মঙ্গলবার ০৮ অক্টোবর ২০২৪, আশ্বিন ২৩ ১৪৩১, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

মহিমান্বিত কুরআনের আলোর পথে এসো হে পথিক

 প্রকাশিত: ২০:৪৯, ১৫ অক্টোবর ২০২৩

মহিমান্বিত কুরআনের আলোর পথে এসো হে পথিক


এই বিশাল পৃথিবীতে বসবাসরত প্রতিটি মানুষ ুসন্দর জীবন পরিচালনায় বদ্ধপরিকর। দুনিয়া ও আখিরাতে সুন্দর ও শান্তির জীবন আনায়নে অবতীর্ণ এই আল কুরআন।যা
পৃথিবীর মহাবিস্ময়কর ও সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ আল-কুরআন। পথভ্রষ্ট মানুষদের আল্লাহর পথে পরিচালিত করার জন্য আল্লাহতায়ালা আল-কুরআন নাজিল করেছেন।

মানুষের বাস্তবিক জীবনের সব সমস্যার সমাধান রয়েছে আল-কুরআনে। যাতে মানব সন্তান আল-কুরআন পড়ে, বুঝে ও উপদেশ গ্রহণ করার মাধ্যমে বাস্তব জীবনকে সুন্দর ও সাফল্যমণ্ডিত করতে পারবে। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে নাজিলকৃত প্রথম আয়াতেই আল্লাহতায়ালা পড়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা আলাক্ব-১)। এ জন্য মানবজীবনে সাফল্য অর্জন করার জন্য কুরআন পাঠের বিকল্প কোনো গ্রন্থ পৃথিবীতে নেই।

আল-কুরআন বেশি বেশি পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সুসম্পর্ক তৈরি হয়। আল্লাহতায়ালা কুরআনে নানা ধরনের মানুষের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। একজন মানুষ যদি নিয়মিত কুরআন পাঠ করে তাহলে জানতে পারবে আল্লাহতায়ালা কোন পথ এবং কাদের ভালোবাসেন।

ফলে ওই বান্দার সঙ্গে মহান আল্লাহতায়ালার সুসম্পর্ক স্থাপন হবে এবং বান্দা সহজে আল্লাহর প্রিয় নৈকট্য অর্জন ও নেকি অর্জন করতে পারবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব থেকে একটি অক্ষর তিলাওয়াত করবে, বিনিময়ে সে একটি নেকি পাবে, আর একটি নেকির বদলা হবে দশগুণ। এ কথা বলছি না যে, আলিফ-লাম-মিম, একটি অক্ষর বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর, মিম একটি অক্ষর।’ (তিরমিজি-২৯১)।

বর্তমান সময়ে গবেষণারত গ্রন্থের মধ্যে আল-কুরআনের স্থান সবার গ্রন্থের ঊর্ধ্বে। আল-কুরআন একটি বিজ্ঞানময় কিতাব। আজ প্রযুক্তির কল্যাণে প্রতিদিন নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আবিষ্কার হচ্ছে। আজকের আধুনিক বিজ্ঞান যা নতুন আবিষ্কার করছে তা কুরআনে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে তা প্রমাণ করা হয়েছে।

এজন্য প্রিয় নবি (সা.) কে সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ট বৈজ্ঞানিক হিসাবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা মানুষদের আল-কুরআন নিয়ে গবেষণা করতে বলেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তোমার প্রতি এমন এক বরকতময় কিতাব নাজিল করেছি, যেন মানুষ তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে, আর শুধু বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা তা থেকে (কুরআন) উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সূরা সাদ : ২৯)।

বান্দা আল্লাহতায়ালার সঙ্গে কথোপকথনের একমাত্র মাধ্যম হলো কুরআন পাঠ। আল-কুরআন আল্লাহতায়ালা বাণী। যখন কোনো বান্দা কুরআন পাঠ করে তখন সে আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথন করে। এ জন্য খুবই আদব ও শ্রদ্ধার সঙ্গে কুরআন পাঠ করতে হয়। হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘আমার যখন মন চাইত আল্লাহর সঙ্গে কথা বলব, তখন কুরআন তেলাওয়াত শুরু করে দিতাম।’

মানুষ কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় আল্লাহকে ভুলে যায়। ফলে তার হৃদয়ে মরীচিকা ধরে। যখন কুরআন পাঠ করে আল্লাহর রহমতে মানুষের হৃদয় পরিষ্কার হতে থাকে। মানুষের মনে সুপ্রবৃত্তি জাগ্রত হয়। আবু মূসা আল আশ’আরি (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআন তেলাওয়াত করে তার উদাহরণ হলো লেবুর মতো তার স্বাদও ভালো আবার ঘ্রাণও ভালো।

মুমিনের উদাহরণ হলো খেজুরের মতো, তার স্বাদ ভালো কিন্তু কোনো ঘ্রাণ নেই, আর কুরআন তেলাওয়াতকারী পাপী ব্যক্তির উদাহরণ হলো ফুলের মতো ঘ্রাণ ভালো কিন্তু স্বাদ তিক্ত, আর যে কুরআন তেলাওয়াত করে না এমন হাফেজের উদাহরণ হলো মাকাল ফলের মতো যার স্বাদ তিক্ত এবং সুগন্ধ নেই।’ (বুখারি : ৭৫৬০)।

আল-কুরআন সর্বযুগের সর্বোত্তম কিতাব। হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) কুরআন পাঠকারী ও শিক্ষা প্রদানকারীকে সর্বোত্তম মানুষ হিসাবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সর্বোত্তম যে নিজে কুরআন শিখে এবং অপরকে শেখায়।’ (বুখারি)। আল-কুরআন এসেছে জীবন্ত মানুষকে আল্লাহর সঙ্গে পরিচিত করতে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ আমরা আল-কুরআনকে শুধু মৃত মানুষের কাছে নেকি পৌঁছানোর মাধ্যম বানিয়ে ফেলেছি।

মৃত ব্যক্তির চার দিন, দশ দিন কিংবা চল্লিশ দিনের দিন টাকা দিয়ে ভাড়া করে আল-কুরআন খতম করানো হয়। তাদের ধারণা আল-কুরআন শুধু মানুষ মারা গেলে পড়া লাগবে। অথচ মহান আল্লাহতায়ালা আল-কুরআনকে মানবজাতির পথপ্রদর্শক হিসাবে নাজিল করেছেন।

আল-কুরআন দুনিয়া ও আখিরাত জীবনের সফলতার পথ দেখায়। তাই আমরা নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করব। কুরআনের অর্থ ও ভাব অনুধাবন করব এবং কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমল করব। যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে অথচ সে অনুযায়ী আমল করে না, তাদের জন্য কুরআন আল্লাহতায়ালার দরবারে শত্রু হয়ে দাঁড়াবে।

কুরআনে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা রয়েছে, তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করব। পবিত্র কুরআন পাঠকারী ব্যক্তিকে আল্লাহতায়ালা দুনিয়ায় সম্মান বৃদ্ধি করে দেন এবং আখেরাতে পুরস্কৃত করবেন। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন পড়া, বোঝা এবং সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Online News Portal 24