রোববার ২০ এপ্রিল ২০২৫, বৈশাখ ৬ ১৪৩২, ২১ শাওয়াল ১৪৪৬

ব্রেকিং

বাংলাদেশের গণতন্ত্রে মাইলফলক হবে আসন্ন নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা হবিগঞ্জে ট্রাক-পিকআপ সংঘর্ষে দুই নারীসহ ৪ জন নিহত টাকা পাচার বন্ধে ব্যাংক রেজোল্যুশন অধ্যাদেশ পাস বিএনপির সঙ্গে বিরোধ? এটা কোনো বিরোধই না: জামায়াত আমির সংস্কারে একমত না হলে নির্বাচন পেছাবে: জামায়াত আমির সংস্কারে সিরিয়াস বিএনপি: সালাহউদ্দিন হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞার হুমকি ট্রাম্প প্রশাসনের বাংলাদেশের মন্তব্যকে ‌‘অপ্রয়োজনীয় ও লোক দেখানো’ বললো ভারত প্রায় ১৫ বছর পর ঢাকা ও ইসলামাবাদের এফওসি’র আয়োজন ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিটে ‘বিভ্রান্ত’ বিএনপি ১২ অঞ্চলের নদীবন্দরে সতর্ক সংকেত আপিল বিভাগের নতুন দুই বিচারপতির সংবর্ধনা রোববার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি গ্যাসের দামে ভেদাভেদ: ‘পিছিয়ে পড়বেন’ নতুন উদ্যোক্তারা রাশিয়ার কাছে কেন মার্কিন যুদ্ধবিমান হারাচ্ছে ইউক্রেন? মেয়ের জন্য চাকরি চান শহীদ বাচ্চুর স্ত্রী লাইলি বেগম

অর্থনীতি

চট্টগ্রাম বন্দরে চারগুণ স্টোর রেন্ট বৃদ্ধি, শিল্প খাতে সংকটের আশঙ্কা

 প্রকাশিত: ১৮:০৩, ২১ মার্চ ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দরে চারগুণ স্টোর রেন্ট বৃদ্ধি, শিল্প খাতে সংকটের আশঙ্কা

চট্টগ্রাম বন্দর

চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট কমানোর জন্য কর্তৃপক্ষ চারগুণ স্টোর রেন্ট বা মাশুল বাড়িয়েছে, যা শিল্প খাতের জন্য বড় ধরনের চাপ তৈরি করেছে। বিশেষ করে পোশাকশিল্পসহ কাঁচামাল আমদানি নির্ভর সব ধরনের রপ্তানি খাত ক্ষতির মুখে পড়বে। শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্দরের কনটেইনার ব্যবহারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমদানির ব্যয় বৃদ্ধি পাবে এবং উৎপাদন খরচও অনেক গুণ বেড়ে যাবে, যা শিল্প খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, নির্ধারিত চার দিনের মধ্যে কনটেইনার ডেলিভারি না নিলে অতিরিক্ত মাশুল গুনতে হচ্ছে। গত ১০ মার্চ থেকে ২০ ফুট কনটেইনারের জন্য প্রথম সাত দিন প্রতিদিন ২৪ ডলার, দ্বিতীয় ১৩ দিন প্রতিদিন ৯৬ ডলার এবং তৃতীয় ২১ দিন প্রতিদিন ১৯২ ডলার দিতে হচ্ছে। ৪০ ফুট কনটেইনারের জন্য প্রথম সাত দিন দৈনিক ৪৮ ডলার, দ্বিতীয় ১৩ দিন ১৯২ ডলার এবং তৃতীয় ২১ দিন থেকে প্রতিদিন ৩৮৪ ডলার দিতে হচ্ছে। ফলে আমদানিকারকদের অনেক ক্ষেত্রে একেকটি কনটেইনারের জন্য ৩৮৪ ডলার পর্যন্ত গুণতে হচ্ছে, যা শিল্পখাতের জন্য বড় ধরনের অর্থনৈতিক চাপ তৈরি করছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে এবং কনটেইনার জট কমাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত চার দিনের মধ্যে ডেলিভারি নিলে কোনো মাশুল দিতে হয় না, ফলে সময়মতো খালাস করলেই অতিরিক্ত খরচ এড়ানো সম্ভব। তবে আমদানিকারকরা বলছেন, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সসহ নানা প্রশাসনিক জটিলতার কারণে চার দিনের মধ্যে কনটেইনার খালাস করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। এতে তাদের পণ্য বন্দরে আটকে থাকে এবং অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হয়, যা রপ্তানিমুখী শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে ব্যাহত করছে।

বিশেষ করে পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। বিজিএমইএর চট্টগ্রামের নেতারা বন্দরের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চারগুণ মাশুল প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, গত সাত মাসে শ্রমিক আন্দোলন, গ্যাস সংকট এবং বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে পোশাকশিল্প মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। অনেক কারখানা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে, নতুন এই মাশুল আরোপ শিল্পের সংকটকে আরও তীব্র করবে। বর্তমানে চট্টগ্রামে ৫৮০টি রপ্তানিকারক পোশাক কারখানার মধ্যে ৫২৮টি চালু রয়েছে এবং ৫০টির বেশি বন্ধ হয়ে গেছে। পোশাকশিল্প দেশের জিডিপিতে ১০ শতাংশ অবদান রাখে, যা ক্ষতির মুখে পড়লে জাতীয় অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, আমদানিকারকদের অনেকেই বন্দরের জায়গাকে গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করেন, যা অপারেশনাল কার্যক্রম ব্যাহত করছে। তাই দ্রুত কনটেইনার ডেলিভারি নিতে বলা হয়েছে, অন্যথায় চারগুণ স্টোর রেন্ট পরিশোধ করতে হবে। তবে শিল্প মালিকরা বলছেন, সরকার চাইলে কেবল সেইসব আমদানিকারকদের ওপর অতিরিক্ত মাশুল আরোপ করতে পারে যারা বন্দরে ইচ্ছাকৃতভাবে পণ্য রেখে দেন। কিন্তু সাধারণ শিল্পোদ্যোক্তাদের এ সিদ্ধান্তের বাইরে রাখা উচিত।

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ২৫ হাজার কনটেইনার রয়েছে, যেখানে বন্দরের ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজারের বেশি। এক মাস আগেও এই সংখ্যা ৪১ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যা কমাতে বর্ধিত মাশুল আরোপ করা হয়েছিল। তবে এখন বন্দরে কনটেইনার সংকট নেই, বরং অতিরিক্ত মাশুল শিল্পের জন্য নতুন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিল্প মালিকরা মনে করছেন, বর্তমান ফ্রি টাইম চার দিনের পরিবর্তে ১৫ দিন করা হলে সমস্যার সমাধান হতে পারে। অন্যথায় আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাবে, যা সব শিল্পখাতকেই ক্ষতির মুখে ফেলবে।