শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, বৈশাখ ২৬ ১৪৩২, ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৬

ব্রেকিং

আইভীর বাড়িতে পুলিশ, অনুসারীদের জটলা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের পরবর্তী ধাপের আলোচনার কর্মপরিকল্পনা দ্রুত চূড়ান্ত করার নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারের সাফল্য চাই: মির্জা ফখরুল তথ্যযুদ্ধ: কতটা সত্যি বলছে ভারত ও পাকিস্তান? ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতে এরপর কী? পাকিস্তান ভারত সীমান্তে উত্তেজনার নতুন অধ্যায়: ক্ষেপণাস্ত্র, হামলা ও তথ্যযুদ্ধ আওয়ামী লীগের দুই সহযোগী সংগঠন নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে: আসিফ মাহমুদ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে নেতৃত্ব পরিবর্তন: স্নিগ্ধর পদত্যাগ আবদুল হামিদের দেশত্যাগে জড়িতদের ধরা হবে, না হলে আমিই চলে যাব: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সরকার সংবাদপত্রের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখতে চায় : তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা প্রথম আমেরিকান পোপ হলেন রবার্ট প্রিভোস্ট ২০২৫: টেকনোলজির ঝড় উঠছে! ভারত-পাকিস্তানে যুদ্ধের দামামা: বাংলাদেশে কী প্রভাব, করণীয় কী রক্তের প্রতিটি ফোঁটার বদলা নেব: শেহবাজ শরিফ

অর্থনীতি

দাম বেড়েছে, বিক্রিও কম: ততটা জমেনি ইসলামপুর

 প্রকাশিত: ০৯:১৬, ১২ মার্চ ২০২৫

দাম বেড়েছে, বিক্রিও কম: ততটা জমেনি ইসলামপুর

ঈদুল ফিতর সামনে রেখে রোজা শুরুর আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীদের আনাগোনা শুরু হয় দেশের অন্যতম বড় পাইকারি কাপড়ের বাজার পুরান ঢাকার ইসলামপুরে।

ঈদের জন্য থান কাপড়, পাঞ্জাবি, শাড়ি, লুঙ্গি, সালোয়ার কামিজ, থ্রি পিস, বোরকাসহ নানা নকশার দেশি-বিদেশি পোশাক এখান থেকেই সংগ্রহ করেন তারা।

তবে এবার রোজার এক সপ্তাহ কেটে গেলেও আশানুরূপ ক্রেতা না পাওয়ার কথা বলছেন ইসলামপুরের ব্যবসায়ীরা। কেউ বলছেন বিক্রি ভালো হলেও ‘ঈদের মত’ নয়। আবার কেউ বললেন, ‘সন্তোষজনক নয়’।

বাংলাবাজার মোড় থেকে শুরু হওয়া ইসলামপুরের মূল সড়কের প্রথম ও শেষ ভাগে দুই পাশের মার্কেটগুলোতে রয়েছে শাড়ির দোকান। মাঝামাঝি স্থানের দোকানগুলোতে বিক্রি হয় চাদর, থ্রি পিস, ভয়েল, পপলিন ও মার্কিন থান কাপড়।

এখন মূল সড়ক ছাপিয়ে আশপাশের সড়ক এবং লেনেও স্থান করে নিয়েছে দোকানগুলো।

এখানকার জিএল গার্থ লেন, আশেক লেন, সৈয়দ আওলাদ হোসেন রোডসহ আশপাশের কয়েকটি মার্কেটই মূলত পাইকারি কাপড়ের বাজার।

পাইকারির পাশাপাশি ঢাকার আশপাশের এলাকার লোকজন তুলনামূলক কম দামে কাপড় কিনতে এখানে ভিড় জমান। নবাববাড়ি মার্কেট মূলত কাপড়ের খুচরা কেনাবেচার জন্য পরিচিত। এখানে খুচরা বেচাকেনা চলে ঈদের আগের রাতেও।

দেশি-বিদেশি কাপড়ের দর গত বছরের তুলনায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাপড়ের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এবার কাপড়ের দাম বেড়েছে।

ইসলামপুরের নিউ লামিয়া ফ্রেবিক্স দোকানের কর্মচারী রিয়াজ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার ঈদের বেচাকেনা তুলনামূলক কম, তবুও আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু গত বছরের তুলনায় এবার তেমন লাভ হচ্ছে না, পাইকারি ব্যবসায়ী কম।”

লায়ন্স টাওয়ারের আমিন ফেব্রিকসের রফিকুল ইসলাম বলেন, “আশা করেছিলাম ভালো বিক্রি হবে। ততটা হচ্ছে না। মনে হচ্ছে মানুষের কাছে টাকা কমে গেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ কাপড় নিচ্ছে, তা অন্য ঈদের তুলনায় এক তৃতীয়াংশ বলা যায়।”

পাইকারি দোকান অঙ্গ ফ্যাশনের কর্ণধার খোরশেদ আলম বলেন, “আমরা পাইকারি থ্রি পিস বিক্রি করি। এবার পাইকারি কাপড় বেশি সেল হয়নি। এখন থেকে খুচরা বিক্রি করব। সব ধরনের কাপড়ই আছে, ভারতীয় সিল্কের দাম একটু বেশি, তাছাড়া একেকটা একেক দামে বিক্রি করি। কিন্তু গতবারের থেকে বিক্রি অনেক কম।”

ফেনী সদর থেকে আসা কাপড় ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান পাটোয়ারীর সঙ্গে কথা বলেও কাপড়ের দাম বাড়ার তথ্য মিলল।

তিনি বলেন, “রোজার আগে থান কাপড় নিয়েছি, এখন থ্রি পিস ও পাঞ্জাবি নিতে এসেছি। দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। তাছাড়া বেচাকেনা অন্য বছরের তুলনায় কম হওয়ায় খুব বেশি নেব না। দামদর দেখছি, আজকে নিয়ে যাব। শেষ হলে আবার আসব।”

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ি থেকে কাপড় কিনতে এসেছেন ব্যবসায়ী দিপু রায়হান।

তিনি বললেন, “রমজানের আগে এক চালান নিয়ে গেছি। বেচাবিক্রি কম। পাঞ্জাবি শেষ মুহূর্তেই বেশি বিক্রি হয়, তাই এবার পাঞ্জাবি ও থ্রি পিস নিতে আসছি। তুলনামূলকভাবে এবার খুব বেশি কাপড় তুলব না, বেচাবিক্রি কম।”

ইসলামপুরের এইচ ক্লথের মালিক রাসেল মিয়া বলেন, “বিক্রি হচ্ছে, তবে আগের মত পাইকার নাই। সুতি কাপড়গুলাই বিক্রি হচ্ছে।”

রোজার শেষ দিকে বেচাকেনা বাড়ার আশা

সোমবার দুপুরে বাংলাবাজার মোড়ে পৌঁছাতেই ইসলামপুরের মূল সড়কের ব্যস্ততা চোখে পড়ে। ঈদ ছাড়াও এ এলাকা সবসময়ই জমজমাট থাকে; রিকশা আর ঠেলাগাড়ি ভিড় ঠেলে হাঁটাই দায়।

ইসলামপুরের মূল রাস্তায় ঢুকতেই ঠেলাগাড়ি ভর্তি করে কাপড়ের বান্ডেল টেনে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে ঈদের আগের এই ভিড়বাট্টা কমই বলছেন ব্যবসায়ীরা।

ইসলামপুর এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ যত এগিয়ে আসবে, বেচাকেনা তত বাড়তে পারে।

বাঁধন গার্মেন্টসের কর্ণধার সেলিম রেজা বললেন, গত বছর এই সময়টায় কাস্টমারের কারণে দোকানে জায়গা পাওয়া দুষ্কর ছিল, কিন্তু এবার সেই রকম ব্যস্ততা এখনো দেখা যাচ্ছে না।

“অনেকে শুধু দাম জিজ্ঞেস করছেন, কিনছেন না। আমরা ডিজাইনের নতুন কালেকশন এনেছি। শেষ মুহূর্তে হয়ত কিছুটা ভিড় বাড়তে পারে, সেই আশায় আছি।”

প্রীতি ফ্যাশনের মালিক মো. অনিক বলেন, “আগের মত বেচাবিক্রি হলে আজকে আপনার সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলার মত সময় পাওয়া যেত না, ভালোভাবে কথা বলতে পারতাম না। এখনই আমাদের ব্যবসার মূল সময়। এবার বাজার পরিস্থিতি তেমন ভালো নয়, এখনও সে পরিমাণে পাইকারি ক্রেতা আসেনি। তবে আমি আশাবাদী, আগামী শুক্রবার থেকে কাস্টমার বাড়বে এবং ব্যবসা হবে।”

পাঞ্জাবি ওয়ার্ল্ডের হৃদয় হাসান বললেন, “এখন পরিস্থিতি কিছুটা উদ্বেগজনক, তবে আমরা আশা করছি যে সামনে আরও কিছু পরিবর্তন আসবে।”

টেক্সটাইল ওয়্যান্স উইমেন্সের ব্যবস্থাপক রবিন মিয়া বলেন, দেশি-বিদেশি কাপড়ের বাজার দর গত বছরের তুলনায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি।

“ডলারের দাম বাড়ার কারণে ভারত ও চীনের কাপড়ের দাম অনেকটা বেড়েছে। এছাড়া দেশি কাপড়ের উৎপাদন খরচও বেড়েছে। তাই প্রতিটি কাপড়ের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে । কাপড়ের দাম বাড়লেও পাইকারি ক্রেতা কমে গেছে, তারা আগের মত বেশি কাপড় নিচ্ছে না।

“অন্য বছর এতদিনে পাইকারি বিক্রি প্রায় শেষ হয়ে যেত, এবার এখনও অনেকে বলছে আসবে। তবে ২০ রমজান পর্যন্ত আমাদের বেচাকেনা হবে আশা করছি।”

ইসলামপুর থেকেই পাইকারি দরে পাঞ্জাবি, থ্রিপিসসহ বিভিন্ন কাপড় নিয়ে যান পটুয়াখালীর গলাচিপার ব্যবসায়ী সোলাইমান হোসেন। এবারও এসেছেন ঈদের জন্য কাপড় কিনতে।

তিনি বলেন, “যেহেতু সামনে ঈদ তাই রমজানের শুরুতেই কিছু কাপড় কিনলে মোটামুটি ভিড় কম থাকে। তাছাড়া বিক্রির সময় তো এখন থেকেই শুরু হবে।”

কী পরিমাণ কাপড় কিনবেন জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলেন, “এ বছর একটু কম কিনতে হবে। বেচাকেনা কমে গেছে। বিক্রি হলে আবার এসে নিয়ে যাব।”