জুলাই অভ্যুত্থান: চার চ্যালেঞ্জে জটিল তদন্ত

জুলাই আন্দোলনে নিহতদের বিচার চেয়ে স্বজনদের আন্দোলন চলছে
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের নিয়ে দায়ের করা ১ হাজার ৬০১টি মামলার মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ মামলায় ‘সন্তোষজনক অগ্রগতি’ হয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে বাকি মামলাগুলোর তদন্তে চারটি বড় চ্যালেঞ্জ তদন্ত প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে।
এই চ্যালেঞ্জগুলো হলো:
-
অধিকাংশ শহীদের ময়নাতদন্ত না হওয়া,
-
চিকিৎসা প্রতিবেদন ও হাসপাতালের ছাড়পত্রে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অনুপস্থিত,
-
এজাহারে ভুল তথ্য ও ঘটনাস্থলের ভ্রান্ত বর্ণনা,
-
মামলায় অতিরিক্ত বা ঢালাও আসামি যুক্ত করা।
পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্ত ছাড়াই বেওয়ারিশ হিসেবে অনেক মরদেহ দাফন করা হয়েছে। ফলে পরিচয় শনাক্ত করা এবং মামলা প্রমাণে অসুবিধা হচ্ছে। সিসিটিভি ও ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ, ফরেনসিক বিশ্লেষণ এবং মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ নির্ধারণে সময় লাগছে।
তদন্তে মনিটরিং দল ও নির্দেশনা
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, এসব মামলার তদন্ত তদারকিতে ১০টি ‘মনিটরিং অ্যান্ড মেন্টরিং’ দল গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগ ও মহানগরের জন্য আলাদা টিম মাঠে রয়েছে। এসব টিম মামলার সত্যতা যাচাই ও হয়রানিমূলক আসামির অভিযোগ পর্যবেক্ষণ করছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেন, “আমাদের লক্ষ্য তদন্তকে নিখুঁত, নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য রাখা, যাতে আদালতে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা যায়।”
তদন্তের অংশ হিসেবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না থাকলে আদালতের অনুমতিতে মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে স্বজনেরা সম্মত না হলে গোসল করানো ব্যক্তি বা প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছে।
ঢালাও আসামির বিরুদ্ধে সতর্কতা ও রাজনৈতিক প্রভাব
গত বছরের অক্টোবরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ঢালাওভাবে আসামি করার বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়। অনেক মামলার নেপথ্যে রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত বিরোধ এবং বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছিল। এই প্রেক্ষাপটে সরকার ঘোষণা দেয়, হয়রানিমূলক মামলায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
গেজেট ও মামলা সংক্রান্ত তথ্য
এ পর্যন্ত সরকার ৮৪৪ জন শহীদের নাম গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে। কিন্তু হত্যা মামলা হয়েছে ৬৩৭টি। অনেক শহীদের পরিচয় অজানা থাকায় মামলা করা যায়নি। কিছু পরিবার মামলায় অনাগ্রহ দেখিয়েছে। ভবিষ্যতে পরিচয় নিশ্চিত হলে পুলিশের পক্ষ থেকে নতুন মামলার উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।
পুলিশের তথ্য মতে, ৫ আগস্টের পর করা অন্তত ৩৫০টি মামলার প্রধান আসামি শেখ হাসিনা। সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ অনেক অভিযুক্ত ব্যক্তি এখনো পলাতক বা আত্মগোপনে রয়েছেন।
স্বজনদের অভিযোগ ও হতাশা
শহীদদের পরিবারগুলো এখনো বিচারের অপেক্ষায়। ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের নিহত ছাত্র ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, “সন্তান হত্যার এক বছর হতে চলল, অথচ বিচারে সন্তোষজনক কোনো অগ্রগতি নেই। আমরা ভেবেছিলাম, নতুন সরকার এই বিচার নিশ্চিত করবে, কিন্তু সেই আশাও ভেঙে যাচ্ছে।”