মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানের ছায়া থেকে বাঁচার আকুতি—উত্তরায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকালে বিদ্যালয়মুখী শিক্ষার্থীরা স্কুলসংলগ্ন এলাকায় বিক্ষোভে অংশ নেয়। অনেকের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড—“উই ওয়ান্ট জাস্টিস”, “লাশের হিসাব কই?”, “ডিয়ার আর্থ, সেভ আস”—যা তাদের অসহায়ত্ব, রাগ ও শোক প্রকাশ করে।
ঘটনার দিন স্কুলে উপস্থিত থাকা শিক্ষার্থীদের মতে, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা গণমাধ্যমে যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়নি। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরা বলছেন, এমন ধারণার পেছনে রয়েছে তথ্য বিভ্রাট ও অপপ্রচার। তথ্য নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে সংখ্যা প্রকাশ করতে পারে না—এমন বাস্তবতা অনেক শিক্ষার্থী বুঝে উঠতে পারেনি।
দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশে তখনো ভিড় জমেছিল অভিভাবক, স্থানীয় মানুষ ও মিডিয়া কর্মীদের। অনেক শিক্ষার্থী প্রশ্ন তোলে—“এটা কি ট্যুরিস্ট স্পট?” তাদের ক্ষোভ ছিল আরও গভীরে—রাজনৈতিক নেতাদের প্রটোকল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়ে আসা রাজনৈতিক উত্তাপ নিয়েও।
এক শিক্ষার্থীর প্রশ্ন ছিল, “সবকিছু কি আমাদের ছাত্রদের বুকের ওপর দিয়েই যাবে?” আরেকজন বলে, “আমরা ভাই-বোন হারালাম, আর ওরা আমাদের লাশ নিয়ে রাজনীতি করছে।”
দুর্ঘটনার সময় স্কুলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা জানায়, কোচিংয়ের জন্য থেকে যাওয়া শিক্ষার্থীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক অভিভাবক জানান, “মাত্র কয়েক মিনিট আগেই আমি আমার সন্তানকে নিয়ে বাসায় ফিরেছিলাম, না হলে হয়তো তাকেও হারাতাম।”
স্কুলের পাশে রানওয়ের এত কাছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, জনবহুল এলাকায় যুদ্ধবিমান নিয়ে প্রশিক্ষণ, এবং স্কুল ছুটির পর কোচিং ক্লাসের চলমানতা—এসব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি উঠে এসেছে জরুরি পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের প্রতি পুলিশের আচরণ এবং আইডি কার্ডে রক্তের গ্রুপ না থাকার মতো অব্যবস্থাপনার বিষয়ও।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেলে শিক্ষক-অভিভাবক-শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, এই কমিটি হতাহত ও নিখোঁজদের নির্ভরযোগ্য তথ্য এবং দায়িত্ব নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে।
ঘটনার প্রেক্ষিতে একজন শিক্ষক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পুরোনো একটি ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে তারা গাইছে:
“একদিন ছুটি হবে, অনেক দূরে যাব/ নীল আকাশে, সবুজ ঘাসে, খুশিতে হারাব।”
শিক্ষার্থীদের সেই ছুটি যেন এলো, তবে চিরতরের জন্য।