শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, বৈশাখ ২৬ ১৪৩২, ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৬

ব্রেকিং

আইভীর বাড়িতে পুলিশ, অনুসারীদের জটলা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের পরবর্তী ধাপের আলোচনার কর্মপরিকল্পনা দ্রুত চূড়ান্ত করার নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারের সাফল্য চাই: মির্জা ফখরুল তথ্যযুদ্ধ: কতটা সত্যি বলছে ভারত ও পাকিস্তান? ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতে এরপর কী? পাকিস্তান ভারত সীমান্তে উত্তেজনার নতুন অধ্যায়: ক্ষেপণাস্ত্র, হামলা ও তথ্যযুদ্ধ আওয়ামী লীগের দুই সহযোগী সংগঠন নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে: আসিফ মাহমুদ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে নেতৃত্ব পরিবর্তন: স্নিগ্ধর পদত্যাগ আবদুল হামিদের দেশত্যাগে জড়িতদের ধরা হবে, না হলে আমিই চলে যাব: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সরকার সংবাদপত্রের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখতে চায় : তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা প্রথম আমেরিকান পোপ হলেন রবার্ট প্রিভোস্ট ২০২৫: টেকনোলজির ঝড় উঠছে! ভারত-পাকিস্তানে যুদ্ধের দামামা: বাংলাদেশে কী প্রভাব, করণীয় কী রক্তের প্রতিটি ফোঁটার বদলা নেব: শেহবাজ শরিফ

সংস্কৃতি

বইমেলায় চেনা রূপে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ‘আপ্লুত’ বই প্রেমীরা

 প্রকাশিত: ২৩:০২, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বইমেলায় চেনা রূপে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ‘আপ্লুত’ বই প্রেমীরা

আস্ত লাইব্রেরি শহর-নগরে ঘুরে বেড়ানোর যে দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত বইপ্রেমীরা, একুশে বইমেলায় সেটিকে পেয়ে তারা পুরনো স্মৃতিচারণ করলেন; বই কেনার পাশাপাশি নিজেদের ছবিও তুলে রাখলেন।

বইমেলায় ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির আদলে নিজেদের স্টল বানিয়েছে বিশ্বসাহিত্য সাহিত্য কেন্দ্র। বুধবার সেখানে দেখা গেল বইপ্রেমীদের জটলা। বই নিয়ে তারা নেড়েচেড়ে দেখছিলেন, কেউবা পথঘাটে আর ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি না দেখতে পেয়ে আক্ষেপও করছিলেন।

স্টলের সামনে ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী সাবিহা আনজুম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই গাড়িটি ভীষণ চেনা। স্কুলে পড়ার সময় ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির গাড়ি থেকে বই নিয়ে পড়তাম। মেলায় এসে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির আদলে করা এই ডিজাইনটা দেখেই অনেক স্মৃতি মনে পড়ছে।”

১৯৯৯ সাল থেকে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি চালিয়ে আসা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে লাইব্রেরি চালুর আশ্বাস দিলেও সরকারের অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় সেটি চালু হয়নি।

কার্যক্রম থেমে যাওয়া ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির আদলে মেলায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্টল সাজানোকে ‘নীরব প্রতিবাদও’ বলছেন দর্শনার্থীদের কেউ কেউ।

মেলায় ব্যাংক কর্মকর্তা রফিক সিকদার সে কথাই বলছিলেন; স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্টলে বই হাতে নিয়ে দেখছিলেন তিনি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রফিক সিকদার বলেন, “শুনলাম ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি বন্ধ হয়ে গেছে। এটা চালু রাখতে সরকারের আর কত টাকা খরচ হয়, সরকার এই টাকাটা দিয়ে লাইব্রেরিটা চালু রাখতে পারে।

“স্টলের ডিজাইনটা এরকম করার মধ্য দিয়ে কেন্দ্র একটা 'নিরব প্রতিবাদ' করল। এটা ভালো লাগছে।”

যদিও বিষয়টিকে ‘নীরব প্রতিবাদের ভাষা’ বলতে চান না বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা। বলছেন, এমন চিন্তা থেকে তারা ওই স্টলও তারা বানাননি।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মার্কেটিং কর্মকর্তা সঞ্জয় পাণ্ডে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বইমেলায় আমরা স্টলের জন্য একাধিক ডিজাইন করেছিলাম, সবার মতামতে এই ডিজাইনটা চূড়ান্ত করেছি। এটা কোনো প্রতিবাদের ভাবনা থেকে করা হয়নি।”

শোয়েব সর্বনাম ফেইসবুকে একজন লিখেছেন, “বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এবারের স্টলটা একটা প্রতিবাদ। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি চালাতে না পেরে বইভর্তি বাসটিকে তারা বইমেলায় এনে রেখে দিয়েছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি আবার চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হোক।”

২৫ বছর ধরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে এই কার্যক্রমটি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের 'দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি প্রকল্প' এর অর্থায়নে বাস্তবায়িত হয়েছে।

বর্তমানে লাইব্রেরির গাড়ির সংখ্যা ৭৬টি। এই গাড়িগুলো দেশের ৩ হাজার ২০০টি এলাকায় বই দেওয়া-নেওয়া করে, যাকে ৩ হাজার ২০০টি ছোট লাইব্রেরিও বলা চলে।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বলছে, এই লাইব্রেরির নিয়মিত ও অনিয়মিত পাঠক সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন বলেন, “বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবারও সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় কার্যক্রমটি চলমান রাখার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে এবং প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তবে বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে আরও কিছুদিন সময় প্রয়োজন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।”

বুধবার ছিল একুশে বইমেলার পঞ্চম দিন। বিকাল ৩টায় মেলা শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে।

মেলা ঘুরে দেখা যায়, লোক সমাগম খুব বেশি নেই। ফলে দর্শনার্থীরাও বেশ স্বস্তিতেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বই বিক্রিও হচ্ছে, এখনও বিক্রি জমে ওঠেনি।

অন্যপ্রকাশের বিক্রয়কর্মী সাব্বির বলেন, “মেলায় এখন লোকজন আসছেন। তবে বই বিক্রি পুরোদমে শুরু হতে আরও কয়েকদিন লাগবে। এখনও তো অনেক প্রকাশক নতুন বই নিয়ে আসছে মেলায়। শুক্রবার থেকে লোক সমাগম বাড়বে, বই বিক্রিও বাড়বে বলে আশা করি।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ তন্ময় বলেন, “আজকে (বুধবার) তো গ্রন্থাগার দিবসও, আমার ধারণা ছিল আজ বেশি বইপ্রেমীর সমাগম হবে। তবে তা হয়নি। আমাদের বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক কম, মেলার সঙ্গেই বেশি। বইমেলায় অন্যান্য বিষয় নিয়েই বেশি মাতামাতি হয়। বই নিয়ে এত আলোচনা হয় না।”

নতুন বই

বইমেলা পরিচালনা কমিটির জনসংযোগ বিভাগ বলছে, বুধবার মেলায় নতুন বই এসেছে ৯৮টি। মেলা শুরু পর এদিনই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বই প্রকাশ হয়েছে।

বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশ হয়েছে জোবাইদা নাসরীনের 'নারী ও লিঙ্গ রাজনীতি : প্রাসঙ্গিক বিবেচনা', অন্যপ্রকাশ এনেছে স্বকৃত নোমানের উপন্যাস 'আচার্য ও তার অলীক পাণ্ডুলিপি', সাদাত হোসাইনের 'যেতে যেতে তোমাকে কুড়াই', আগামী প্রকাশনী এনেছে ফরহাদ মজহারের 'সামনাসামনি, ফরহাদ মজহারের সঙ্গে কথাবার্তা' এবং এম আবদুল আলীমের 'ভাষা আন্দোলনে আবদুল গাফফার চৌধুরী'।

এদিন লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন এবং সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক শিবলী আজাদ।

মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘হোসেনউদ্দীন হোসেন: প্রান্তবাসী বিরল সাহিত্য-সাধক’ শীর্ষক আলোচনা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আহমেদ মাওলা। আলোচনার পর কবিতা আবৃত্তি করেন আতাহার খান ও আলমগীর হুছাইন। আবৃত্তি করেন রানা আহমেদ ও কাজী সামিউল আজিজ।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় মূলমঞ্চে হবে ‘স্মরণ : মাহবুবুল হক’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন তারিক মনজুর।