জনশূন্য হয়ে পড়ছে ইতালির ফ্রেগোনা, স্কুল বন্ধের শঙ্কা

ফ্রেগোনার মেয়র জাকোমো দে লুকা জনশূন্য হয়ে পড়া শহরের দোকানপাড়ায় দাঁড়িয়ে
ইতালির পাহাড়ঘেরা ছোট্ট শহর ফ্রেগোনা এখন এক প্রকার জনশূন্য। দোকানপাটে ঝাঁপ পড়েছে, রাস্তাঘাট ফাঁকা। শহরের মেয়র জাকোমো দে লুকা জানালেন, সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা এখন স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া।
নতুন শিক্ষাবর্ষে শহরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে মাত্র চারজন শিশু—যেখানে ক্লাস চালু রাখতে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী প্রয়োজন। মেয়রের আশঙ্কা, একবার স্কুল বন্ধ হলে এখানকার শিশুরা অন্য শহরে চলে যাবে এবং আর ফিরে আসবে না।
মেয়র দে লুকা জানালেন, শহরের জনসংখ্যা গত এক দশকে এক-পঞ্চমাংশ কমে গেছে। এ বছর এখন পর্যন্ত মাত্র চারটি শিশুর জন্ম হয়েছে। শহরের প্রায় ২৭০০ বাসিন্দার বেশিরভাগই প্রবীণ।
দে লুকা আশপাশের এলাকা ঘুরে অভিভাবকদের অনুরোধ করছেন তাঁদের সন্তানদের স্থানীয় স্কুলে পাঠাতে। এমনকি মিনিবাসের ব্যবস্থা, সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত স্কুল খোলা রাখাসহ সব খরচ পৌরসভা বহনের প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন তিনি।
পুরো ইতালিই সংকটে
এই সংকট শুধু ফ্রেগোনায় সীমাবদ্ধ নয়। পুরো ইতালির জন্মহার আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রতি নারী গড়ে ১.১৮টি সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের গড় ১.৩৮-এর চেয়েও কম এবং স্থিতিশীল জনসংখ্যার মান ২.১-এর অনেক নিচে।
সরকার বিভিন্ন ধরনের অনুদান ও কর রেয়াত দিলেও বাস্তব জীবনের ব্যয়, শিশু যত্ন কেন্দ্রের অভাব এবং কর্মজীবনের চাপের কারণে অনেকেই সন্তান নিতে চাইছেন না।
ফ্রেগোনার এক বাসিন্দা ভ্যালেন্তিনা দোত্তো বলেন, ‘সবকিছু মিলিয়ে সন্তান নেওয়া অনেক বড় সিদ্ধান্ত। কিছু সহায়তা মেলে ঠিকই, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়।’
সমস্যার স্থায়ী সমাধানে জোরালো পদক্ষেপ দরকার
শুধু ভাতা বা অনুদান নয়, শিশু যত্ন কেন্দ্র ও বাস্তব সহায়তা না থাকলে জনসংখ্যা সংকট কাটবে না বলে মত দিয়েছেন অনেকেই। ফ্রেগোনার পাশের ভেনেতো অঞ্চলের একটি কোম্পানি, ইরিনক্স, নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে শিশু সেবা কেন্দ্র চালু করেছে যাতে কর্মীরা সুবিধা পান।
ইরিনক্সের সিইও কাটিয়া দা রস বলেন, ‘শুধু এক হাজার ইউরোর অনুদান দিয়ে কিছু হবে না। কার্যকর এবং বিনামূল্যের শিশু যত্ন কেন্দ্র প্রয়োজন।’
অভিবাসনও একটি সমাধান হতে পারে
অভিবাসনের পথও বিবেচনায় আসতে পারে। ইতোমধ্যে ইরিনক্স কারখানার ৪০ শতাংশ কর্মীই বিদেশি। তবে অভিবাসন নিয়ে ইতালির ডানপন্থী সরকার বরাবরই কঠোর মনোভাব দেখিয়ে আসছে।
এমন পরিস্থিতিতে জনসংখ্যা হ্রাসের প্রভাব ইতোমধ্যে স্পষ্ট হচ্ছে। পাশের শহর ত্রেভিসোর একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্প্রতি মাত্র ২৭ শিক্ষার্থী নিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে।
জাতিসংঘ পূর্বাভাস দিয়েছে, আগামী ২৫ বছরে ইতালির জনসংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ কমে যাবে। প্রবীণ জনগোষ্ঠী বাড়বে এবং তা অর্থনীতির ওপর চাপ তৈরি করবে।
মেয়র দে লুকা বলেন, "এভাবে চললে ফ্রেগোনা একদিন একেবারে হারিয়ে যাবে। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এই ভবিষ্যৎ অমূলক নয়।"