ট্রাম্পে র চাপে বাণিজ্যচুক্তির জটে মোদি সরকার

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য সময় ফুরিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বহু প্রতীক্ষিত বাণিজ্য চুক্তির জন্য হাতে রয়েছে আর মাত্র এক সপ্তাহ। যদি এই সময়সীমার মধ্যে চুক্তি না হয়, তাহলে ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে উচ্চ হারে শুল্কের সম্মুখীন হতে হবে।
বাণিজ্য আলোচনা চলছে কয়েক মাস ধরেই, কিন্তু বিষয়টি এখন ক্রান্তিকালে পৌঁছেছে—বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর। ট্রাম্প স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, চুক্তি করতে হলে আমেরিকাকে ভারতের বাজারে প্রবেশাধিকার দিতে হবে। ভারত এখনো পর্যন্ত অনেক আমদানি পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করে রেখেছে—বিশেষ করে কৃষি, ডেইরি ও জেনেটিক্যালি মডিফায়েড (জিএম) খাদ্যপণ্য-এর ক্ষেত্রে। ট্রাম্প চান, ভারত এসব ক্ষেত্রে শুল্ক কমাক এবং মার্কিন পণ্যের জন্য দরজা খুলে দিক।
ভারতের পক্ষ থেকে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য কর্মকর্তা রাজেশ আগারওয়াল। তিনি ইতোমধ্যেই নির্ধারিত সময়ের পরও ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন, ইঙ্গিত দিচ্ছে—আলোচনার জট এখনো কাটেনি।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেছেন, এটি জটিল বাণিজ্য আলোচনা এবং “দেওয়া-নেওয়ার” ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত আসবে। তবে এই “দেওয়া” অংশটাই এখন মোদি সরকারের জন্য রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা—ভারত আপেল, বাদাম, জিএম ফসল এবং দুগ্ধজাত পণ্যের ওপর শুল্ক কমাবে। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে প্রস্তাব, আপাতত জিএম খাদ্য ও দুগ্ধজাত পণ্য বাদ রেখে চুক্তি করা হোক। যুক্তরাষ্ট্র এতে সম্মত নয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কৃষি ও ডেইরি খাতে শুল্ক কমালে ভারতের লক্ষ কোটি কৃষক—বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা—চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমেরিকার কৃষকরা সরকার থেকে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি পান, যা ভারতের কৃষকদের তুলনায় অনেক বেশি। কৃষি সাংবাদিক হরবীর সিং বলেন, “ভারতীয় কৃষকদের বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না।”
জয়ন্ত রায়চৌধুরীর মতে, কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের ক্ষেত্রে ভারত শুল্ক কমাবে—যেমন আপেল, বাদাম, বিশেষ ধরনের চিজ। তবে চাল-গম বা দুধের মতো প্রধান খাদ্যপণ্যে শুল্ক হ্রাসের সম্ভাবনা নেই।
এই মুহূর্তে ভারতের বাজারে পেস্তা, হ্যাজেলনাট, অ্যামন্ড, সয়াবিন, কর্নসহ অনেক মার্কিন পণ্যের চাহিদা থাকলেও, সেগুলোর সহজ প্রবেশাধিকার দিলে দেশের ভেতরে রাজনৈতিক চাপ বাড়বে। কারণ, ডেইরি খাতের সঙ্গে জড়িত আট কোটিরও বেশি মানুষ। কৃষি ও ডেইরিতে কোনো বড় ছাড় দেওয়া মানে, সরকার কৃষক-বিরোধী কাজ করেছে—এমন বার্তা পৌঁছাতে পারে নির্বাচনের মুখে।
ফলে মোদি সরকার এখন এক কঠিন ভারসাম্যের সন্ধানে—একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক ও বাণিজ্য রক্ষা, অন্যদিকে দেশের কৃষক ও রাজনীতি রক্ষা।