যুদ্ধবিরতির আশায় দফায় দফায় বৈঠক, কিন্তু নেই কোনো সমাধান

গাজা যুদ্ধের অবসান ও মানবিক বিপর্যয়ের আশায় বিশ্ব তাকিয়ে ছিল ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বৈঠকের দিকে। কিন্তু টানা ২৪ ঘণ্টায় দুই দফা আলোচনার পরেও কোনো শান্তির ঘোষণা আসেনি। আলোচনা থেমে গেছে কূটনৈতিক সৌজন্যের সীমায়, ফলাফল শূন্যই রয়ে গেছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউজে দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠকে বসেন ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু। বৈঠক চলে এক ঘণ্টারও বেশি সময়। ধারণা করা হয়েছিল, এই আলোচনার পর হয়তো যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু জানানো হবে। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি। আলোচনার পর নীরবেই হোয়াইট হাউজ ত্যাগ করেন নেতানিয়াহু।
এর আগে সোমবার রাতে এক নৈশভোজের সময়ও তাদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হয়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর পর এটি ছিল নেতানিয়াহুর তৃতীয় ওয়াশিংটন সফর।
বৈঠকের আগে ট্রাম্প বলেন, “গাজার পরিস্থিতি একটি ট্র্যাজেডি। আমরা এর সমাধান চাই এবং আমার বিশ্বাস, অন্য পক্ষও তা চায়।”
কিন্তু আলোচনার ফলাফল বা সম্ভাব্য সমঝোতা সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। বৈঠক ছিল কঠোরভাবে গোপনীয় এবং আলোচনার বিস্তারিতও জানা যায়নি।
মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভেন উইটকফ আশাবাদ ব্যক্ত করে জানিয়েছেন, “আমরা আশা করছি, সপ্তাহের শেষ নাগাদ একটি ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তি হবে। এতে অন্তত ১০ জন জীবিত বন্দি এবং ৯ জন নিহত ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দেওয়া সম্ভব হবে।”
তবে কাতারের দিক থেকে ভিন্ন বার্তা এসেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেন, “এ মুহূর্তে নির্দিষ্ট সময়সীমা বলা সম্ভব নয়। আমাদের আরও সময় লাগবে।”
এদিকে যুদ্ধবিরতির আলোচনা চললেও ইসরাইলি বাহিনীর হামলা অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার রাতে গাজার খান ইউনুস ও একটি শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলায় ২০ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ৬ জন শিশু।
বুধবার পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এরই মধ্যে গাজার সব ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণাঞ্চলের একটি ক্যাম্পে স্থানান্তরের পরিকল্পনার নির্দেশ দিয়েছেন নেতানিয়াহু। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ জানান, রাফার ধ্বংসাবশেষের ওপর একটি ‘মানবিক শহর’ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যেখানে প্রাথমিকভাবে ৬ লাখ ফিলিস্তিনি থাকতে পারবেন।
তবে ওই শহরে প্রবেশের আগে সবাইকে নিরাপত্তা তল্লাশির মধ্য দিয়ে যেতে হবে, এবং একবার প্রবেশ করলে আর বাইরে আসার অনুমতি থাকবে না— এমন নির্দেশনা কার্যত নতুন এক বন্দিশিবিরেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সৌদি সংবাদমাধ্যম আশরাক নিউজ জানিয়েছে, কাতারে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে পঞ্চম দফা আলোচনাও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে। এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানান, “ইসরাইলি প্রতিনিধিদল শুধু শুনেছে, কোনো সিদ্ধান্তে আসেনি। তাদের হাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষমতা নেই; সবকিছু নির্ভর করছে নেতানিয়াহুর ওপর।”
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৫৭,৫৭৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১,৩৬,৮৭৯ জন।