বিদেশি কর্মীদের কর ফাঁকি: তদন্ত ও তালিকার দাবি জানিয়ে আইনি নোটিশ

বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের তালিকা প্রণয়ন, তাদের সম্ভাব্য কর ফাঁকির বিষয়টি তদন্ত এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের প্রতি একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন ‘ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট’-এর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব এই নোটিশটি জনস্বার্থে রেজিস্টার্ড ডাকযোগে প্রেরণ করেন।
নোটিশটি পাঠানো হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কাছে।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, কোনো বিদেশি নাগরিককে সরকারের পূর্বানুমতি ছাড়া নিয়োগ দেওয়া বৈধ নয় এবং তাদের নির্ধারিত হারে আয়কর প্রদান বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, অনেক বিদেশি নাগরিক সরকারি অনুমতি ছাড়াই দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা, অফিস, আদালত ও অন্যান্য জায়গায় কাজ করছেন। এসব কর্মরত বিদেশি নাগরিকের সরকারি রেকর্ড না থাকায় তাদের কাছ থেকে কর আদায় সম্ভব হচ্ছে না।
এই অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশ সরকার আনুমানিক ১৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি বলা হয়েছে, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুসারে বর্তমানে প্রায় ছয় লাখ বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে কর্মরত রয়েছেন, এবং তাদের মাধ্যমে বছরে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে বিদেশে পাচার হচ্ছে।
নোটিশে আরও জানানো হয়, ২০২৩ সালের আয়কর আইনের ১১৯ ধারায় বলা হয়েছে, বিদেশি নাগরিকদের তাদের আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ হারে কর প্রদান করতে হবে। কিন্তু সরকারি অনুমতির অভাবে এবং যথাযথ নিবন্ধনের অনুপস্থিতিতে এই আইন প্রয়োগ সম্ভব হচ্ছে না।
এই সমস্যাটি নতুন নয়—২০২০ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) এ বিষয়ে একটি গবেষণা করে সরকারের জন্য ৯টি সুপারিশ করেছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এখনও পর্যন্ত এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
নোটিশদাতা ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব মনে করেন, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তায় কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
নোটিশে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে আগামী সাত দিনের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা কোনও কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে ‘ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট’ জনস্বার্থে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করবে বলে জানানো হয়েছে।