আইপিএল: আকাশছোঁয়া দাম, মাঠে ছন্দহীন পারফরম্যান্স

নিলামে দাম আকাশছোঁয়া হলেও পারফরম্যান্সে মাটি ছোঁয়ানো এই তারকারা হতাশ করেছেন দল ও সমর্থকদের।
নিলামে ঝড় তোলা হলেও মাঠে তারা যেন নিস্তেজ বাতাস!
নিলামের মঞ্চে তাঁরা ছিলেন সবার আলোচনার কেন্দ্রে। নাম ডাকার সঙ্গে সঙ্গে হাত উঠেছে একের পর এক, লাফিয়ে বেড়েছে দাম। কোটি কোটি রুপিতে বিক্রি হওয়া তারকারা মাঠে গিয়ে যেন খুঁজে পেলেন না নিজেদের ছায়াও। দামি খেলোয়াড় মানেই যে ম্যাচ জেতানো নায়ক হবেন, এবারের আইপিএলে সেই ধারণার গালে জোর চড় মেরেছে অনেকেই। চলুন জেনে নেওয়া যাক আইপিএলের সেই দামি কিন্তু ব্যর্থ তারকাদের গল্প।
ঋষভ পন্ত — ২৭ কোটি রুপি
লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের হয়ে আইপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৭ কোটি রুপিতে বিক্রি হন ঋষভ পন্ত। কিন্তু পারফরম্যান্স? পুরোপুরি হতাশাজনক। ১৩ ইনিংসে তাঁর সংগ্রহ মাত্র ১৫১ রান, গড় ১৩.৭২ এবং স্ট্রাইক রেট ১০৭.০৯। এক ইনিংসে ১৭ বলে ১৮ রান করে মাঠে দর্শকদের রাগের শিকারও হয়েছেন তিনি।
অধিনায়কত্বেও ভরসা দিতে পারেননি পন্ত। শুরুতে কিছুটা ভালো খেললেও, শেষ দিকে টানা হেরে প্লে–অফের আগেই বাদ পড়ে যায় লক্ষ্ণৌ। দামি হলেও পন্ত ছিলেন সবচেয়ে হতাশাজনক মুখ।
ভেঙ্কটেশ আইয়ার — ২৩.৭৫ কোটি রুপি
কলকাতা নাইট রাইডার্স ভেঙ্কটেশকে ২৩.৭৫ কোটিতে দলে নেয়। কিন্তু ১১ ম্যাচে তাঁর রান মাত্র ১৪২, গড় ২০.২৮। একটি ইনিংসে ১৪ রান করতে খেলেছেন ১৯ বল, যা তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ধীর ইনিংস। গ্যালারিতে তখন চলছিল তাঁর প্রাইস ট্যাগ নিয়ে রসিকতা!
হাইনরিখ ক্লাসেন — ২৩ কোটি রুপি
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ দক্ষিণ আফ্রিকান উইকেটকিপার-ব্যাটার ক্লাসেনকে ২৩ কোটি রুপিতে ধরে রাখে। তিনি ১২ ইনিংসে করেন ৩৮২ রান, স্ট্রাইক রেট ১৫৭.২০। যদিও এই সংখ্যাগুলো চোখে ভালো লাগলেও, ম্যাচ জেতানো ইনিংস একটিও ছিল না। মাত্র একটি ফিফটি, আর বাকিগুলো ছিল নির্লিপ্ত উপস্থিতি। দলও বিদায় নেয় লিগ পর্ব থেকেই।
ধ্রুব জুরেল — ১৪ কোটি রুপি
মাত্র দু’বছরের আইপিএল অভিজ্ঞতা নিয়ে রাজস্থান রয়্যালস কিনে নেয় ধ্রুব জুরেলকে ১৪ কোটিতে। রান তুলেছেন ৩৩৩, দুটি ফিফটি। কিন্তু রান এসেছে প্রায় সবটাই চাপহীন মুহূর্তে। যেখানে দলের দরকার ছিল ফিনিশিং ইনিংস, সেখানে বারবার ব্যর্থ হয়েছেন জুরেল। ফলে রাজস্থান পড়ে যায় পয়েন্ট টেবিলের নিচের দিকে।
মোহাম্মদ শামি — ১০ কোটি রুপি
নতুন বলে ভরসা হওয়ার কথা ছিল শামির। কিন্তু তিনি ৯ ম্যাচে পেয়েছেন মাত্র ৬ উইকেট, গড় ৫৬.১৬। ইকোনমি রেট ১১.২৩—যা এক বোলারের জন্য দুঃস্বপ্ন। এমন পারফরম্যান্সের পর শেষ তিন ম্যাচে একাদশেই জায়গা হয়নি তাঁর।
উপসংহার
নিলামে কোটি কোটি রুপির ঝড় তোলা এসব খেলোয়াড় মাঠে নামতেই যেন ঝিমিয়ে পড়েছেন। বড় দামে বিক্রি মানেই যে বড় পারফরম্যান্স নয়, সেটি আরও একবার প্রমাণ করল আইপিএলের এবারের আসর। আগামী মৌসুমে এই নামগুলো থাকলেও, তাদের দাম যে কমবে—এটা অনেকটাই নিশ্চিত।