ.লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়বেন না আন্দোলনকারীরা ‘আপ বাংলাদেশ’–এর আত্মপ্রকাশ পূর্বঘোষণা ছাড়া ভারত সফরে সৌদি প্রতিমন্ত্রী, পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনায় কূটনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে মার্চের হুঁশিয়ারি নাহিদ ইসলামের দেশীয় ওষুধ কোম্পানি রেনাটাকে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে আইএফসি তারেক রহমান: সরকার হয়তো স্বৈরাচারের দোসরদের দেশত্যাগে সহায়তা করছে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারতের নির্দেশে ৪ বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল ইউটিউবে বন্ধ

ইসলাম

পরিবার : পর্দালঙ্ঘনের পরিণাম

 প্রকাশিত: ১১:১৯, ১৭ নভেম্বর ২০২২

পরিবার : পর্দালঙ্ঘনের পরিণাম

স্বামীপক্ষের অনেক আত্মীয়ের সাথেও পর্দার বিধান রয়েছে। যেমন দেবর-ভাসুর, তাদের সন্তান, স্বামীর চাচা-মামা, খালু-ফুফা এবং তাদের সন্তান- এদের সবার সাথেই পর্দা আছে। অনেকে বাইরের মানুষের সাথে কিছুটা পর্দা রক্ষা করলেও আত্মীয়মহলে পর্দা রক্ষা করে না। অথচ আত্মীয়মহলে পর্দা রক্ষার গুরুত্ব নানা কারণে আরো বেশি। কারণ বাইরের লোকদের সাথে দেখা-সাক্ষাতের চেয়ে এ ধরনের আত্মীয়দের সাথে দেখা-সাক্ষাতের ক্ষেত্র বেশি তৈরি হয় এবং ইসলামী চেতনার অভাব থাকলে আত্মীয়মহলে পর্দা লঙ্ঘনকে উপেক্ষার দৃষ্টিতে দেখা হয়। অথচ হাদীস শরীফে এ ধরনের আত্মীয়দের সাথে পর্দা রক্ষা না করার ব্যাপারে গুরুতর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে।

হযরত উক্বা ইবনে আমির রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লালাøহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

إِيّاكُمْ وَالدّخُولَ عَلَى النِّسَاءِ.

‘তোমরা বেগানা নারীদের কাছে যাবে না।’

একথা শুনে এক আনসারী সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন-

يَا رَسُولَ اللهِ، أَفَرَأَيْتَ الحَمْوَ؟

আল্লাহর রাসূল! ‘হাম্ভ’ সম্পর্কে আপনার আদেশ কী? (তারা কি যেতে পারে?)

তিনি বললেন- الحَمْوُ المَوْتُ ‘হাম্ভ’ তো মওত! -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫২৩২; সহীহ মুসলীম, হাদীস ২১৭২

আরবী ভাষায় ‘হাম্ভ’ মানে স্বামীপক্ষীয় আত্মীয়-স্বজন। দেবর-ভাসুর ইত্যাদি। এই আত্মীয়দের সাথে পর্দা রক্ষা না করাকে মৃত্যুর সমতুল্য বলা হয়েছে।

কারণ এখানে পর্দা না করলে বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে। বড় ধরনের গুনাহ ও পাপাচারের পথ খুলতে পারে।  এটা দ্বীনদারি ও পরহেযগারির পক্ষে ধ্বংসাত্মক। এটা পরিবারের ভাঙ্গন, এমনকি মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। এই অশুভ পরিণাম থেকে আত্মরক্ষার উপায় হচ্ছে এই ক্ষেত্রে পর্দার বিধান মেনে চলা।

ইসলামের এই বিধান পালনে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক যে শান্তি, স্বস্তি ও কল্যাণ রয়েছে তা পরিষ্কারভাবে উপলব্ধি করতে চাইলে চারপাশের ঘটনাপ্রবাহে একটু নজর বুলিয়ে নেওয়াই যথেষ্ট হবে। ভয়াবহ অশান্তি ও অকল্যাণের দৃষ্টান্তগুলো থেকেই বোঝা যাবে, ইসলামের এই বিধানে মানুষের জন্য শান্তি ও স্বস্তির কত বড় উপাদান রয়েছে।

এই সংক্ষিপ্ত নিবন্ধে শুধু একটি মর্মান্তিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরছি, যা গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ঈ. তারিখে দৈনিক নয়া দিগন্তের ৩য় পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে।

ঘটনাটির সারসংক্ষেপ হচ্ছে, মনিরুজ্জামান নামে এক লোকের কর্মস্থল ছিল ফেনীতে। কর্মসূত্রে তিনি ওখানেই থাকতেন। তার স্ত্রী থাকত গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরে। তাদের দুটি সন্তান। এদিকে মনিরুজ্জামানের ছোট ভাই অর্থাৎ দেবরের সাথে দুই সন্তানের জননী ভাবীর অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দীর্ঘ আট বছরের সম্পর্কের পর দেবর ভাবীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু ভাই বাধা হওয়ায় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরে দেবর-ভাবী চক্রান্ত করে মনিরুজ্জামানকে ঢাকায় এনে ভাড়াটে খুনীর মাধ্যমে খুন করে। এরপর ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হলেও তদন্তে সব কিছু বের হয়ে আসে। এখন দেবর-ভাবী ও ভাড়াটে তিন খুনী সবাই গ্রেফতার হয়ে বিচারের অপেক্ষায়।

এই যে মর্মান্তিক ঘটনা- ভাইয়ের হাতে ভাই খুন, দুই সন্তানের জননীর মারাত্মক স্খলন, নিষ্পাপ দুটি শিশুর মাথার উপর থেকে মা-বাবার ¯েœহ-ছায়া উঠে যাওয়া, এককথায় পুরো পরিবারটি তছনছ হয়ে যাওয়া- এর পিছনের কারণটি কী? কারণ তো আর কিছু নয়, আল্লাহর নাফরমানী- পর্দার বিধান লঙ্ঘন করা, প্রবৃত্তির চাহিদা নিয়ন্ত্রণ না করা, অবিরাম গুনাহে লিপ্ত থাকা।

মনে রাখতে হবে, এটা কখনো মুমিনের শান নয়। মুমিনের শান হল কখনো গুনাহ হয়ে গেলেও অনুতপ্ত হওয়া এবং গুনাহের পথ থেকে ফিরে আসা। কিন্তু তা না করে যখন মানুষ গুনাহে লিপ্ত থাকে, বারবার গুনাহ করে যেতে থাকে তখন এক পর্যায়ে সে ভয়াবহ পরিণতির মুখোমুখী হয়। সেই পরিণামের শিকার হওয়ার পর হয়ত হুঁশ হয়, কিন্তু তখন আর উপায় থাকে না। এজন্য ভুলে গেলে চলবে না যে, অনাচার-পাপাচারের পথ শান্তির পথ নয়, এপথে কিছুতেই শান্তি আসতে পারে না; এপথ তো বিদ্যমান শান্তিও শেষ হয়ে যাওয়ার পথ।

ইসলামী শরীয়ত আমাদের যে নীতি ও বিধান দান করেছে, আমাদের কর্তব্য, বিনা বাক্যব্যয়ে তা পালন করে যাওয়া। এই নীতি ও বিধানেই রয়েছে আমাদের ইহকাল-পরকালের শান্তি ও কল্যাণ।

আলোচিত ঘটনাটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক শান্তি রক্ষায় আত্মীয়-মহলে যেসব ক্ষেত্রে পর্দার বিধান রয়েছে তা কত যতেœর সাথে মেনে চলা উচিত। এই বিষয়ে জ্ঞান ও সচেতনতার বিস্তার এবং সযত্ন চর্চা ও অনুশীলন আমাদের রক্ষা করতে পারে বহু ধরনের সমস্যা থেকে।  আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দান করুন- আমীন।