বিমান দুর্ঘটনায় গুজব ও অপসাংবাদিকতার দায়জ্ঞানহীনতা

সত্য তথ্যের অভাবে গুজব ছড়ায়, মানবিক মর্যাদা রক্ষায় ডিজিটাল সচেতনতার প্রয়োজন
গত সোমবার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় পুরো দেশ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে অসংখ্য ভুল তথ্য ও গুজব, যা পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করে তোলে। তাছাড়া নিহত ও আহতদের ছবি প্রকাশ, বিশেষ করে শিশুদের ছবি, নিষ্ঠুরভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যা মানবিক মর্যাদার পরিপন্থী।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সময়মতো সুনির্দিষ্ট তথ্য না দেওয়ার সুযোগ নিয়েছে গুজবকারীরা। সত্যি খবরের অভাবে মানুষ ভ্রান্ত তথ্য বিশ্বাস করেছে এবং আতঙ্কে পড়েছে। এ ছাড়া অনেক সংবাদমাধ্যমের কিছু পক্ষ দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রচারে উৎসাহী হয়ে পরিণতি আরো জটিল করেছে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে শিশুদের ছবি দুঃখজনক ঘটনায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কিন্তু অনলাইনে এই নীতিমালা লঙ্ঘিত হয়েছে এবং অনেকেই তা সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিনা অনুমতিতে শেয়ার করেছে, যা শোকগ্রস্ত পরিবারের প্রতি অমানবিক আচরণ হিসেবে দেখা যায়।
আজকের ১৮ কোটি ডিজিটাল নাগরিকের দেশে ডিজিটাল সহানুভূতি ও দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। সরকার, সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও নাগরিকদের মিলিত উদ্যোগে একটি কার্যকর যোগাযোগ নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন। এতে বিপর্যয়ের সময় দ্রুত, সঠিক এবং মানবিক তথ্য পরিবেশন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
সতর্কতার সঙ্গে, যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো খবর শেয়ার করা উচিত নয়। প্রতিটি ছবি ও তথ্যের পেছনে মানুষের জীবন ও সম্মান থাকে, যা রক্ষা করাই দায়িত্বশীলতার মূল ভিত্তি।
এই দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে একটি জাতীয় কৌশলগত যোগাযোগ ইউনিট গঠন করতে এবং সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষকে বিপর্যয় মোকাবেলায় প্রশিক্ষিত করতে। পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের ছবি প্রকাশের ক্ষেত্রে কঠোর নৈতিক মান বজায় রাখতে হবে।
দেশ ও জাতির সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় বিপর্যয় পরিস্থিতিতে সঠিক তথ্য পরিবেশন এবং গুজব ও অপসাংবাদিকতা প্রতিরোধ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। এই দায়বদ্ধতায় দেশের জনগণ, সরকার ও মিডিয়াসহ সবাই একযোগে কাজ করলে ভবিষ্যতে এমন অঘটন মোকাবিলা করা সহজ হবে।