রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর ইইউর নতুন নিষেধাজ্ঞা

জার্মান উপকূলে রাশিয়ার জ্বালানি তেলবাহী একটি জাহাজ
রাশিয়ার তেল ও জ্বালানি খাতের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গতকাল শুক্রবার দেওয়া ১৮তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজে রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের প্রতি ব্যারেলের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭ দশমিক ৬ ডলার। যা বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় গড়ে ১৫ শতাংশ কম।
বর্তমানে ব্রেন্ট ফিউচার্স অনুযায়ী প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৭০ ডলার ছাড়িয়েছে। ইইউ বলছে, নতুন নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়ার জ্বালানি খাত বড় ধাক্কা খাবে। তবে রাশিয়ার দাবি, তারা আগেই এসব নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কালাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার ওপর এযাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ অনুমোদন করেছি। আমরা তাদের (জীবনযাত্রার) ব্যয় বাড়াতে থাকব, যাতে মস্কো আগ্রাসন থামাতে বাধ্য হয়।’
২০২২ সালে ইউক্রেনে হামলার পর থেকেই রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে পশ্চিমা দেশগুলো। এর আগে জি-৭ ভুক্ত দেশগুলো রাশিয়ার জ্বালানি তেলের সর্বোচ্চ মূল্য ৬০ ডলার নির্ধারণ করেছিল। তবে বিশ্লেষকদের মতে, তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হয়নি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ নতুন নিষেধাজ্ঞাকে ‘একপক্ষীয় ও অবৈধ’ উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বসবাসে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবু নতুন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা এই নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করছে, তাদেরও নেতিবাচক প্রভাব ভোগ করতে হবে। এটি একটি দুইধারী তলোয়ার।’
ইইউর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি একে ‘প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী’ বলে উল্লেখ করেন। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিই সিবিহা বলেন, ‘রাশিয়ার তেলের আয়ের উৎস বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটাই তাদের আগ্রাসনের মূল চালিকাশক্তি।’
এদিকে যুক্তরাজ্য ইইউর এই নিষেধাজ্ঞার প্রতি সমর্থন দিলেও যুক্তরাষ্ট্র এখনো নতুন মূল্যসীমা নির্ধারণে অনাগ্রহী। ফলে ইইউর নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা কঠিন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শান্তি আলোচনায় গতি আনার তাগিদ জেলেনস্কির
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে চলমান শান্তি প্রক্রিয়ায় আরও গতি আনার নির্দেশ দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শুক্রবার তিনি জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের নতুন সচিব রুস্তেম উমেরভকে এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নিতে বলেন।
চলতি বছরের শুরুতে তুরস্কে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে দুই দফা শান্তি আলোচনা হয়। তবে তাতে অগ্রগতি ছিল সীমিত, মূলত সেনা বন্দি ও নিহতদের মরদেহ বিনিময়ের বিষয়ে কিছু অগ্রগতি হয়েছিল।
ইতিমধ্যে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়া নতুন করে বিমান হামলা জোরদার করেছে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি রাশিয়াকে ৫০ দিনের মধ্যে শান্তিচুক্তিতে সম্মত না হলে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন।