আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণের অভিযোগে সেনা হেফাজতে মেজর সাদেক

প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা। ছবি: আইএসপিআর
মেজর সাদেকুল হক সাদেক বর্তমানে সেনাবাহিনীর হেফাজতে রয়েছেন এবং তার বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তদন্তে দোষ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই ২০২৫) ঢাকা সেনানিবাসে অফিসার্স মেস-এ আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান সেনা সদর দপ্তরের সামরিক অপারেশনস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে, যেখানে বলা হয় মেজর সাদেক সম্প্রতি আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন—এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে প্রথমে কথা বলেন সামরিক অপারেশনস পরিদপ্তরের (কর্নেল স্টাফ) কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, বিষয়টি সেনাবাহিনীর নজরে এসেছে এবং ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে। পরবর্তীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, “মেজর সাদেকের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। তদন্তাধীন অবস্থায় সে সেনাবাহিনীর হেফাজতে রয়েছে। তদন্তে যদি তার দোষ প্রমাণিত হয়, তাহলে সেনাবাহিনীর প্রচলিত বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গোপালগঞ্জের সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষাপটেও বক্তব্য দেন তিনি। জানান, “প্রত্যেকটি জীবনই মূল্যবান। আমরা জীবনহানির ঘটনা কখনোই কামনা করি না।” এ ঘটনায় সরকার একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে প্রধান করে উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যা ঘটনার বিস্তারিত ও পটভূমি বিশ্লেষণ করবে বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা কোনো রাজনৈতিক দলকে সহায়তা করি না। আমাদের দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে পালন করা হয়। গোপালগঞ্জে যে দলের কিছু সদস্যের জীবননাশের হুমকি ছিল, সেনাবাহিনী সেখানে গিয়ে শুধু তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।” তিনি আরও জানান, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের অনুমতি ছাড়াই কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ হয় না এবং সেনাবাহিনীর কাছে এই ঘটনার পূর্বাভাস ছিল না।
এ সময় বলা হয়, সেখানে কেবল ইট-পাটকেলই নয়, ককটেলও নিক্ষেপ করা হয়েছিল। ফলে আত্মরক্ষার্থে বল প্রয়োগ করা হয়েছিল, তবে প্রাণঘাতী কোনো অস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার একটি বক্তব্যে সেনাবাহিনী গুলি করেছে—এই দাবি প্রসঙ্গে কর্নেল শফিকুল বলেন, “এই বিষয়ে সত্য উদঘাটনের লক্ষ্যে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। আমরা আশা করি, এই কমিশন সঠিক তথ্য উন্মোচন করবে।”
নির্বাচন সংক্রান্ত প্রস্তুতি বিষয়ে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত সরকার বা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি, তবে বাহিনীর নিজস্ব প্রস্তুতি রয়েছে।
পার্বত্য অঞ্চলে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী তৎপরতা নিয়েও কথা বলেন কর্নেল শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, “বিভিন্ন দুষ্কৃতকারী দল চাঁদাবাজি করছে। এসব কর্মকাণ্ড দমন করতে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।”
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যৌথভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার সীমিত। আমরা কেবল তল্লাশি ও গ্রেফতার করতে পারি। অপরাধীকে হস্তান্তরের পর বিচারিক প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনীর কোনো ভূমিকা থাকে না। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও কার্যকর হতে হবে।”