টাঙ্গাইলে রাজনীতির মাঠ বিএনপির নিয়ন্ত্রণে, কোন্দলও বেশি

দলীয় কোন্দলের মধ্যেই টাঙ্গাইলে সক্রিয় বিএনপি, দুর্বল আওয়ামী লীগ।
টাঙ্গাইলে দীর্ঘদিন চাপে থাকা বিএনপি এখন রাজনীতির মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলেছে। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বদলে যায় জেলার রাজনীতির চিত্র। পুরো জেলায় বিএনপির সংগঠন ও কার্যক্রম অনেকটাই সক্রিয়, তবে একই সঙ্গে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও বেড়েছে।
জেলার আটটি সংসদীয় আসনের সাতটিতে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী সক্রিয়ভাবে মাঠে রয়েছেন। ফলে দ্বন্দ্ব স্পষ্ট। জেলা বিএনপিতে এখন তিনটি বড় ভাগে বিভক্ত নেতৃত্ব—একদিকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, অন্যদিকে প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন ও তার ভাই সাবেক মন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর অনুসারীরা। পাশাপাশি রয়েছেন ঢাকা বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটোর অনুসারীরাও।
জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০২২ সালের ১ নভেম্বর। তবে এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। জেলা কার্যালয় না থাকায় নেতারা ব্যক্তিগত অফিস থেকে দলীয় কার্যক্রম চালাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, বিএনপির নেতা-কর্মীরা অবৈধ ঘাট, হাটবাজার, পরিবহন খাতসহ আয়বর্ধক নানা ক্ষেত্র দখলে নিয়েছেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এখন অনেকটাই নিস্ক্রিয়। সরকারের পতনের পর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অধিকাংশ নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে গেছেন। কারও বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে। বহু নেতা-কর্মী কারাবন্দি। সাবেক মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, ছানোয়ার হোসেনসহ অনেকেই এখন কারাগারে, আবার কেউ ভারতে অবস্থান করছেন।
অন্যান্য দলের তৎপরতা
সরকার পতনের পর জামায়াতে ইসলামীর তৎপরতা বেড়েছে। আটটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, এনসিপি, গণ অধিকার পরিষদ ও গণসংহতি আন্দোলনের কিছু কার্যক্রম থাকলেও নির্বাচনী তৎপরতায় বড় অংশ নেই।
জাতীয় পার্টি এখনো মাঠে সক্রিয় নয়। তবে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি হলে তারা আটটি আসনেই প্রার্থী দেবে বলে জানিয়েছে। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রধান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৮ আসনে সক্রিয়। তার ভাই সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টাঙ্গাইল-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।
আসনভিত্তিক বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অবস্থান -
টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ি)
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ফকির মাহবুব আনাম (স্বপন), মো. আলী, আফিফউদ্দিন, আসাদুল ইসলাম আজাদ ও শাহাজাহান কবীর।
জামায়াতের প্রার্থী মোন্তাজ আলী, ইসলামী আন্দোলনের হারুন অর রশীদ, এনসিপির অলিক মৃ।
টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর)
এখানে একমাত্র মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক মন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু।
জামায়াতের হুমায়ুন কবীর, ইসলামী আন্দোলনের ফজলে বারী, গণ-অধিকার পরিষদের শাকিলউজ্জামান।
টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল)
বিএনপির লুৎফর রহমান খান (আজাদ), এস এম ওবায়দুল হক (নাসির), মাইনুল ইসলাম মনোনয়নপ্রত্যাশী।
জামায়াতের হুসনে মোবারক, ইসলামী আন্দোলনের রেজাউল করিম, গণসংহতির মোফাখারুল ইসলাম, এনসিপির সাইফুল্লাহ হায়দার।
টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী)
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী লুৎফর রহমান মতিন, বেনজীর আহমেদ টিটো, আবদুল হালিম মিয়া, বাদলুর রহমান, আবদুল আওয়াল।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন লতিফ সিদ্দিকী।
জামায়াতের খন্দকার আবদুর রাজ্জাক, ইসলামী আন্দোলনের সানোয়ার হোসেন।
টাঙ্গাইল-৫ (সদর)
মনোনয়নপ্রত্যাশী সুলতান সালাউদ্দিন, হাসানুজ্জামিল শাহীন, ফরহাদ ইকবাল, ছাইদুল হক, সাতিল, জিয়াউর রহমান (প্লেটো)।
জামায়াতের আহসান হাবীব মাসুদ, এনসিপির আজাদ খান ভাসানী, ইসলামী আন্দোলনের আকরাম আলী।
টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার)
বিএনপির নুর মোহাম্মদ খান, রবিউল আওয়াল লাভলু, শফিকুল ইসলাম, এস এম ফেরদৌস হোসেন।
জামায়াতের এ কে এম আবদুল হামিদ, ইসলামী আন্দোলনের আখিনুর মিয়া, এনসিপির মো. সালাউদ্দিন।
টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর)
বিএনপির আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, সাঈদ সোহরাব, সাদেক খান, আবদুস সালাম খান।
জামায়াতের প্রার্থী আবদুল্লাহ তালুকদার, ইসলামী আন্দোলনের এ টি এম রেজাউল করিম।
টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল)
বিএনপির আহমেদ আযম খান, শেখ মুহাম্মদ হাবীব, নাসিম এম খান।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী, জামায়াতের শফিকুল ইসলাম খান, ইসলামী আন্দোলনের আবদুল লতিফ মিয়া।