ব্লাড ক্যানসার মানেই মৃত্যু নয়

ব্লাড ক্যানসার মানেই শেষ নয়, এটা নতুন শুরু হতে পারে!
বিশ্বজুড়ে প্রবীণদের মধ্যে যেসব ধরনের ক্যানসার দেখা যায়, তার মধ্যে প্রায় ৬.৫ থেকে ১০ শতাংশই হলো ব্লাড ক্যানসার। শিশুদের ক্ষেত্রে এই হার আরও বেশি—প্রায় ২৫ শতাংশ। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত এক দশকে ব্লাড ক্যানসারের প্রকোপ ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
কী এই ব্লাড ক্যানসার?
রক্তে প্রধানত তিন ধরনের কণিকা থাকে—লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা ও অণুচক্রিকা। যখন অস্থিমজ্জায় থাকা স্টেমসেলে (মাদার সেল) মিউটেশন বা অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে, তখন সেখান থেকে অপরিপক্ব কোষ বা ক্যানসার কোষ তৈরি হয়। এই কোষগুলো অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায় এবং অস্থিমজ্জায় স্বাভাবিক রক্তকণিকার কাজকে ব্যাহত করে। এই অবস্থাকেই বলা হয় ব্লাড ক্যানসার। এটি সাধারণত তিন ধরনের হয়—লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা এবং মায়েলোমা।
সম্ভাব্য কারণ ও উপসর্গ
ব্লাড ক্যানসারের নির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে রেডিয়েশন, কিছু শিল্প রাসায়নিক, কীটনাশক, ভেজাল খাবার, কেমোথেরাপির ওষুধ ও কিছু জেনেটিক অসুখ এর ঝুঁকি বাড়ায়।
ব্লাড ক্যানসারের সাধারণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে:
-
রক্তস্বল্পতা, দুর্বলতা, অরুচি, বুক ধড়ফড়, ফ্যাকাশে ভাব
-
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়ায় ঘন ঘন বা দীর্ঘমেয়াদি জ্বর
-
রক্তক্ষরণ, দাঁত, প্রস্রাব বা কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া, অতিরিক্ত মাসিক
-
গ্লান্ড ফুলে যাওয়া, লিভার-প্লীহা বড় হওয়া
-
হাড়ে ব্যথা
কীভাবে শনাক্ত করা যায়?
উপসর্গ দেখা দিলে শুরুতেই রক্তের পূর্ণাঙ্গ সিবিসি পরীক্ষা করা উচিত। এরপর ব্লাড ফিল্ম, বোনম্যারো পরীক্ষা, ফ্লোসাইটোমেট্রি ও সাইটোজেনেটিক পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় হয়। কিছু ক্ষেত্রে গ্লান্ড বা টিস্যু বায়োপসি এবং ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রির প্রয়োজন হয়।
ব্লাড ক্যানসার মানেই কি মৃত্যু?
আগে যেখানে ব্লাড ক্যানসার মানেই নিশ্চিত মৃত্যু ধরে নেওয়া হতো, এখন তা আর সত্য নয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে অগ্রগতির ফলে অনেক রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। দেশে এখন ব্লাড ক্যানসারের কার্যকর ওষুধ তৈরি হচ্ছে, যা বিদেশেও রপ্তানি হয়।
বর্তমানে মলিকুলার টার্গেটেড থেরাপি ও ইমিউনোথেরাপির মতো উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে, যা কিছু ব্লাড ক্যানসার পুরোপুরি ভালো করার ক্ষেত্রে কার্যকর। তবে চিকিৎসার ধরন ও সাফল্য নির্ভর করে ক্যানসারের ধরন ও রোগীর অবস্থার ওপর। অনেক ক্ষেত্রেই অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন (বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট) প্রয়োজন হয়।
লেখক: ডা. মো. কামরুজ্জামান
সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ