সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫, আষাঢ় ২২ ১৪৩২, ১১ মুহররম ১৪৪৭

ব্রেকিং

সংস্কার ছাড়া যেনতেন নির্বাচন চায় না জামায়াত: শফিকুর রহমান আশরাফুল, সাকিবদের পর এবার নতুনদের চিনছে শ্রীলঙ্কা বিচার ও সংস্কারকে নির্বাচনের মুখোমুখি করা যাবে না: সাকি সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থায়(পিআর) ‘ভবিষ্যৎ বিভক্তি’র শঙ্কা তারেক রহমানের জুলাই বিপ্লব নিয়ে কটূক্তি করায় কুষ্টিয়ায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ক্লোজড কলেজ প্যাডে ছাত্রদলের প্রচারণা? অধ্যক্ষের ব্যাখ্যা ঘিরে বিতর্ক মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের সংঘাত বিস্তার: বিশ্লেষণ কলম্বিয়ায় পাহাড়ধসে মৃত্যু ১৬, নিখোঁজ অন্তত ৮ “ত্রাণ নিতে এলে গুলি করতাম”—গাজার ঘটনায় মুখ খুললেন ইসরায়েলি সেনারা তেহরানে ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার চলছেই, মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ৪৫০ ইরানে বাংলাদেশিদের সহায়তায় হটলাইন চালু উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভ: সিলেটে তিনজন কারাগারে ইসরায়েলের টার্গেটে ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার ভবন লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক ১৩ জুন তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন: ফখরুল রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হবে কাঁচের মতো স্বচ্ছ ঘর: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাচনের ঘোষিত সময় মাথায় রেখে যথাসময়ে রোডম্যাপ দেবে ইসি: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ছাত্রদল নেতা নাছির উদ্দিন মণিপুরে আবার উত্তেজনা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের চাপে ঢাকার ৪ থানায় সক্রিয় অর্ধশতাধিক অপরাধী দল জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে: প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি: সালাহউদ্দিন আহমদ জুলাই সনদ–ঘোষণাপত্র হলে ঘোষিত সময়ে নির্বাচনে আপত্তি নেই: এনসিপি ২৫ কিলোমিটার যানজট, ২৪ ঘণ্টায় পারাপার ৬৪ হাজার যানবাহন বান্দরবানের রুমা ও থানচি ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আংশিকভাবে প্রত্যাহার গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো, জাতিসংঘ নিরাপত্তা গরম মসলার বাজার শীতল: ক্রেতা কমে যাচ্ছে, দাম কিছুটা স্থিতিশীল ঈদে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দই-মিষ্টি মজুত, রংপুরে হিমাগারে অভিযান ও দুই লাখ টাকা জরিমানা বান্দরবানের লামায় পাহাড় ধসের শঙ্কায় ৬০ রিসোর্ট বন্ধ নির্বাচন নিয়ে তরুণদের প্রতি অসত্য অভিযোগ ও বাস্তবতা ভারতের মুসলমানদের কেন বারবার দেশপ্রেমের প্রমাণ দিতে হয় সংবিধান পরিবর্তন ছাড়া ফ্যাসিবাদ বিলোপ সম্ভব নয়: এনসিপি মুখ্য সমন্বয়ক একুশের বন্ধুত্বে আগামীর পথচলা: বার্ষিক সম্মেলনে ২১তম বিসিএস প্রশাসন ফোরাম বিজিএমইএ`র নতুন নেতৃত্বে আসছেন বাবু, নিরঙ্কুশ জয়ের ইঙ্গিত জিলহজ মাসের আমল ও কোরবানির তাৎপর্য চট্টগ্রামে নারীকে লাথির ঘটনায় ভাইরাল আকাশ চৌধুরী বহিষ্কৃত, জামায়াতের বিবৃতি সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেই, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিল পবিস শ্রমিকরা আনচেলত্তির স্বপ্ন - রিয়াল মাদ্রিদের মতো করে খেলাবেন ব্রাজিলকে ডিমের দাম এখনো চড়া, ডজন ১৩০–১৪০ টাকায় বিক্রি বৈরী আবহাওয়ার কারণে নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপের সঙ্গে সারাদেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ হারের পর লিটনের মনোভাব - এখনো দুই ম্যাচ বাকি কাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব জুয়েলারি দোকান বন্ধ ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্র চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করবে ডিএনএ টেস্ট করে নামফলক ও মর্যাদা চায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা বেতন না পেয়ে ডাকাতি, জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ারসহ তিনজন আটক “বাংলাদেশে কৌশলগত স্বার্থ নেই দক্ষিণ কোরিয়ার”—রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক “শাপলার হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই”—হেফাজতের বিবৃতি মির্জা আব্বাস: “করিডর আর স্টারলিংক আনা হচ্ছে আরাকান আর্মির জন্য” জিলহজ মাসের চাঁদ দেখে যে দোয়া পড়বেন নির্বাচনের আগে যতটুকু দরকার, ততটুকুই সংস্কার করতে হবে: মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ‘চিন্তার স্বাধীনতাও হারাচ্ছি?’— নারী কমিশন বিতর্কে গীতিআরার উদ্বেগ ইউক্রেনে রাশিয়ার টানা হামলায় নিহত ১২, কঠোর চাপের আহ্বান জানালেন জেলেনস্কি সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন – তিনটি কঠিন দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট আমরা জুলাই অভ্যুত্থান ক্ষমতার পালাবদল নয়, এটি মৌলিক সংস্কার: নাহিদ হলুদ সাংবাদিকতা’ বিরোধী স্লোগানে উত্তাল শিক্ষক মিছিল ভারতের নিষেধাজ্ঞায় আখাউড়া বন্দর দিয়ে রপ্তানি কমেছে ৪০% বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি চলছে, দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি জাতীয় স্বার্থে অভিমান ভুলে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান : জামায়াত আমির আন্দোলনের পর অবশেষে নিয়োগ পেলেন ৪৩তম বিসিএসের বাদ পড়া ১৬২ জন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিতে ইসির সামনে এনসিপির বিক্ষোভ কাল বাংলাদেশে স্টারলিংকের যাত্রা, স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের নতুন যুগ শুরু নরওয়ের দৃঢ় সমর্থন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিগত সরকারের সময় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত, এমন অবস্থা ছিল যে খতিবকেও পালাতে হয়েছিল: বাণিজ্য উপদেষ্টা গায়ের জোরে নগর ভবন দখল করে আন্দোলন চালাচ্ছে বিএনপি আবারও রাজপথে নামার ইঙ্গিত আসিফের, সতর্ক করলেন হাসনাত গোপন অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন স্থগিত, ২০ মে আলোচনায় বসবে ঐক্য পরিষদ ভারতের আমদানি নিষেধাজ্ঞা সীমান্ত বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে ভারতের নতুন সিদ্ধান্তে উত্তর-পূর্বাঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশি ভোগ্যপণ্য আমদানি বন্ধ গত ৯ মাসে জুলাই-যোদ্ধাদের ওপর ৩৮টি হামলা জবি’র ৪ দফা দাবি মেনে নেওয়ায় আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা ডিবি থেকে মুক্তির পর আন্দোলনে উল্লাস জবি শিক্ষার্থীর গাজা দখলে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করলেন ট্রাম্প শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডে বিচার নিশ্চিতের অঙ্গীকার উপদেষ্টা আসিফের সোনার দাম ভরিতে কমল ৩ হাজার ৪৫২ টাকা, নতুন দর কার্যকর শুক্রবার থেকে ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু: নিরাপত্তা নিশ্চিতে বড় পদক্ষেপ প্রশাসনের আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধে ভারতের উদ্বেগ শ্রীনগরজুড়ে বিস্ফোরণ, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওমর আব্দুল্লাহর উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত: আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ ‘চলবে’, শনিবার গণজমায়েত ড্রোন যুদ্ধ: ভারত-পাকিস্তান বিরোধের নতুন অধ্যায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সরকার গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আ.লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়বেন না আন্দোলনকারীরা ‘আপ বাংলাদেশ’–এর আত্মপ্রকাশ পূর্বঘোষণা ছাড়া ভারত সফরে সৌদি প্রতিমন্ত্রী, পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনায় কূটনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে মার্চের হুঁশিয়ারি নাহিদ ইসলামের দেশীয় ওষুধ কোম্পানি রেনাটাকে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে আইএফসি তারেক রহমান: সরকার হয়তো স্বৈরাচারের দোসরদের দেশত্যাগে সহায়তা করছে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারতের নির্দেশে ৪ বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল ইউটিউবে বন্ধ

ইসলাম

টিপ: সাংস্কৃতিক কেলেঙ্কারির ছবি

মাওলানা শরীফ মুহাম্মাদ

 আপডেট: ২২:৩২, ২৭ মে ২০২২

টিপ: সাংস্কৃতিক কেলেঙ্কারির ছবি

ঘটনাটির সূচনা ২ এপ্রিল সকালে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ব্যস্ত রাজপথে। অভিযোগকারিণীর একতরফা বয়ানের ভাষা ছিল; রাস্তায় দাঁড়ানো অবস্থায় হুট করে পাশ থেকে এসে একজন দাঁড়িওয়ালা বয়স্ক লোক তাকে বলল- ‘তুই টিপ পরছোস কেন?’ শেরেবাংলানগর থানায় মহিলা যে জিডিটি করেছেন সেখানেও তার ভাষা ও ভাষ্য এমনই ছিল। এমনকি গণমাধ্যমগুলোর শিরোনাম কিংবা সূচনা বিবরণীতেও (ইন্ট্রো) এজাতীয় শব্দই এসেছে। সঙ্গে এ-ও বলা হয়েছে, অভিযুক্ত লোকটি বাইক চালাচ্ছিলেন এবং তার গায়ে পুলিশের পোশাক ছিল।

অভিযোগকারী নারীর কপালে টিপ দেওয়া ছিল। হিন্দুধর্মের অনুসারী ওই নারীর নাম ড. লতা সমাদ্দার। তেজগাঁও কলেজে শিক্ষকতা করেন। ব্যস, সাধারণ বিবরণ ও আয়তনে অভিযোগ কিংবা অভিযুক্ত ঘটনা এতটুকুই ছিল। কিন্তু এক দিনের মধ্যেই অভিযুক্ত ঘটনার আয়তন ও ধাক্কা অনেকদূর চলে যায় এবং এটি সাম্প্রদায়িক নিপীড়নমূলক ও সাংস্কৃতিক অভ্যুত্থানগন্ধী ‘মহা নাটকে’ পরিণত হয়!

২ এপ্রিল দিন ও রাতের মধ্যে বিনোদন ও মিডিয়া অঙ্গনের কিছু হিন্দু ও কিছু ছদ্মবেশী প্রগতিশীল ‘মুসলিম’, কিছু নারী-কিছু পুরুষ নিজেদের কপালে টিপ ও চোখে কাজল লাগিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছবি সংযুক্ত করতে থাকে। সঙ্গে টিপ ব্যবহারের ‘ন্যায্যতা’, কেন টিপ ব্যবহার করার কারণে এমন ‘পীড়ন’ চালানো হবে- এজাতীয় জ্বালাময়ী প্রতিবাদের বক্তব্যও লাগিয়ে দেওয়া হয়।

৩ এপ্রিল সকালের মধ্যেই চরিত্র-চেনা অনলাইন পোর্টালগুলোতে এ খবরটি খুবই ক্ষোভ ও বেদনামাখা আবেদনে প্রকাশ করা হয়। ৩ এপ্রিল ছিল এদেশে রমযানুল মুবারকের প্রথম দিন। জাতীয় সংসদে টিভি-সিনেমার এক নায়িকা সাংসদ রমযানের সম্মানের খাতিরেও মাথায় কোনো চাদর-হিজাব না জড়িয়ে এই ‘টিপ-অভিযোগ’ নিয়ে একটি টকটকে বক্তব্য দিয়ে বসেন! ‘দেশের কোন্ আইনে আছে টিপ পরা যাবে না!’

 

দুই.

একটি টিপ অথবা টিপ-কেলেঙ্কারি নিয়ে উত্তেজনা বাড়তে থাকে সামাজিক মাধ্যম ও প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোতে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় নতুন প্রতিক্রিয়া, সতর্কতা, অনুসন্ধানের খবর প্রচার হতে থাকে অস্বাভাবিকভাবে। যেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ  ও অতি ভয়ংকর কোনো ঘটনার ব্রেকিং নিউজ প্রচার করা হচ্ছে। লতা সমাদ্দার বর্ণিত ঘটনাটি সত্য না মিথ্যা তখনও যাচাই করে দেখার প্রশ্নটি তোলা হয় না। অধিকার ও সংস্কৃতি হারিয়ে  ফেলার এক সর্বপ্লাবী মাতম চলতে থাকে। ক্ষমতাদর্পী সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক শিবিরের পাশাপাশি প্রভাবশালী নারী মন্ত্রী পর্যন্ত তার কপালে টিপ লাগানো ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে বাতাসে চাপ তৈরি করেন। ফলে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করে শাস্তি দেওয়ার দাবি জোরালো হতে থাকে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে নারীদের মাঝে টিপের সাংস্কৃতিক ব্যবহারের যৌক্তিকতাসহ কল্পিত বাঙ্গালী সংস্কৃতি এবং হিন্দু ধর্মজাত বিভিন্ন আচরণ ও প্রতীকের স্বীকৃতির আলোচনা সামনে আসতে থাকে। নারী নিপীড়ন ও সংখ্যালঘু নারীর প্রতি অসদাচরণের বহু কাল্পনিক অভিযোগ-দোষারোপও চলতে থাকে। সবচেয়ে বেশি হতে থাকে ধর্মপ্রাণ দাড়িওয়ালা মানুষদের গালমন্দ!

দু-তিন দিনের মাথায় অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল তারেককে ধরা হয় এবং তাকে কেন্দ্র করেও কয়েক রকম বক্তব্য ও পরিস্থিতি তৈরি হয়। পুলিশের নিজস্ব তদন্ত কমিটি শেষ পর্যন্ত জানায়, অভিযোগকারি নারীর সঙ্গে অভিযুক্ত দাড়িওয়ালা পুলিশ কনস্টেবলের একটি বাদানুবাদের ঘটনা ঘটেছিল এবং সেই বাগবিতণ্ডাটা শুরু করেছিল  সেই নারী নিজেই। আর মূল অভিযোগের বিষয় ছিল যে টিপ, সেই টিপ সম্পর্কে আদৌ কোনো বিতর্ক হয়েছে কি না, পুলিশের তদন্ত দল সেরকম তথ্যের সত্যতা নিয়ে কিছু বলতেই পারেনি।

এরই মধ্যে একবার পুলিশের একজন বড় কর্তাকে উদ্ধৃত করে বেশিরভাগ গণমাধ্যমে ‘টিপের’ ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে ধরনের একটি বক্তব্য সামনে এলেও মূল অভিযোগ ও মহিলাকে টিপ পরার কারণে গালমন্দ ও হেনস্তার ঘটনার কোনো সত্যতা তুলে ধরতে পারেনি কেউ। ঢাকা মেইল নামের একটি পোর্টাল প্রতিবেদন প্রকাশ করে- টিপ নিয়ে হেনস্তার অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। কিন্তু ততক্ষণে টিপ-অভিযোগের বিষয়টিকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়ে গেছে যে, নারীর এই মিথ্যা অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে মিডিয়া ও রাজনীতিকদের কেউ আর কোনো পাল্টা কথা বলেনি। অথচ এই টিপ-কেলেঙ্কারি অভিযোগ ও মিথ্যা নাটকীয়তার কারণে অভিযুক্ত কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং বিভাগীয় শাস্তির মুখোমুখি করা হয়। সিলেটের একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ‘টিপ-নাটকীয়তা’ নিয়ে একটি মন্তব্যের কারণে প্রথমে ক্লোজড ও পরে বদলি করে রংপুরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। স্যডিস্ট হিসেবে আখ্যা পাওয়া এক সাবেক বিচারক সংবাদপত্রে ‘ধর্মান্ধ পুলিশ সদস্যদের’ পুলিশ থেকে উচ্ছেদ করার দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেয়, কলামও লেখে। এরকম কলাম, বক্তব্য ও অভিযোগ আরও কিছু চিহ্নিত সুশীল-সাংবাদিক ও রাজনীতিকের আলোচনায় উঠে আসে।

 

তিন.

টিপের এই মিথ্যা অভিযোগটিকে নিয়ে (পরবর্তী এক সপ্তাহে  মিথ্যা অভিযোগের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে) এমনভাবে হইচই শুরু করা হয়েছিল যে, এদেশে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে হিজাব পরতে বাধা দেওয়া ও অপমান করার বিভিন্ন ঘটনা একদমই চাপা দিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। এমনকি অনেক জায়গায়, হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আচরণে হিজাব ও ইসলামী বিশ্বাস ও জীবনযাপন বিষয়ে নেতিবাচক আচরণের যেসব দুঃখজনক ঘটনা প্রকাশ হয়ে গিয়েছিল, সেগুলো নিয়েও কোনো বিশেষ আলোচনা গণমাধ্যমগুলো সামনে আসতে দেয়নি।

টিপ-নাটকীয়তার সময় প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল পোশাক ও বেশভূষার কারণে নারীকে হেনস্তা করা এবং নারীর প্রতি বৈষম্য। অথচ এই পুরো প্রচার-অভিযোগ ও বিতর্ককালটিতে গণমাধ্যম ও রাজনীতিকদের মুখের ভাষায় হিজাবের/বোরকার কারণে নারীর প্রতি যে বৈষম্যমূলক ও অপমানমূলক আচরণ করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে- সেসব নিয়ে কোনো কথাই বলতে শোনা যায়নি। উল্টো শুধুমাত্র সংখ্যালঘু নারী ও সংখ্যালঘুদের ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক ইস্যুতে ‘পীড়ন-হেনস্তা’র প্রসঙ্গ নিয়ে পরিস্থিতি  ফেনিয়ে তোলা হয়। অবশ্য সামাজিক মাধ্যমে দেখা গেছে, বহুসংখ্যক ইতিবাচক মানুষের ভূমিকা ছিল এসব নাটকীয়তা বা মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা এসব পরিস্থিতি ও প্রচারের উদ্দেশ্যপ্রবণতা ও বাস্তব সত্যটির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তবে মূলধারার গণমাধ্যমগুলো তাদের এসব ইতিবাচক বক্তব্যের দিকে মনোযোগ দিতে চায়নি।

 

চার.

‘টিপ-মিথ্যাচার’ বা কল্পকাহিনীর সূচনাটা হয়েছে কলেজ শিক্ষিকা লতা সমাদ্দারের মাধ্যমে। কিন্তু এই কাহিনীকে একটি দুষ্ট অভ্যুত্থানে পরিণত করার চেষ্টা দেখা গেছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে। এই কেলেঙ্কারির ভেতর দিয়ে প্রথমেই একজন ধর্মপ্রাণ দাড়িওয়ালা পুলিশ সদস্যকে খুব বিশ্রীভাবে তুলে ধরা হয়েছে এবং তাকে কেন্দ্র করে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর মুসলিম ধর্মপ্রাণ সদস্যদের খাটো ও অপমান করে কোণঠাসা করার একটা পর্যায় ও প্রয়াসকে অনেক তুঙ্গে নেওয়া হয়েছে। মানিকের মতো অভদ্রলোক ‘ধর্মান্ধ পুলিশদেরকে’ বাহিনী থেকে উচ্ছেদের ডাক দিয়েছে!

দ্বিতীয় যে ব্যাপারটি হয়েছে সেটি হল, সামগ্রিকভাবে খুব তুচ্ছ এবং পরবতীর্তে মিথ্যা সাব্যস্ত একটি অজুহাতে (টিপের জন্য গালমন্দ করা) পুরো মুসলিম সমাজ এবং বাংলাদেশের ভেতরের অসাম্প্রদায়িক সহাবস্থান ও শান্তিপূর্ণ চিত্রকে বাজেভাবে ‘দাগ’ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। হিন্দুপ্রধান ভারতে মুসলিম নাগরিক এবং বিশেষভাবে নারীদের হিজাবের জন্য নাজেহাল করার বর্বর ঘটনাগুলো নিয়ে যখন মিডিয়াগুলো তোলপাড়, তখন এদেশে একজন হিন্দু নারীর একটি ‘টিপ’ নিয়ে ‘মহা সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি’র বানোয়াট ছবি ও ‘প্রমাণ’ উপহার দেওয়ার পরিকল্পিত চেষ্টা করা হয়েছে বলে অনেকেই পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেছেন। ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, এই টিপ-কেলেঙ্কারির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ‘হিন্দু নারী নিগ্রহের’ বানোয়াট দৃশ্য ধারণা তৈরির ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের সহজ রূপায়ন হয়েছে।

তৃতীয়ত এদেশে নারীদের জীবন যাপন ও পোশাক-প্রতীকের ক্ষেত্রে হিন্দু সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত করার একটি মহড়া দেওয়ার কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। টিপ-সিঁদুর সাধারণত হিন্দু মেয়েরা তাদের কপালে পরে থাকে। ধমীর্য় জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো কোনো মুসলিম নারীর কপালেও অনেকসময় টিপ দেখা যায়। তবে সেটা নিতান্তই হিন্দুনারীদের বেশভূষা ও সংস্কৃতির অবুঝ অনুকরণের ঘটনা। কিন্তু মিথ্যা টিপ-কেলেঙ্কারি চলাকালে বাঙালি যে কোনো নারীর জন্য (মুসলিম-হিন্দু যাই হোক) টিপ পরাটা তার সাংস্কৃতিক অধিকার- এমন একটি আওয়াজ জোরদার করা হয়েছে। এমনকি এদেশের চিহ্নিত ছদ্মবেশী প্রগতিশীলদের একটি অংশকে ওড়না-হিজাবের পরিবর্তে টিপ পরা যে এদেশের জন্য বেশি প্রাসঙ্গিক- সেই ধরনের তুলনামূলক প্রচার-প্রচারণাতেও অংশ নিতে দেখা গেছে।

এছাড়াও আরেকটি ব্যাপার এই টিপ-অভ্যুত্থানের মিথ্যা চর্চার সময় প্রতিষ্ঠা দেওয়ার চেষ্টা লক্ষ করা গেছে, সেটি হল, গত কয়েক বছরে অন্য বেশ কয়েকটি ঘটনার মতো এখানেও হিন্দু নারী-পুরুষ নাগরিকদের অধিকার, সম্মান, স্পর্শকাতরতাকে অনেক বেশি পরিমাণে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যেন ঘনবসতিপূর্ণ এ দেশটিকে নানামাত্রিক বিবাদ-কলহের মধ্যেও কোনো হিন্দুর গায়ে কেউ কোনো আঁচড় দিতেও সাহস না পায়- সেরকম একটি ‘হিন্দু-প্রাধান্যের’ পাটাতন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মিডিয়া, রাজনীতি, প্রশাসনের লোকজন এবং সুশীল-সেলিব্রিটিদের অব্যাহত একতরফা ভূমিকায় অনেকেই সেটি মনে করছেন। বিপরীতদিকে অভিযুক্ত বেশভূষায় ধার্মিক মুসলিম পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল তারেককে ‘পলাতক অপরাধী’র মতো হাজির করার মহড়া দেখা গেছে। তার ‘দোষ’-এর সত্যতা না পাওয়া যাওয়া সত্ত্বেও তাকে বরখাস্তের চাপের মধ্যে রাখা হয়েছে। অনেকটা প্রকাশ্যেই এ ব্যাপারটা দেখানো হয়েছে যে, অভিযোগ দায়েরকারী নারী মিথ্যাচার করে টিপ নিয়ে টিজ করার কথা বলে দেশে ‘সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হিন্দু প্রাধান্য’ তৈরির চেষ্টা করলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। কিন্তু মূল অভিযোগের ব্যাপারে ‘দোষ’ পাওয়া না গেলেও উল্টোদিক থেকে বাইক চালানো এবং হিন্দু নারীর গায়ে-পড়া ঝগড়ায় উত্তর দিয়ে ‘বাদানুবাদে’ লিপ্ত হওয়ার দুঃসাহস দেখানোর কারণে তাকে বরখাস্ত হয়ে পড়ে থাকতে হবে!

 

পাঁচ.

টিপ-কেলেঙ্কারির প্রকাশ ৩ এপ্রিল। এর তিন-চার দিনের মধ্যেই আরো দুটি ‘সাম্প্রদায়িক মজলুম কার্ড’ ও সামাজিক ইস্যু সামনে চলে আসে। পরে সেগুলো গণমাধ্যমে জায়গা করে নেয়। এর একটি হচ্ছে, নওগাঁর মহাদেবপুরে একটি স্কুলে এক হিন্দু শিক্ষিকা তার স্কুলের বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে হিজাব পরার কারণে (কারো কারো মতে স্কুলড্রেস না পরার কারণে) প্রহার করেছেন। এটা নিয়ে তুমুল তোলপাড়ের মধ্যেই ঢাকার সুশীল মহল ও হিজাব না-পছন্দ প্রভাবশালী মিডিয়া ওই শিক্ষিকার পক্ষ হয়ে উপর্যুপরি বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করতে থাকে। স্থানীয় অভিযোগকারীদের মধ্যে ভয়ভীতি ছড়িয়ে দিয়ে পরিস্থিতি হিজাব থেকে সরিয়ে স্কুলড্রেসের দিকে নিয়ে যায় এবং ওই শিক্ষিকার পক্ষে প্রশাসনকে দাঁড়াতে ‘বাধ্য’ করে। শেষ পর্যন্ত এটি নিয়ে ‘তদন্ত’ ও ধরপাকড়ের বিভিন্ন পর্যায় চলছে।

আরেকটি ঘটনা মুন্সিগঞ্জের এক স্কুলের হিন্দু শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল তার ক্লাসে ছাত্রদের সঙ্গে বিজ্ঞান ও ধর্ম বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ইসলাম-অবমাননাকর উক্তি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠায় মামলা-পরবর্তী গ্রেফতার হয়ে তাকে কারাগারে যেতে হয়। কিন্তু টিপ-কেলেঙ্কারির পর এই হৃদয় মণ্ডল ইস্যুটিকেও সামনে এনে দেশের পরিচিত কয়েকটি সুশীল মুখ এবং একশ্রেণির গণমাধ্যম অব্যাহত প্রচার চালাতে থাকে। এর একপর্যায়ে সরকারের কায়েকজন মন্ত্রী তার পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করেন এবং দু’দিনের মধ্যে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।

এখানে দুটি জিনিস ছিল চোখে পড়ার মতো :

১. টিপ-কেলেঙ্কারি, নওগাঁর আমোদিনী পাল, হৃদয় মণ্ডল পরিস্থিতি- তিনজনই বিভিন্ন কলেজ ও স্কুলের হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষক-শিক্ষিকা। ঢাকা শহর, কাছের মুন্সিগঞ্জ, দূরের নওগাঁ থেকে এই তিনজনেরই বিভিন্ন উক্তি আচরণে ইসলাম-মুসলিম বিদ্বেষের ঘটনা/অভিযোগ সামনে এসেছে। এর আগেও এজাতীয় আরো কিছু ঘটনা ইস্যু হয়েছিল। মাস দেড়েকের মধ্যে সিলেট-সুনামগঞ্জে হিজাব নিয়ে হিন্দু শিক্ষকের বাজে আচরণের খবর গণমাধ্যমে এসেছে! নারায়ণগঞ্জে কয়েক বছর আগে ‘ইসলাম অবমাননার কারণে’ এক হিন্দু স্কুল শিক্ষককে কান ধরে ওঠবস করতে হয়েছিল। পরে সেটি নিয়েও ‘উল্টো আন্দোলন’ হয়েছিল দেশে। এতে করে দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্কুল-কলেজের একশ্রেণির হিন্দু শিক্ষক-শিক্ষিকার বিরুদ্ধে হিজাবসহ ইসলামী বিভিন্ন ইস্যুতে বিদ্বেষী উক্তি বা ভূমিকা রাখার অভিযোগ উঠছে। সহজ ও দরকারি প্রশ্ন হচ্ছে, এসব অভিযোগের সবগুলোই কি মিথ্যা বা বানানো? নাকি এদেশে হিন্দু-শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশের হিন্দুত্ববাদী বাতাস ভর করেছে? এবং প্রতিবেশী দেশের জোর, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে সখ্য ও মিডিয়ার একচেটিয়া সহানুভূতিশীল সপক্ষ প্রচার তাদেরকে বে-হিসেবি করে তুলছে?

২. যে ব্যাপারটি যে কোনো সচেতন মানুষের চোখকে অত্যন্ত বেদনাদায়কভাবে বিদ্ধ করেছে, এসব স্পর্শকাতর ইস্যু (যার একদিকে ইসলাম অথবা ধার্মিক মুসলিম, আরেকদিকে হিন্দু শিক্ষক-শিক্ষিকা কিংবা অন্য কোনো পেশার হিন্দু নাগরিক) সামনে এলেই চোখ বন্ধ করে এদেশের প্রচারিত দেশি-বিদেশি প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোর বড় অংশটিই হিন্দু নাগরিকদের প্রতি পক্ষপাতমূলক সমর্থন দিয়ে যায়। কারো কারো মতে, এদেশের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম গত দুই যুগে পাল্লা দিয়ে এই উপস্থাপনাগত পক্ষপাত বা বৈষম্যটা করে আসছে। এটা শুধু ইসলাম অবমাননাকারী হিন্দু শিক্ষকদের বেলায় নয়, বরং হিন্দু বংশোদ্ভূত ইসলামবিদ্বেষী ব্লগার কিংবা ফেসবুকে অপপ্রচারকারীর পক্ষেও এসব গণমাধ্যম ‘পোশাক খুলে’ দাঁড়িয়ে যায় এবং একদিনেই অনেকবার অনেকরকম প্রচারের ডালা তারা মেলে ধরে। এদের প্রচারের ঘটনাগুলিও ঘটে প্রকাশ্যে এবং বলয়বদ্ধভাবে।

টিপ-কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত পুলিশ-সদস্যের বিরুদ্ধে এসব গণমাধ্যম অনেকরকম ‘প্রচারণা’ করেছে, কিন্তু যখনই তদন্ত রিপোর্টে একথা সামনে এল- টিপ নিয়ে বাগবিতণ্ডার সত্যতা পাওয়া যায়নি; অন্য বিষয়ে ঝগড়া হয়েছে এবং ঝগড়াটা শুরু করেছে হিন্দু শিক্ষিকা নিজে, তখন থেকেই এসব গণমাধ্যম ‘টিপ’ নিয়ে এ-সত্যগুলো আর তুলে ধরছে না। ওই শিক্ষিকার মিথ্যা অভিযোগ ও সেই অভিযোগের ভিত্তিতে দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ও ঝড় তৈরির জন্য তার শাস্তি কিংবা জবাবদিহিতার প্রশ্ন নিয়ে কোনো কথাও বলছে না। এটা একদিক থেকে আশ্চর্যের ব্যাপার! আরেকদিক থেকে এদেশের প্রভাবশালী গণমাধ্যমের এই ‘বিবস্ত্র চেহারা’ সাধারণ মানুষের কাছে আগে থেকেই উন্মোচিত।

 

ছয়.

টিপ-কেলেঙ্কারির প্রকাশ ছিল রমযানের প্রথম দিন (৩ এপ্রিল), আজ এ লেখাটি যখন তৈরি হচ্ছে, ১২ দিন পার হয়েছে। কেউ কেউ এখন গোটা টিপ-দৃশ্য এবং এর আগে-পরের ঘটনাবলি দেখে বলছেন, লতা সমাদ্দারের টিপ নিয়ে মিথ্যা কল্পকাহিনী এবং অল্প সময়ের মধ্যে নারী-পুরুষ ও এমপি-মিনিস্টারের তার পক্ষে নেমে যাওয়া, মিডিয়াগুলোর একসুরে হা-হুতাশ ও মাতম-চিৎকার দেখে এটা অনুমান করা যায়  যে, বাংলা নববর্ষকে সামনে রেখে রমযান মাসে এটি ছিল একটি বহুমুখী সাংস্কৃতিক অভ্যুত্থান প্রয়াস। হিন্দু পোশাক, টিপ-সিঁদুর, ধূতি-মঙ্গলকে এদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর কাছে আকর্ষণীয়/আদরণীয় করে তোলার একটা ‘মজলুমি কসরত’।

টিপের ঘটনাটি ছিল মুসলিম সমাজে একটি ভুল সংস্কৃতির দরজা খোলা এবং সাম্প্রদায়িক নিগ্রহ ও হিন্দু নারী হেনস্তার ‘দোষ-দায়’ বর্তানোর একটি বড় রণাঙ্গন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে কিছু মুখচেনা সুশীলের ব্যস্ততা, বিভিন্ন জায়গায় ১৮/২০ জনের মহা-মানববন্ধন, শাহবাগ সক্রিয় হয়ে ওঠা এবং টকশোগুলোতে চোয়াল ও কপালের ভাঁজ বেড়ে যাওয়ার বিভিন্ন নমুনা দেখে ছোট্ট টিপের বড় অভিসন্ধি সম্পর্কে একটি সহজ ছবি মনের মধ্যে নিয়ে নেওয়াই যায়।

টিপ নিয়ে চলমান সংস্কৃতি ও জীবনধারা বিতর্কে বরাবরের মতো বিজ্ঞানমনষ্কতা, বাঙ্গালিয়ানা, সেকুলারিজম, সংস্কৃতি ও নারীবাদ-জাতীয় শব্দ-শ্লোগানগুলো বেশি বেশি ব্যবহার হয়েছে। আমোদিনীপাল, ‘বিজ্ঞানের শিক্ষক’ (!) হৃদয় মণ্ডল এবং নববর্ষের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ পর্যন্ত এসব ভুল প্রতীতী ও শব্দ ধারণার চর্চা উগরে দেওয়া হলেও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনসাধারণের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তবুও মিডিয়ার ভাষা ও প্রচারে ফন্দিফিকির ও ডমিনেটের ভাবটা বেশ লক্ষণীয়ই ছিল।

তবে, কেউ কেউ এমন বলছেন, একটি ছোট্ট ‘টিপ’ দিয়ে সাংস্কৃতিক বিতর্ক ও সাম্প্রদায়িক অস্বস্তির ধারাবাহিক দৃশ্যপট চোখের সামনে আনা হলেও বাস্তবে অর্থনৈতিক দুর্দশার দেশ শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতির এদেশীয় আগমন-আতংঙ্ক থেকে চোখ সরিয়ে রাখার একটি প্রশ্রয়পুষ্ট প্রচার-বিতর্কের জানালা এই টিপ-কেলেঙ্কারি। এজন্য এখানে সাংস্কৃতিক সংঘর্ষ-জটিলতার পাশাপাশি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অস্বস্তি চাপা দেওয়ার একটি শীতল আগ্রহও থাকতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক কিছু রিপোর্ট-পর্যবেক্ষণে এদেশের কোনো কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মারাত্মক সমালোচনা করা হয়েছে। গণমাধ্যমের সূত্রে এটুকু বোঝা যাচ্ছে যে, বিষয়গুলো প্রশাসনের ওপরতলায় ও মাঝামাঝি স্তরে এক ধরনের অস্বস্তি-উদ্বেগ তৈরি করেছে। এরই মধ্যে পাকিস্তানে ইমরান খান সরকারের পতনেও আমেরিকান সরকারের ‘ইন্ধন’ ছিল বলে প্রকাশ্য আওয়াজ উঠেছে। এসব বিষয় সামনে নিয়ে এদেশের প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতির সঙ্গে রাজনৈতিক মনোভঙ্গি মিলিয়ে দেখলে এমন মনে হতে পারে যে, এখানে হিন্দু-মুসলিম কিংবা এ ধরনের জাতিগত বিভেদ, নিরাপত্তাগত ঝঁুকি ইস্যু- অস্বস্তি তৈরি করে অথবা তৈরি হলে এখানকার রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিবেচনায় মার্কিন-ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে নতুন কিছু যোগ হতেও পারে।  এ জন্যে লতা সমাদ্দারের এই মিথ্যা টিপ-কল্পকাহিনী থেকে শুরু করে সামনে আরো বড় আকারের ঝামেলা-প্রকল্প ও বিভাজন যুদ্ধ মাঠে নামতেও পারে।

টিপের মিথ্যা অভ্যুত্থান, সাংস্কৃতিক বিপথগামিতা, একশ্রেণীর গণমাধ্যমের দায়িত্বহীন প্রচার কিংবা ভৌগোলিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকটের এইসব জটিলতার মধ্যে আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে সবার জন্য হেফাজতের দুআ করি এবং দেশের নিরাপত্তাপ্রিয় মানুষ ও ঈমানদার জনতার মধ্যে সচেতনতার আহ্বান রাখি।