সালিস বৈঠকে উত্তেজনা, ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে গুলি—নিহত একজন

গুলিবিদ্ধ ইব্রাহিম শিকদার পড়ে আছেন, পাশেই হামলাকারীকে মারছে জনতা।
রাজধানীর আদাবরের নবোদয় হাউজিংয়ে পারিবারিক বিরোধ মীমাংসার সালিস বৈঠকে উত্তেজনার এক পর্যায়ে পিস্তল বের করে গুলি চালানো হয়। এতে মো. ইব্রাহিম শিকদার (৩৮) নামের একজন নিহত হয়েছেন। গুলিবর্ষণকারী সজীব (৩২) ও তাঁর ভাই রুবেল (৩৫)–কে স্থানীয় লোকজন আটকে মারধরের পর পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা টি–শার্ট ও নেভি ব্লু জিনস পরা একজন ব্যক্তি কাঁধে একটি কালো ব্যাগ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে সামনে থাকা ব্যক্তিকে গুলি করেন তিনি। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। উপস্থিত লোকজন পরে হামলাকারীকে ধরে মারধর শুরু করেন।
পরে গুলিবিদ্ধ ইব্রাহিম শিকদারকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ইব্রাহিম পেশায় একজন গাড়িচালক ছিলেন। তিনি নবোদয় হাউজিংয়ের একটি ভবনে স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে ভাড়া থাকতেন।
বিরোধের সূত্রপাত
ইব্রাহিমের ভাগনে সুজন শিকদার স্থানীয় কাঁচাবাজারে সজীবের ডিমের দোকানে কাজ করতেন। কয়েক দিন আগে ডিম পরিবহনের সময় কিছু ডিম নষ্ট হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে সজীব সুজনকে মারধর করেন। এ ঘটনার মীমাংসায় গতকাল সন্ধ্যায় একটি দোকানে সালিস বৈঠকে বসেন ইব্রাহিম, তাঁর স্বজনেরা, সজীব ও তাঁর ভাই রুবেল। সালিস চলাকালে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের একপর্যায়ে সজীব ইব্রাহিমকে চড় মারেন এবং পরে ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে গুলি করেন।
পুলিশ ও মামলা
তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মো. ইবনে মিজান প্রথম আলোকে জানান, স্থানীয়রা গুলি চালানো সজীব ও তাঁর ভাই রুবেলকে আটক করে মারধর করেন। পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি গুলিভর্তি একটি বিদেশি পিস্তল ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আদাবর থানায় হত্যা ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা হয়েছে।
নিহতের পরিবার
নিহত ইব্রাহিমের বাড়ি ভোলা জেলার দুলারহাট থানার মুজিবনগরে। তাঁর স্ত্রী বলেন, ‘বিনা দোষে সন্ত্রাসীরা আমার স্বামীকে চিরতরে শেষ করে দিল। তিনি ছিলেন আমাদের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।’
খুনের আরেক ঘটনা: সোর্স আল আমিনকে কুপিয়ে হত্যা
সেদিন সন্ধ্যায় আরও একটি হত্যাকাণ্ড ঘটে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যানে। বাসা থেকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মোহাম্মদপুর থানা–পুলিশের তথ্যদাতা আল আমিনকে (৩৮)। তিনি বেড়িবাঁধ এলাকায় পরিবারসহ বসবাস করতেন।
ডিসি ইবনে মিজান জানান, সম্প্রতি আল আমিন ছিনতাই মামলার এক আসামিকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আসামির ভাই জোবায়েরের নেতৃত্বে কুপিয়ে হত্যা করা হয় তাঁকে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
তবে নিহত আল আমিনের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে। তাঁর ছোট ভাইয়ের দাবি, আল আমিন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাতেন। কিশোর গ্যাং ‘এবি গ্রুপ’-এর নেতা তাঁকে দলে টানতে চেয়েছিল। রাজি না হওয়ায় তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত আল আমিনের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলার হাঁটুরিয়ায়।