‘দায়িত্ব না নিলে হতাহত আরও বাড়ত’—গোপালগঞ্জ নিয়ে সেনাবাহিনীর বক্তব্য

মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।
গোপালগঞ্জে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় সেনাবাহিনী কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে নয়, বরং যাদের জীবননাশের হুমকি ছিল, কেবল তাদেরই সহায়তা করেছে বলে জানিয়েছেন মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই ২০২৫) এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি জানান, “আমরা কোনো রাজনৈতিক দলকে বিশেষভাবে কখনো সহায়তা করিনি। আমাদের দায়িত্বের মধ্যে কাউকে বিশেষভাবে দেখা হয় না। গোপালগঞ্জে যেসব ব্যক্তির জীবননাশের হুমকি ছিল, তাদের জীবন বাঁচানোর উদ্দেশ্যেই সেনাবাহিনী সেখানে সহায়তা করেছে। মূল লক্ষ্য ছিল জীবন রক্ষা, অন্য কিছু নয়।”
তিনি বলেন, “যেকোনো রাজনৈতিক দল কোথায় সভা, সমাবেশ করবে, তা স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই করতে হয়। গোপালগঞ্জের ঘটনার সময় প্রশাসন এ বিষয়ে অবগত ছিল।”
গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা ঘটে। দফায় দফায় সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হন। এ সময় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ও ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে।
কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, “সেখানে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। কেবল ইট-পাটকেলই নয়, ককটেলও নিক্ষেপ করা হয়। জীবননাশের হুমকি থাকায় আত্মরক্ষার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলপ্রয়োগ করে। তবে কোনো প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি।”
তিনি আরও জানান, “ঘটনার সত্যতা নিরূপণে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। আমরা আশা করি, এই তদন্ত কমিটি প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করতে পারবে।”
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সেদিন যদি সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হতো, তাহলে হতাহত আরও বেশি হতে পারত।” এ প্রসঙ্গে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা বিশেষ কোনো দলের প্রতি নজর দেই না। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সবাই আমাদের কাছে সমান। যেখানে জীবননাশের হুমকি থাকে, সেখানে আমরা কঠোর হই এবং জনসাধারণকে সহায়তা করি।”
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিতভাবে কাজের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সব বাহিনীকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আর যারা অগ্রভাগে কাজ করেন, তাদের আরও কার্যকর (ইফেক্টিভ) হতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার অনুযায়ী শুধু তল্লাশি ও অপরাধী গ্রেফতার করতে পারে। গ্রেফতারের পর বিচারিক প্রক্রিয়ায় হস্তান্তরের পর সেনাবাহিনীর আর কিছু করার থাকে না। এজন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর আরও দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন।”
পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্নের জবাবে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, “সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে যথাযথভাবেই নিরাপত্তা দিচ্ছে। সেখানে প্রটেকশন ব্যর্থ হচ্ছে—এই অভিযোগ সঠিক নয়।”