সাগরপথে আগত অভিবাসীদের আশ্রয় স্থগিত করল গ্রিস

উত্তর আফ্রিকা থেকে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে গ্রিসে পৌঁছানো অভিবাসীদের আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া প্রাথমিকভাবে তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে দেশটির সরকার। বুধবার (৯ জুলাই) গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন।
সাম্প্রতিক সময়ে লিবিয়া থেকে নৌকায় করে গ্রিসের দক্ষিণাঞ্চলের গাভদোস ও ক্রিট দ্বীপে দুই হাজারের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী পৌঁছানোর পর সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয়। গ্রিক পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে মিতসোতাকিস এই পরিস্থিতিকে ‘জরুরি’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং বলেন, “এমন পরিস্থিতি স্পষ্টতই জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি রাখে।”
তিনি জানান, এই স্থগিতাদেশ গাভদোস ও ক্রিট দ্বীপে আগত অভিবাসীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে এবং অনিয়মিতভাবে আসা অভিবাসীদের আটক করা হবে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, এ বিষয়ে একটি আইন বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হবে।
গাভদোস দ্বীপে স্থায়ী জনসংখ্যা মাত্র একশ। সেখানে কোনো অভিবাসী আবাসন সুবিধা নেই। পাশের দ্বীপ ক্রিটও আগত অভিবাসীদের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
লিবিয়া থেকে আগত অভিবাসীদের মধ্যে অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, সুদান, মিশর এবং বাংলাদেশের নাগরিক।
গ্রিক প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সরকার মানবপাচারকারীদের একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চায়— গ্রিসে যাওয়ার দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।” সম্প্রতি একটি মাছ ধরার ট্রলার ৫২০ জন অভিবাসী নিয়ে ক্রিট উপকূলে পৌঁছায়, যার যাত্রা শুরু হয়েছিল লিবিয়া থেকে। এ ছাড়া ক্রিটে একটি আটককেন্দ্র নির্মাণের কথাও ভাবছে গ্রিক সরকার। পাশাপাশি দক্ষিণ গ্রিক জলসীমায় নৌবাহিনীর জাহাজ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
হেলেনিক কোস্টগার্ড জানিয়েছে, গাভদোস উপকূলে বিপদে পড়া এক নৌকা থেকে ৬৭ জন পুরুষ অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয় এবং তাদের একটি ফ্রন্টেক্স জাহাজে করে আগিয়া গালিনি বন্দরে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে রেথিমনোতে অস্থায়ী আবাসনে নেওয়া হয় তাদের।
এরপরও থামছে না আগমন। মঙ্গলবার দুপুরে আরও একটি নৌকা থেকে সাহায্য চেয়ে উপকূলরক্ষীদের ডাকা হয়। কুয়েতি পতাকাবাহী একটি কার্গো জাহাজ তাদের উদ্ধার করে এবং কোরা স্ফাকিয়ন বন্দরে নামায়।
৭ জুলাই গাভদোস উপকূল থেকে ৩৫ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়। পাচারকারীর ভূমিকায় থাকার অভিযোগে এক মিসরীয় (১৯) এবং পরে আরও দুই সুদানি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা জানিয়েছে, লিবিয়ার তোব্রুক থেকে যাত্রা শুরু করেছিল তারা।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানায়, চলতি বছরের শুরু থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত মোট ১৯,৭৯০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী গ্রিসে পৌঁছেছে, যার মধ্যে সাত হাজার এসেছেন কেবল ক্রিট দ্বীপে।
ক্রিট দ্বীপটি গ্রিসের অন্যতম প্রধান পর্যটন গন্তব্য। তবে সাম্প্রতিক অভিবাসী প্রবাহে স্থানীয় ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ। তারা আশঙ্কা করছেন, অভিবাসীদের উপস্থিতির কারণে পর্যটকেরা তাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে পারেন।
গ্রিস জানিয়েছে, তারা লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে নিয়ন্ত্রণকারী খলিফা হাফতারের প্রশাসনের সঙ্গে অভিবাসন ইস্যুতে সহযোগিতা বাড়াতে চায়। তবে সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি প্রতিনিধি দল পূর্ব লিবিয়ায় বৈঠকে অংশ নিতে না পারায় সেই চেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়।
ইইউ ২০১৫ সাল থেকে “ইইউ ট্রাস্ট ফান্ড ফর আফ্রিকা” এর আওতায় লিবিয়াকে অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। ২০২১ পর্যন্ত মোট ৪৬ কোটি ৫০ লাখ ইউরো সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। ২০২১-২০২৭ মেয়াদে আরও ছয় কোটি ৫০ লাখ ইউরো এবং অতিরিক্ত আড়াই কোটি ইউরো বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রত্যাবাসন এবং পুনঃঅন্তর্ভুক্তিকরণে।
ইইউ জানিয়েছে, তারা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ, পাচারবিরোধী কার্যক্রম এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সহায়তার মাধ্যমে অনিয়মিত অভিবাসন রোধে কাজ করছে।