লোহিত সাগরে হুতিদের হামলায় সৌদির বন্দর স্বপ্ন হুমকিতে

হুতিদের হামলার কারণে সৌদি আরবের বন্দর ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়ছে, প্রশ্ন উঠছে যুবরাজের ‘ভিশন-২০৩০’ পরিকল্পনা নিয়ে।
সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে দেশটি দীর্ঘদিন ধরে তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করার যে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ নিয়েছে, তার একটি প্রধান স্তম্ভ ছিল লোহিত সাগরের বন্দর উন্নয়ন। কিন্তু ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ধারাবাহিক হামলা সেই পরিকল্পনায় বড় ধাক্কা দিয়েছে।
জাহাজ চলাচল বিশ্লেষণকারী সংস্থা মেরিন ট্রাফিক জানিয়েছে, কিং আবদুল্লাহ বন্দরে ২০২৩ সালে যেখানে ১৮৮টি কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়েছিল, ২০২৪ সালে তা কমে মাত্র ৫৯টিতে দাঁড়িয়েছে—অর্থাৎ প্রায় ৭০ শতাংশ হ্রাস। চলতি বছর এখন পর্যন্ত এসেছে মাত্র ৫১টি জাহাজ।
বন্দরটির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক শিপিং কোম্পানিগুলো এখন লোহিত সাগরের রুট এড়িয়ে যাচ্ছে, যার ফলে ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবসাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি, মালিকপক্ষ চাইলে এখন বন্দরটির কনটেইনার টার্মিনাল বিক্রিও করতে পারছে না।
উল্লেখ্য, কিং আবদুল্লাহ বন্দরটি সৌদির সরকারি বিনিয়োগ তহবিল (পিআইএফ), সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইমার রিয়েল এস্টেট এবং হুটা মেরিন ওয়ার্কসের যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত।
এদিকে জেদ্দা ইসলামিক বন্দরেও কিছুটা প্রভাব পড়েছে। ২০২৩ সালে ৪০০টি জাহাজ আসলেও ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪৪টিতে। তবে আমদানি পণ্যের প্রবেশপথ হিসেবে এর গুরুত্ব থাকায় তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে।
বর্তমানে অনেক এশিয়ান জাহাজ পূর্ব উপকূলের দাম্মামের কিং আবদুল আজিজ বন্দরে যাতায়াত করছে। এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জনপ্রিয় গাড়ি কোম্পানি বিওয়াইডি এখন আর লোহিত সাগরের বন্দর ব্যবহার করছে না।
২০২৩ সালের নভেম্বরে গাজা যুদ্ধের পর হুতিরা সমর্থন জানিয়ে লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা শুরু করে। মিসরের সুয়েজ খাল এবং সৌদির বন্দরগুলো এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক জাহাজ এখন হুতিদের এড়াতে আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্ত ঘুরে যাচ্ছে, যার ফলে সময় ও খরচ দুই-ই বাড়ছে।
ভিশন-২০৩০ পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য ছিল লোহিত সাগরের উপকূলকে বিলাসবহুল হোটেল, শিল্পাঞ্চল ও ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অঞ্চলটি তেলবিহীন অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি হিসেবে ভাবা হচ্ছিল।
কিন্তু নানা সমস্যার মুখে সৌদির সেই মহাপরিকল্পনা ধাক্কা খাচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগের ঘাটতি, তেলের দামের পতন এবং মেগা প্রকল্প ‘নিওম’-এর পুনর্গঠন পরিকল্পনার মধ্যেই হুতিদের হামলা নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
সাম্প্রতিক হামলায় গ্রিসের দুটি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে হুতিরা। ফলে জাহাজ মালিকরা এখন ঝুঁকি এড়িয়ে দীর্ঘ পথ বেছে নিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুতিদের ওপর বিমান হামলা শুরু করলেও, পরবর্তীতে কূটনৈতিক অনুরোধে তা বন্ধ করা হয়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, হুতিদের থামাতে গাজায় যুদ্ধবিরতির মতো রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া সামরিক পথ তেমন কার্যকর হবে না। আর সে পর্যন্ত সৌদির বন্দর ব্যবসা হয়তো সংকটে থাকবেই।