‘ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে’ — আলী রীয়াজ

আলী রীয়াজ বললেন, ব্যক্তি নয়, প্রতিষ্ঠান হতে হবে প্রাধান্যপ্রাপ্ত
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, গত ১৬ বছরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একটি ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছে, যা রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি: বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন।
আলী রীয়াজ বলেন, “আমাদের আকাঙ্ক্ষা একটি জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা, যেখানে ব্যক্তি নয়—প্রতিষ্ঠান হবে প্রাধান্যপ্রাপ্ত। ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।”
তিনি বলেন, “আমি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতিনিধি হিসেবে নয়, একজন নাগরিক হিসেবে কথা বলছি এবং এসব বক্তব্যের দায়ভার আমার নিজের।”
অধ্যাপক রীয়াজ আরও বলেন, “গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের লড়াই নতুন নয়। এটি চলছে দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে। বাংলাদেশে একদলীয় ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল, তার বিরুদ্ধেই বারবার সংগ্রাম হয়েছে।”
তিনি মনে করেন, গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য প্রয়োজন এমন প্রতিষ্ঠান, যা ব্যক্তির ঊর্ধ্বে থেকে রাষ্ট্রের স্বার্থে কাজ করবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পার্লামেন্ট হবে ব্যক্তির বন্দনার জন্য নয়, বরং এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে নির্বাহী বিভাগের দমন-পীড়নের বৈধতা দেওয়া হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “সংসদীয় ব্যবস্থায় আইনসভা থেকেই নির্বাহী বিভাগ গঠিত হয়। তাই সেই বিভাগের ওপর নজরদারি প্রতিষ্ঠিত না হলে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেই এ কাজ করতে হবে।”
আলোচনায় বিএনপির নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, “যেসব বিষয়ে ইতিমধ্যেই ঐকমত্য হয়েছে, তা যথেষ্ট। বাকি সিদ্ধান্ত জনগণের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “সরকার বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে আরও বিভাজন তৈরি করেছে।”
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে।” পুরান ঢাকায় এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আবরার ফাহাদ এবং সোহাগ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই। এসব ঘটনা বর্তমান শাসনব্যবস্থার নিষ্ঠুরতাকে তুলে ধরছে।”
আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “আমাদের আন্দোলন যেন আওয়ামী জাহেলিয়াতকে অতিক্রম না করে। তা হলে বহু রক্ত ঝরলেও সমাধান আসবে না।”
সভায় আরও বক্তব্য দেন জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাসদের সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা আকবর খান, আহত জুলাই যোদ্ধা ফায়েজুর রহমান মনির, বাসদ (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়কারী মাসুদ রানা, এবং বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির আবদুল মাজেদ আতাহারী।