শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫, আষাঢ় ২৭ ১৪৩২, ১৫ মুহররম ১৪৪৭

ব্রেকিং

এনবিআর সংস্কার পরিষদের বহু সদস্যের ‘ক্ষমা প্রার্থনা’, মাঠে ফেরার প্রস্তুতি ৭.৭৫ কোটি টাকার স্থাপনা ভেঙে নতুন স্মৃতিস্তম্ভ গড়ার কাজ শুরু ইসরায়েল আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল: ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সংস্কার ছাড়া যেনতেন নির্বাচন চায় না জামায়াত: শফিকুর রহমান আশরাফুল, সাকিবদের পর এবার নতুনদের চিনছে শ্রীলঙ্কা বিচার ও সংস্কারকে নির্বাচনের মুখোমুখি করা যাবে না: সাকি সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থায়(পিআর) ‘ভবিষ্যৎ বিভক্তি’র শঙ্কা তারেক রহমানের জুলাই বিপ্লব নিয়ে কটূক্তি করায় কুষ্টিয়ায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ক্লোজড কলেজ প্যাডে ছাত্রদলের প্রচারণা? অধ্যক্ষের ব্যাখ্যা ঘিরে বিতর্ক মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের সংঘাত বিস্তার: বিশ্লেষণ কলম্বিয়ায় পাহাড়ধসে মৃত্যু ১৬, নিখোঁজ অন্তত ৮ “ত্রাণ নিতে এলে গুলি করতাম”—গাজার ঘটনায় মুখ খুললেন ইসরায়েলি সেনারা তেহরানে ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার চলছেই, মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ৪৫০ ইরানে বাংলাদেশিদের সহায়তায় হটলাইন চালু উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভ: সিলেটে তিনজন কারাগারে ইসরায়েলের টার্গেটে ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার ভবন লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক ১৩ জুন তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন: ফখরুল রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হবে কাঁচের মতো স্বচ্ছ ঘর: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাচনের ঘোষিত সময় মাথায় রেখে যথাসময়ে রোডম্যাপ দেবে ইসি: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ছাত্রদল নেতা নাছির উদ্দিন মণিপুরে আবার উত্তেজনা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের চাপে ঢাকার ৪ থানায় সক্রিয় অর্ধশতাধিক অপরাধী দল জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে: প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি: সালাহউদ্দিন আহমদ জুলাই সনদ–ঘোষণাপত্র হলে ঘোষিত সময়ে নির্বাচনে আপত্তি নেই: এনসিপি ২৫ কিলোমিটার যানজট, ২৪ ঘণ্টায় পারাপার ৬৪ হাজার যানবাহন বান্দরবানের রুমা ও থানচি ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আংশিকভাবে প্রত্যাহার গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো, জাতিসংঘ নিরাপত্তা গরম মসলার বাজার শীতল: ক্রেতা কমে যাচ্ছে, দাম কিছুটা স্থিতিশীল ঈদে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দই-মিষ্টি মজুত, রংপুরে হিমাগারে অভিযান ও দুই লাখ টাকা জরিমানা বান্দরবানের লামায় পাহাড় ধসের শঙ্কায় ৬০ রিসোর্ট বন্ধ নির্বাচন নিয়ে তরুণদের প্রতি অসত্য অভিযোগ ও বাস্তবতা ভারতের মুসলমানদের কেন বারবার দেশপ্রেমের প্রমাণ দিতে হয় সংবিধান পরিবর্তন ছাড়া ফ্যাসিবাদ বিলোপ সম্ভব নয়: এনসিপি মুখ্য সমন্বয়ক একুশের বন্ধুত্বে আগামীর পথচলা: বার্ষিক সম্মেলনে ২১তম বিসিএস প্রশাসন ফোরাম বিজিএমইএ`র নতুন নেতৃত্বে আসছেন বাবু, নিরঙ্কুশ জয়ের ইঙ্গিত জিলহজ মাসের আমল ও কোরবানির তাৎপর্য চট্টগ্রামে নারীকে লাথির ঘটনায় ভাইরাল আকাশ চৌধুরী বহিষ্কৃত, জামায়াতের বিবৃতি সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেই, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিল পবিস শ্রমিকরা আনচেলত্তির স্বপ্ন - রিয়াল মাদ্রিদের মতো করে খেলাবেন ব্রাজিলকে ডিমের দাম এখনো চড়া, ডজন ১৩০–১৪০ টাকায় বিক্রি বৈরী আবহাওয়ার কারণে নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপের সঙ্গে সারাদেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ হারের পর লিটনের মনোভাব - এখনো দুই ম্যাচ বাকি কাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব জুয়েলারি দোকান বন্ধ ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্র চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করবে ডিএনএ টেস্ট করে নামফলক ও মর্যাদা চায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা বেতন না পেয়ে ডাকাতি, জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ারসহ তিনজন আটক “বাংলাদেশে কৌশলগত স্বার্থ নেই দক্ষিণ কোরিয়ার”—রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক “শাপলার হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই”—হেফাজতের বিবৃতি মির্জা আব্বাস: “করিডর আর স্টারলিংক আনা হচ্ছে আরাকান আর্মির জন্য” জিলহজ মাসের চাঁদ দেখে যে দোয়া পড়বেন নির্বাচনের আগে যতটুকু দরকার, ততটুকুই সংস্কার করতে হবে: মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ‘চিন্তার স্বাধীনতাও হারাচ্ছি?’— নারী কমিশন বিতর্কে গীতিআরার উদ্বেগ ইউক্রেনে রাশিয়ার টানা হামলায় নিহত ১২, কঠোর চাপের আহ্বান জানালেন জেলেনস্কি সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন – তিনটি কঠিন দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট আমরা জুলাই অভ্যুত্থান ক্ষমতার পালাবদল নয়, এটি মৌলিক সংস্কার: নাহিদ হলুদ সাংবাদিকতা’ বিরোধী স্লোগানে উত্তাল শিক্ষক মিছিল ভারতের নিষেধাজ্ঞায় আখাউড়া বন্দর দিয়ে রপ্তানি কমেছে ৪০% বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি চলছে, দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি জাতীয় স্বার্থে অভিমান ভুলে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান : জামায়াত আমির আন্দোলনের পর অবশেষে নিয়োগ পেলেন ৪৩তম বিসিএসের বাদ পড়া ১৬২ জন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিতে ইসির সামনে এনসিপির বিক্ষোভ কাল বাংলাদেশে স্টারলিংকের যাত্রা, স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের নতুন যুগ শুরু নরওয়ের দৃঢ় সমর্থন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিগত সরকারের সময় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত, এমন অবস্থা ছিল যে খতিবকেও পালাতে হয়েছিল: বাণিজ্য উপদেষ্টা গায়ের জোরে নগর ভবন দখল করে আন্দোলন চালাচ্ছে বিএনপি আবারও রাজপথে নামার ইঙ্গিত আসিফের, সতর্ক করলেন হাসনাত গোপন অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন স্থগিত, ২০ মে আলোচনায় বসবে ঐক্য পরিষদ ভারতের আমদানি নিষেধাজ্ঞা সীমান্ত বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে ভারতের নতুন সিদ্ধান্তে উত্তর-পূর্বাঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশি ভোগ্যপণ্য আমদানি বন্ধ গত ৯ মাসে জুলাই-যোদ্ধাদের ওপর ৩৮টি হামলা জবি’র ৪ দফা দাবি মেনে নেওয়ায় আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা ডিবি থেকে মুক্তির পর আন্দোলনে উল্লাস জবি শিক্ষার্থীর গাজা দখলে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করলেন ট্রাম্প শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডে বিচার নিশ্চিতের অঙ্গীকার উপদেষ্টা আসিফের সোনার দাম ভরিতে কমল ৩ হাজার ৪৫২ টাকা, নতুন দর কার্যকর শুক্রবার থেকে ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু: নিরাপত্তা নিশ্চিতে বড় পদক্ষেপ প্রশাসনের আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধে ভারতের উদ্বেগ শ্রীনগরজুড়ে বিস্ফোরণ, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওমর আব্দুল্লাহর উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত: আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ ‘চলবে’, শনিবার গণজমায়েত ড্রোন যুদ্ধ: ভারত-পাকিস্তান বিরোধের নতুন অধ্যায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সরকার গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আ.লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়বেন না আন্দোলনকারীরা ‘আপ বাংলাদেশ’–এর আত্মপ্রকাশ পূর্বঘোষণা ছাড়া ভারত সফরে সৌদি প্রতিমন্ত্রী, পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনায় কূটনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে মার্চের হুঁশিয়ারি নাহিদ ইসলামের দেশীয় ওষুধ কোম্পানি রেনাটাকে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে আইএফসি তারেক রহমান: সরকার হয়তো স্বৈরাচারের দোসরদের দেশত্যাগে সহায়তা করছে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারতের নির্দেশে ৪ বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল ইউটিউবে বন্ধ

সংস্কৃতি

নতুন পানিতে সফর এবার, হে মাঝি সিন্দাবাদ

অপ্রকাশিত রচনা

 প্রকাশিত: ১১:২৮, ৪ অক্টোবর ২০২০

নতুন পানিতে সফর এবার, হে মাঝি সিন্দাবাদ

আমরা যখন প্রথম লিখতে শুরু করি, তখন আমাদের জিভের ডগায় নাচত কয়েকটি নাম—শওকত ওসমান, আহসান হাবীব, ফররুখ আহমদ, আবুল হোসেন, আবু রুশদ, গোলাম কুদ্দুস, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এবং শামসুদ্দীন আবুল কালাম। আমাদের এই জগদ্দল সমাজে লেখক হওয়ার যে কী মানে, তা আমি কাগজে-কলম ছুঁইয়েই বুঝতে পেরেছিলাম। তাই, আমাদের সমাজের এই অগ্রগণ্য লেখকদের সাহিত্যচর্চা বরাবরই আমার কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ঠেকেছে। তাদের সাহিত্য ফসলের দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞবোধ করেছি সব সময়। তাই, আমাদের আড্ডায় বার বার ঘুরে-ফিরে উচ্চারিত হতো এ কয়েকটি নাম, উচ্চারিত হতো তাদের রচিত কত পঙিক্ত।

 

আমাদের বরণীয় এই আটজন লেখকের মধ্যে দুজন লোকান্তরিত হয়েছেন। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ মারা গেছেন প্যারিসে, ফররুখ আহমদ ইন্তেকাল করেছেন আমাদের এই চিরচেনা ঢাকা শহরে। তিনি মারা গেছেন একেবারে নিঃস্ব অবস্থায়। না, ভুল বললাম। নিঃস্ব কথাটা তার সম্পর্কে প্রযোজ্য নয়। তার মানসিক ঐশ্বর্যের কোনো কমতি ছিল না। তিনি রেখে গেছেন এমন কয়েকটি গ্রন্থ যেগুলো পঠিত হবে দীর্ঘকাল। তার বহু পঙিক্ত বার বার গুঞ্জরিত হবে কাব্যপিপাসুদের স্মৃতিতে। যে কবিতা তিনি আমাদের উপহার দিয়ে গেলেন তা তার স্মৃতিকে চিরদিন পাঠকদের মনে উজ্জ্বল করে রাখবে সত্য, কিন্তু কবিতা তাকে দেয়নি সচ্ছলতা, তার পরিবারকে দেয়নি কোনো নিরাপত্তা। সারা জীবন তিনি দারিদ্র্যের সঙ্গেই ঘর করেছেন, জাহান্নামে বসেই হেসেছেন পুষ্পের হাসি। দারিদ্র্য তার শরীরকে ক্ষইয়ে দিয়েছিল ভীষণভাবে, কিন্তু কখনো কামড় বসাতে পারেনি তার মনের ওপর।

 

তার মতো অসামান্য কবি খুবই সামান্য একটা চাকরি করতেন। মাইনে পেতেন মাত্র ছ’-সাতশ’ টাকা অথচ তার ঘরে বারো-তেরোজন পুষ্যি। আজকের দিনে এই ক’টি টাকায় কী করে চালানো সম্ভব এত বড় সংসার? ফররুখ আহমদের কাব্যের সংসার যত জেল্লাদারই হোক না কেন, তার সংসার বরাবরই খুব নিষ্প্রভ। দারিদ্র্য ম্লান করে দিয়েছিল তার সংসারের মুখ। পয়সা কামানোর দিকে কখনো মন ছিল না তার। পারলে তিনি হয়তো চাকরিও করতেন না কখনো। ধরা-বাঁধা চাকরি করার মানসিকতা তার ছিল না। তিনি ছিলেন ভিন্ন ধাতুতে গড়া। তাই, যখন তাকে রেডিও অফিসে দেখতাম একজন সামান্য চাকুরে হিসেবে, আমার কেমন যেন খটকা লাগত। সেখানে বড় বেমানান লাগত ফররুখ আহমদকে।

 

অনেক বছর আগেকার কথা। আমিও তখন রেডিওতে চাকরি করি। আমার জীবনের সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন দুটি বছর আমি কাটিয়েছিলাম রেডিওতে। কিন্তু আমার সেই কর্মজীবনের একমাত্র আনন্দ ছিল ফররুখ আহমদের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দেওয়া। মতাদর্শের দিক থেকে আমরা দুজন অবস্থান করতাম দুই বিপরীত মেরুতে। আমি জানতাম তার ঝাঁজালো রাজনৈতিক মতাদর্শের কথা, তার অসিহষ্ণুতার কথা—কিন্তু এর কোনোটাই সে সময় আমার আর তার সম্পর্কের সঙ্গে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি। তিনিও ভালো করেই জানতেন আমার বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের কথা, আমার রাজনৈতিক মতামতের কথা। তার সঙ্গে কখনো আমার কোনো রাজনৈতিক সংলাপ হয়নি। তিনি এড়িয়ে যেতেন, আমিও তাকে রাজনৈতিক তর্ক জুড়তে প্ররোচিত করিনি কোনো দিন। আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা মেতে থাকতাম সাহিত্যালোচনায়। বিশেষ করে, কবিতার কথা বলতে ভালোবাসতেন তিনি। বিভিন্ন কবির পঙিক্তমালা তিনি আবৃত্তি করতেন, তার দীর্ঘ এলোমেলো চুল নেমে আসত কপালে, ধারালো উজ্জ্বল চোখ হয়ে উঠত উজ্জ্বলতর। তার আরেকটি প্রিয় প্রসঙ্গ ছিল মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবিতা। মধুসূদনের কথা বলতে গেলেই তার কণ্ঠে বেজে উঠত অন্যরকম সুর। মধুসূদনের কবিতা অনর্গল মুখস্থ বলে যেতে পারতেন তিনি। তার মৃত্যু-সংবাদ শুনে ছুটে গিয়েছিলাম কবির ফ্ল্যাটে। যে ফররুখ আহমদকে আমি বহুদিন বসে থাকতে দেখেছি আজিজিয়া রেস্টুরেন্টে, যে ফররুখ আহমদের সঙ্গে রেডিওর মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে কবিতা পড়েছি, যে ফররুখ আহমদের সঙ্গে রমনার বৃক্ষ চূড়াময় পথে হেঁটেছি বহুদিন, যে ফররুখ আহমদের সঙ্গে কথা বলেছি দিনের পর দিন, যে ফররুখ আহমদকে কাজের ক্লান্তির মধ্যে কোনো দিন এতটুকু ঝিমুতে দেখিনি, সেই ফররুখ আহমদকেই দেখলাম তার নিভৃত শয্যায়। তাকে দেখলাম, নির্বাক, নিথর। কী আশ্চর্য, তিনি একবারও হাসিমুখে তাকালেন না আমার দিকে, বললেন না, কি চলবে নাকি এক পেয়ালা? না তিনি এই প্রথমবারের মতো আমাকে চা খেতে অনুরোধ করলেন না। অথচ তার কাছে চা না-খাওয়া ছিল অসম্ভব ব্যাপার। আমি অন্তত এমন একটি দিনের কথাও মনে করতে পারি না যে, আবুল মিয়ার দোকানে গিয়ে ফররুখ আহমদের পাশে বসেছি এবং চা ও নিমকি খাইনি। চা না খাইয়ে তিনি ছাড়তেন না। কোনো ওজর-আপত্তি তিনি শুনতেন না। ‘আরে খাও খাও, কিসসু হবে না, বলতেন সেই দরাজদিল মানুষটি।

 

অমন নিথর, নিঃশব্দ ফররুখ আহমদকে বড়ই বেমানান লাগছিল সেই বিছানায়। যেমন তাকে বেমানান মনে হতো রেডিওর কাজে। তার নিস্পন্দ শরীর আর তন্ময় নিদ্রার দিকে তাকিয়ে আমার মনে পড়ল তারই লেখা কয়েকটি লাইন—

 

এ ঘুমে তোমার মাঝি-মাল্লার

ধৈর্য নাইকো আর

সাত সমুদ্র নীল আক্রোশে

তোলে বিষ কেন ভার,

এদিকে অচেনা যাত্রী চলেছে

আকাশের পথ ধ’রে

নারঙ্গী বনে কাঁপছে সবুজ পাতা।

বেসাতী তোমার পূর্ণ করে কে

মারজানে মর্মরে?

ঘুমঘোরে তুমি শুনছো কেবল

দুঃস্বপ্নের গাথা

... তবু জাগলে না?

তবু তুমি জাগলে না?

 

তিনি আর কোনো দিনই জাগবেন না। তার প্রায় আসবাবহীন সেই ঘরে দেখলাম ইতস্তত ছড়ানো কিছু বই। দেখলাম, তার খুব কাছেই রয়েছে তার প্রিয় কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যগ্রন্থ। মধুসূদনের অকৃত্রিম শুভার্থী এবং উনিশ শতকী বাংলার অন্যতম প্রধান পুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রতিও ফররুখ আহমদের অবিচল শ্রদ্ধা। তিনি প্রায়শ বলতেন, বুঝলে শামসুর রাহমান, এই বিদ্যাসাগরের মতো এক দেড়জন ব্যক্তি আমাদের সমাজে জন্মালে এই পচা-গলা সমাজের চেহারাটাই পাল্টে যেত।

 

কখনো-সখনো জীবনের দুঃখ-দুর্দশার কথা উঠত, উঠত জীবন-সংগ্রামের কথা। এ প্রসঙ্গে একবার তিনি রানা প্রতাপ সিংহের পলাতক দিনের গল্প বলেছিলেন। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে রানা প্রতাপ ঘুরছেন বনে-প্রান্তরে। শত দুঃখ-দুর্দশা সত্ত্বেও তিনি আত্মসমর্পণ করেননি আকবর বাদশাহর কাছে। কিন্তু যেদিন একটা বুনো বেড়াল তার শিশুকন্যার হাত থেকে ঘাসের রুটি ছিনিয়ে নিয়ে গেল সে দিনই তিনি ধরা দিলেন আকবরের সৈন্যদের হাতে। তিনি একাধিকবার এই গল্প আমাকে শুনিয়েছেন। কেন এই গল্প বলতেন তিনি? হয়তো পুত্র-কন্যার মুখ চেয়ে চাকরি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলেই এই গল্পটি তিনি বলতেন, যেমন নিজেকেই শোনাতেন সেই আত্মসমর্পণের অত্যন্ত মানবিক কাহিনী। হয়তো রানা প্রতাপ সিংহের সঙ্গে কোথাও নিজের একটা মিল খুঁজে পেতেন।

 

আমি আজ তার কাব্যের গুণাগুণ বিষয়ে কিছু বলব না। এ মুহূর্তে ব্যক্তি ফররুখ আহমদই আমার কাছে বড় হয়ে উঠছেন বার বার। মনে জেগে উঠছে নানা স্মৃতির ভগ্নাংশ। তবে এ কথা অবশ্যই বলব, তার মৃত্যুতে অনেকখানি গরিব হয়ে গেছে আমাদের কাব্যক্ষেত্র। একদা তিনি লিখেছিলেন—

 

গোধূলি তরল সেই হরিণের তনিমা পাটল

অস্থির বিদ্যুৎ, তার বাঁকা

শিঙে ভেসে এলো চাঁদ,

সাত সাগরের বুকে সেই শুধু

আলোক চঞ্চল,

অন্ধকার ধনু হাতে তীর ছোড়ে

রাত্রির নিষাদ

 

কিংবা

 

আমি দেখি পথের দুধারে

ক্ষুধিত শিশুর শব,

আমি দেখি পাশে পাশে উপচিয়া

পড়ে যায়

ধনিকের গর্বিত আসর।

আমি দেখি কৃষাণের দুয়ারে

দুর্ভিক্ষ বিভীষিকা,

আমি দেখি লাঞ্ছিতের ললাটে

জ্বলিছে শুধু অপমান টীকা,

গর্বিতের পরিহাসে মানুষ

হয়েছে দাস,

নারী হলো লুণ্ঠিতা গণিকার

 

মতো পঙিক্ত, তার লেখনী আর কোনো দিন চঞ্চল হবে না ভাবলেও দুঃখ হয়। আমার এই লেখা খুবই অকিঞ্চিত্কর তবে এইটুকু সান্ত্বনা অনেক বছর আগে দৈনিক মিল্লাতের রবিবাসরীয় ক্রোড়পত্রে আমি এই প্রতিভাবান কবির প্রতি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছিলাম একটি সুদীর্ঘ প্রবন্ধে। একজন অর্বাচীন উত্তর সাধকের সেই প্রবন্ধ পাঠ করে তিনি অখুশি হননি, এই তথ্য আমার পক্ষে খুবই তৃপ্তিকর।

 

ফররুখ আহমদ কোনো ব্যাংক ব্যালান্স রেখে যাননি, রেখে যাননি কোনো জমিজমা। তার চিরনিদ্রার এতটুকু ঠাঁইয়ের জন্য জমি খুঁজতে গিয়েও বিড়ম্বিত হতে হয়েছে তার অনুরাগীদের। শেষ পর্যন্ত উজ্জ্বল উদ্ধার হয়ে এলেন কবি বেনজীর আহমদ। তিনি বললেন, আমি আমার ফররুখকে নিয়ে যাব আমার ডেরায়। একজন কবিকে কবরস্থ করা হলো আর এক কবির বসতবাড়ির সীমানায়। তার কবরের জমি নিয়ে যত ঝামেলাই হোক, তার সন্তানরা যত বঞ্চিতই হোক পার্থিব জমিজমা থেকে, তিনি রেখে গেছেন অন্যরকম বিঘা বিঘা জমি—যে জমির ফসল দেখে চোখ জুড়োবে সাহিত্য পথযাত্রীদের। এই সমৃদ্ধ জমি পেছনে রেখে তিনি নিজে যাত্রা করেছেন নতুন রহস্যময় পানিতে, নিরুদ্দেশ সফরে।

 

২৯ অক্টোবর ১৯৭৪ লেখা এই রচনাটি কবির ব্যক্তিগত দিনপঞ্জি থেকে মুদ্রিত।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল