শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, বৈশাখ ২৬ ১৪৩২, ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৬

ব্রেকিং

আইভীর বাড়িতে পুলিশ, অনুসারীদের জটলা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের পরবর্তী ধাপের আলোচনার কর্মপরিকল্পনা দ্রুত চূড়ান্ত করার নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারের সাফল্য চাই: মির্জা ফখরুল তথ্যযুদ্ধ: কতটা সত্যি বলছে ভারত ও পাকিস্তান? ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতে এরপর কী? পাকিস্তান ভারত সীমান্তে উত্তেজনার নতুন অধ্যায়: ক্ষেপণাস্ত্র, হামলা ও তথ্যযুদ্ধ আওয়ামী লীগের দুই সহযোগী সংগঠন নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে: আসিফ মাহমুদ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে নেতৃত্ব পরিবর্তন: স্নিগ্ধর পদত্যাগ আবদুল হামিদের দেশত্যাগে জড়িতদের ধরা হবে, না হলে আমিই চলে যাব: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সরকার সংবাদপত্রের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখতে চায় : তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা প্রথম আমেরিকান পোপ হলেন রবার্ট প্রিভোস্ট ২০২৫: টেকনোলজির ঝড় উঠছে! ভারত-পাকিস্তানে যুদ্ধের দামামা: বাংলাদেশে কী প্রভাব, করণীয় কী রক্তের প্রতিটি ফোঁটার বদলা নেব: শেহবাজ শরিফ

স্পেশাল

সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশসেবার স্বপ্ন পূরণ হলো না শহীদ সৌরভের

 প্রকাশিত: ১১:২৩, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশসেবার স্বপ্ন পূরণ হলো না শহীদ সৌরভের

শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে ৪ আগস্ট সংঘাত-সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে রূপ নেয় শেরপুর জেলা শহর।

পুলিশের পাশাপাশি মাঠে ছিল আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সংগঠনটির অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এদিন দুপুরে হঠাৎ করে শহরে পুলিশ, আওয়ামীলীগ ও আন্দোলনরত ছাত্রদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ শুরু হয়।

সেসময় পুলিশের অবস্থান ছিল খরমপুর মোড় ও ছাত্রদের অবস্থান ছিল খাদ্য গুদাম মোড়ে। এমন সময় পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান ছাত্রদের মিছিলের দিকে এগিয়ে কলেজ মোড়ের দিকে অগ্রসর হয়। ছাত্ররা পিকআপ ভ্যানটিকে অনুসরণ করে দৌঁড়াতে থাকে। ঠিক তখনি জেলা প্রশাসনের একটি দ্রুতগামী সাদা গাড়ি বিপরীত দিক থেকে ছাত্রদের মিছিল ভেদ করে চলে যায়। সেই গাড়ির চাপায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় সারদুল আশিস সৌরভ (২২)।

তিনি ঝিনাইগাতি উপজেলার পাইকুড়া গ্রামের মো. সোহরাব হোসেন (৫০) ও মোছাম্মৎ শামসুন্নাহার বেগম (৪৫)-এর ছোট ছেলে।

সৌরভ শেরপুর সেকান্দার আলী কলেজে বাংলা বিভাগে পড়ত। সে শেরপুর জেলা শহরের একটি ছাত্র হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করত। সৌরভের বাবা সোহরাব হোসেন পেশায় একজন কৃষি উদ্যোক্তা। মা মোছাম্মৎ শামসুন্নাহার বেগম স্থানীয় জড়াকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষিকা।

এদিকে ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও সন্তান হারানোর বেদনায় আহজারি চলে সৌরভের পরিবারে।

সৌরভের বড় ভাই শাহরিয়ার আশিস শোভন (২৫) বলেন, আমার ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল সে সেনাবাহীনিতে চাকুরি করে দেশ ও জনগনের সেবা করবে। সৌরভ কয়েকবার সেনাবাহীনির ভর্তি পরীক্ষাতে উত্তীর্ণও হয়েছিল। কিন্তু শেষে স্বাস্থ্য মোটা হওয়ায় বাদ পড়ে। এরপর থেকে সে নিয়মিত ডায়েট কন্ট্রোল করত।

শোভন আরও জানান, তার ভাই সৌরভের শখ ছিল মোটরবাইক ড্রাইভের। এজন্য সে কষ্ট করে ফ্রিল্যান্সিং করে বিভিন্নভাবে ২ লাখ টাকাও জমিয়েছিল।

আমার ভাই আজ নেই। তার জমানো টাকাগুলো মাটির ব্যাংকেই রয়ে গেছে। সৌরভের সাথে আমার ছোটবেলার অনেক স্মৃতি রয়েছে। এখন প্রায়ই সে সব স্মৃতি আমার চোখের সামনে ভাসে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সন্তান হারানোর বেদনা নিয়ে সৌরভের মা শামসুন্নাহার বেগম (৪৫) জানান, আমার ছেলে ছোটবেলা থেকেই পরোপকারি ছিল। সে সবসময় এলাকার অসহায় হতদরিদ্রদের জন্য ভাবতো। বিপদে তাদের আর্থিক সহযোগিতা করত।

ঈদের আগে গরীবদের মাঝে সেমাই, সুজি, চিনি, গুড়ো দুধ, চাল ও ডাল বিতরন করত। এর পাশাপাশি সে দরিদ্র কল্যাণ তহবিল নামে একটি সংগঠনও পরিচালনা করত। আজ আমার ছেলে পৃথিবীতে নাই। যারা আমার বুকের ধনকে হত্যা করেছে আমি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।

সৌরভের বাবা সোহরাব হোসেন (৫০) বলেন, আমাদের গ্রামে কোন গণ-কবরস্থান নেই। এ কারণে ভূমিহীন অনেক পরিবারকে মৃতদেহ দাফন করতে সমস্যায় পড়তে হত। আমার ছেলে সৌরভের উদ্যোগে গ্রামের ছাত্র-জনতা সবার কাছ থেকে প্রায় আড়াই লাখ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করেছিল। গণ কবরস্থানের জমি কেনার জন্য।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘কিন্তু সৌরভ এটি দেখে যেতে পারল না। সামজিকভাবে সৌরভ অনেক এগিয়ে ছিলো কিন্তু আমরা এটা বুঝতে পারি নাই। আমার ছেলেকে জেলা প্রশাসন গাড়িচাপা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমরা তার হত্যার বিচার চাই।’

সৌরভের বন্ধু শামীম হাসান (২২), বলেন, আমাদের বন্ধু দেশ, সমাজ ও নিপীড়িত মানুষের কথা ভাবত। সেই ভাবনা থেকেই স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে সৌরভ। গত ৪ আগস্ট রাজপথে দাবি আদায় করতে গিয়ে সৌরভ লাশ হয়ে বাড়ি ফিরে।

মোবাইলে কিছু ছবি দেখিয়ে শামীম আরো জানান, বন্ধু তালিকায় সৌরভ অত্যন্ত ভদ্র, বিনয়ী ও পরোপকারী ছিল। তাকে আমরা সবসময় মনে করি। তার অনুপস্থিতি আমাদের বন্ধুদের কাঁদায়।

এবিষয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও শ্রীবরদি ঝিনাইগাতি আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. মাহমুদুল হক রুবেল বাসসকে জানান, সৌরভ হত্যা মামলায় শেরপুর সদর থানায় দুটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

জেলা বিএনপির পক্ষ হতে শহীদ সৌরভের পরিবারকে কয়েকবার আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।