শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫, আষাঢ় ২৭ ১৪৩২, ১৫ মুহররম ১৪৪৭

ব্রেকিং

এনবিআর সংস্কার পরিষদের বহু সদস্যের ‘ক্ষমা প্রার্থনা’, মাঠে ফেরার প্রস্তুতি ৭.৭৫ কোটি টাকার স্থাপনা ভেঙে নতুন স্মৃতিস্তম্ভ গড়ার কাজ শুরু ইসরায়েল আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল: ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সংস্কার ছাড়া যেনতেন নির্বাচন চায় না জামায়াত: শফিকুর রহমান আশরাফুল, সাকিবদের পর এবার নতুনদের চিনছে শ্রীলঙ্কা বিচার ও সংস্কারকে নির্বাচনের মুখোমুখি করা যাবে না: সাকি সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থায়(পিআর) ‘ভবিষ্যৎ বিভক্তি’র শঙ্কা তারেক রহমানের জুলাই বিপ্লব নিয়ে কটূক্তি করায় কুষ্টিয়ায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ক্লোজড কলেজ প্যাডে ছাত্রদলের প্রচারণা? অধ্যক্ষের ব্যাখ্যা ঘিরে বিতর্ক মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের সংঘাত বিস্তার: বিশ্লেষণ কলম্বিয়ায় পাহাড়ধসে মৃত্যু ১৬, নিখোঁজ অন্তত ৮ “ত্রাণ নিতে এলে গুলি করতাম”—গাজার ঘটনায় মুখ খুললেন ইসরায়েলি সেনারা তেহরানে ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার চলছেই, মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ৪৫০ ইরানে বাংলাদেশিদের সহায়তায় হটলাইন চালু উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভ: সিলেটে তিনজন কারাগারে ইসরায়েলের টার্গেটে ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার ভবন লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক ১৩ জুন তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন: ফখরুল রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হবে কাঁচের মতো স্বচ্ছ ঘর: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাচনের ঘোষিত সময় মাথায় রেখে যথাসময়ে রোডম্যাপ দেবে ইসি: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ছাত্রদল নেতা নাছির উদ্দিন মণিপুরে আবার উত্তেজনা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের চাপে ঢাকার ৪ থানায় সক্রিয় অর্ধশতাধিক অপরাধী দল জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে: প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি: সালাহউদ্দিন আহমদ জুলাই সনদ–ঘোষণাপত্র হলে ঘোষিত সময়ে নির্বাচনে আপত্তি নেই: এনসিপি ২৫ কিলোমিটার যানজট, ২৪ ঘণ্টায় পারাপার ৬৪ হাজার যানবাহন বান্দরবানের রুমা ও থানচি ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আংশিকভাবে প্রত্যাহার গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো, জাতিসংঘ নিরাপত্তা গরম মসলার বাজার শীতল: ক্রেতা কমে যাচ্ছে, দাম কিছুটা স্থিতিশীল ঈদে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দই-মিষ্টি মজুত, রংপুরে হিমাগারে অভিযান ও দুই লাখ টাকা জরিমানা বান্দরবানের লামায় পাহাড় ধসের শঙ্কায় ৬০ রিসোর্ট বন্ধ নির্বাচন নিয়ে তরুণদের প্রতি অসত্য অভিযোগ ও বাস্তবতা ভারতের মুসলমানদের কেন বারবার দেশপ্রেমের প্রমাণ দিতে হয় সংবিধান পরিবর্তন ছাড়া ফ্যাসিবাদ বিলোপ সম্ভব নয়: এনসিপি মুখ্য সমন্বয়ক একুশের বন্ধুত্বে আগামীর পথচলা: বার্ষিক সম্মেলনে ২১তম বিসিএস প্রশাসন ফোরাম বিজিএমইএ`র নতুন নেতৃত্বে আসছেন বাবু, নিরঙ্কুশ জয়ের ইঙ্গিত জিলহজ মাসের আমল ও কোরবানির তাৎপর্য চট্টগ্রামে নারীকে লাথির ঘটনায় ভাইরাল আকাশ চৌধুরী বহিষ্কৃত, জামায়াতের বিবৃতি সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেই, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিল পবিস শ্রমিকরা আনচেলত্তির স্বপ্ন - রিয়াল মাদ্রিদের মতো করে খেলাবেন ব্রাজিলকে ডিমের দাম এখনো চড়া, ডজন ১৩০–১৪০ টাকায় বিক্রি বৈরী আবহাওয়ার কারণে নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপের সঙ্গে সারাদেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ হারের পর লিটনের মনোভাব - এখনো দুই ম্যাচ বাকি কাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব জুয়েলারি দোকান বন্ধ ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্র চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করবে ডিএনএ টেস্ট করে নামফলক ও মর্যাদা চায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা বেতন না পেয়ে ডাকাতি, জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ারসহ তিনজন আটক “বাংলাদেশে কৌশলগত স্বার্থ নেই দক্ষিণ কোরিয়ার”—রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক “শাপলার হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই”—হেফাজতের বিবৃতি মির্জা আব্বাস: “করিডর আর স্টারলিংক আনা হচ্ছে আরাকান আর্মির জন্য” জিলহজ মাসের চাঁদ দেখে যে দোয়া পড়বেন নির্বাচনের আগে যতটুকু দরকার, ততটুকুই সংস্কার করতে হবে: মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ‘চিন্তার স্বাধীনতাও হারাচ্ছি?’— নারী কমিশন বিতর্কে গীতিআরার উদ্বেগ ইউক্রেনে রাশিয়ার টানা হামলায় নিহত ১২, কঠোর চাপের আহ্বান জানালেন জেলেনস্কি সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন – তিনটি কঠিন দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট আমরা জুলাই অভ্যুত্থান ক্ষমতার পালাবদল নয়, এটি মৌলিক সংস্কার: নাহিদ হলুদ সাংবাদিকতা’ বিরোধী স্লোগানে উত্তাল শিক্ষক মিছিল ভারতের নিষেধাজ্ঞায় আখাউড়া বন্দর দিয়ে রপ্তানি কমেছে ৪০% বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি চলছে, দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি জাতীয় স্বার্থে অভিমান ভুলে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান : জামায়াত আমির আন্দোলনের পর অবশেষে নিয়োগ পেলেন ৪৩তম বিসিএসের বাদ পড়া ১৬২ জন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিতে ইসির সামনে এনসিপির বিক্ষোভ কাল বাংলাদেশে স্টারলিংকের যাত্রা, স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের নতুন যুগ শুরু নরওয়ের দৃঢ় সমর্থন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিগত সরকারের সময় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত, এমন অবস্থা ছিল যে খতিবকেও পালাতে হয়েছিল: বাণিজ্য উপদেষ্টা গায়ের জোরে নগর ভবন দখল করে আন্দোলন চালাচ্ছে বিএনপি আবারও রাজপথে নামার ইঙ্গিত আসিফের, সতর্ক করলেন হাসনাত গোপন অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন স্থগিত, ২০ মে আলোচনায় বসবে ঐক্য পরিষদ ভারতের আমদানি নিষেধাজ্ঞা সীমান্ত বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে ভারতের নতুন সিদ্ধান্তে উত্তর-পূর্বাঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশি ভোগ্যপণ্য আমদানি বন্ধ গত ৯ মাসে জুলাই-যোদ্ধাদের ওপর ৩৮টি হামলা জবি’র ৪ দফা দাবি মেনে নেওয়ায় আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা ডিবি থেকে মুক্তির পর আন্দোলনে উল্লাস জবি শিক্ষার্থীর গাজা দখলে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করলেন ট্রাম্প শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডে বিচার নিশ্চিতের অঙ্গীকার উপদেষ্টা আসিফের সোনার দাম ভরিতে কমল ৩ হাজার ৪৫২ টাকা, নতুন দর কার্যকর শুক্রবার থেকে ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু: নিরাপত্তা নিশ্চিতে বড় পদক্ষেপ প্রশাসনের আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধে ভারতের উদ্বেগ শ্রীনগরজুড়ে বিস্ফোরণ, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওমর আব্দুল্লাহর উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত: আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ ‘চলবে’, শনিবার গণজমায়েত ড্রোন যুদ্ধ: ভারত-পাকিস্তান বিরোধের নতুন অধ্যায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সরকার গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আ.লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়বেন না আন্দোলনকারীরা ‘আপ বাংলাদেশ’–এর আত্মপ্রকাশ পূর্বঘোষণা ছাড়া ভারত সফরে সৌদি প্রতিমন্ত্রী, পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনায় কূটনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে মার্চের হুঁশিয়ারি নাহিদ ইসলামের দেশীয় ওষুধ কোম্পানি রেনাটাকে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে আইএফসি তারেক রহমান: সরকার হয়তো স্বৈরাচারের দোসরদের দেশত্যাগে সহায়তা করছে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারতের নির্দেশে ৪ বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল ইউটিউবে বন্ধ

এডিটর`স চয়েস

ভাষা-সাহিত্য, ধর্মবোধ ও হারানো মুসলিম ঐতিহ্য

মুহাম্মাদ আনছরুল্লাহ হাসান

 প্রকাশিত: ০৮:১৮, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২

ভাষা-সাহিত্য, ধর্মবোধ ও হারানো মুসলিম ঐতিহ্য

ভাষা-সাহিত্যের মৌলিক সত্তা কী? এ প্রশ্নের উত্তর সহজ কথায় মানুষ। ভাষা-সাহিত্যের পেছনেও মানুষ। আবার মানুষকে নিয়েই ভাষা-সাহিত্য। মানুষের বোধ, বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনার সব ইতিবাচকতাই সাহিত্যের প্রধান প্রতিপাদ্য। মানুষের ভাব প্রকাশের জন্যই ভাষা। মানুষের মনের অলিন্দে, অন্তর্লোকের সমস্ত অন্দরে অন্তঃসলিলতার মত যেসব ভাবের উদয় হয়, সেটাই বিষয় বৈভবে, আকারে-প্রকারে ভাষা বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতির উপাদানে সমৃদ্ধ হয়।

ভাষা-সাহিত্যে যে মনের ভাব প্রকাশের কথা বলা হয় তার মৌলিক উপাদান হল জীবনদর্শন। অর্থাৎ ভাষা-সাহিত্যে যেমন মনের ভাব প্রকাশ করে তেমনি জীবনকেও তুলে ধরে। সর্বদেশের সর্বকালের সাহিত্যের ভাবপরিমন্ডল গড়ে ওঠে প্রধানত এই জীবনদর্শনকেই কেন্দ্র করে। সেই সাথে যুগের সামাজিক প্রতিবেশ, প্রকৃতির জীবন পরিমন্ডল, কখনো কখনো মানব মনের গুঢ় রহস্য উদঘাটনের প্রয়াসও চলে অবিচলভাবে। জীবনের সাথে যা কিছু যুক্ত- ধর্ম-দর্শন, সভ্যতা-সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি সবকিছু ভাব প্রকাশের বাহন ভাষার প্রয়োগ-ব্যবহারে, তার সুচারু হাতে জীবন্ত হয়ে ওঠে। জীবনবোধের এই চৈতন্য ও ভাবের অগ্রগতি সজীব রেখে শিল্পিতরূপে তা আরো বাঙ্ময় ও বিভাসিত হয়ে উঠে সাহিত্যে। সুতরাং কোনো মানবগোষ্ঠীর, কোনো দেশের ভাষা-সাহিত্য, এই জীবন-দর্শন বা বাস্তব ও সত্যবিমুখ হতে পারে না। বলা যেতে পারে এটা একটা আপ্ত বাক্য। সে দিক দিয়ে ভাষা-সাহিত্য হলো জীবনের প্রকৃতি। মানব সত্তার অবয়ব। সাহিত্যের স্বরূপ ও ভাষার গতি-প্রকৃতি নিরূপণে এই মূর্ত বাস্তবতাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয় বেশি। সেখানেই জীবন দর্শন হয়ে উঠে মুখ্য। তখন সাহিত্যে মানুষ হয়ে উঠে অবিচ্ছেদ্য, অখন্ডিত।  মানুষের শিক্ষা-দীক্ষা, জানাজানি, সামাজিকতার মধ্যে গড়ে ওঠা, অর্থনীতিকে নিয়ে বেঁচে থাকা, সংস্কৃতিকে লালন করা, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, নীতি-নৈতিকতা, আচার-আচারণ, জীবন-যাপন ইত্যাদি নানান বৈষয়িক ও পুরাতাত্ত্বিক ব্যাপার মানুষের মধ্যে শব্দের-বাক্যের নির্দেশের অর্থ জোগায়, ভাব-দর্শন সৃজন করে।

ভাষা-সাহিত্যে জীবনদর্শনের মর্মকথা অনেক ক্ষেত্রেই দেশজ। সমাজ ও কৃষ্টির ভূগোলে সীমাবদ্ধ। তার আশা-আকাঙ্ক্ষা, চিন্তা-চেতনা, বিশ্বাস ও অস্তিত্বের রৌদ্রছায়ায় লালিত। এই সাহিত্যের বিষয়বস্ত্ত লোক-জীবনের বিস্তীর্ণ ভূমি থেকে সংগৃহীত, এর প্রকরণ নির্দিষ্ট হয় বোধ ও বিশ্বাসের প্রকাশ ও আচরণের বিকাশ থেকে। সাহিত্যে জীবনদর্শন মূল্যায়নের এই ক্ষেত্রে ধর্মের অনুষঙ্গটি অপরিহার্যভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে। বিশ্বের সকল ভাষায় সকল সাহিত্যে ধর্মদর্শন প্রস্ফুটিত প্রচ্ছ্ন্নভাবে। ভাষার সাথে ধর্মের সম্পর্ক যেমন অনস্বীকার্য সাহিত্যেও তেমনি ধর্মের অন্তর্নিহিত সম্পর্ক স্বীকৃত। সৈয়দ আলী আহসানের ভাষায় ‘ভাষার সঙ্গে যেমন ধর্মের সম্পর্ক তেমনি মানুষের জীবনের সর্বপ্রকার সব মুহূর্তের আচরণের সম্পর্ক। এই যে আচরণ, মানুষের অস্তিত্ব, অবস্থান এবং চেতনালোকের অভিজ্ঞা প্রকাশ পায় ভাষার শব্দজাতে, সাহিত্যে সেটাই জীবনদর্শন, সেখানে ধর্মের অনুষঙ্গ গভীরে প্রোথিত, নিবিড় নিবিড়তরভাবে অঙ্গবদ্ধ।’

ভাষা-সাহিত্যে ধর্মের যোগসূত্র নির্ণয়, মানুষের শৃজনশীলতা ও কুশলতা অথবা একাগ্রতা ও পরিশ্রম এবং সাহিত্যের পরিবর্তন ও উত্তরণের পেছনে মৌলিকভাবে ধর্মীয় প্রভাব যে সক্রিয় ছিল তা খুব স্পষ্টভাবেই দৃশ্যমান। সংক্ষেপে এতটুকু বলা যায় ইংরেজী সাহিত্য ও ভাষায় (বৃটিশ ভার্সন) একদিকে যেমন বৃটেনের কিংবা অবিভক্ত বৃটিশ ইউরোপের জনজীবনের চিত্র এবং তাদের চিন্তা-চেতনা, ধর্ম-দর্শন তথা বাইবেল দর্শন, সভ্যতা-সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটেছে, তেমনি আইরিশ ও আমেরিকানদের জীবন-যাপনে খ্রিষ্টীয় প্রভাব, পশ্চিমা সভ্যতা, সাংস্কৃতিক আবহ ও তাদের সামগ্রিক জীবনাচারের কথাও প্রাণবন্ত রূপ লাভ করেছে। শুধু ভাষা সাহিত্য কে? তাদের সার্বিক গবেষণা, বিজ্ঞানের চর্চা এমনকি ফিল্ম ও চিত্রজগতের ক্যানভাসেও ধর্মীয় অনুষঙ্গ গেঁথে দিয়েছে খুবই ব্যাপক ও আলোড়িত প্রতাপে। শুধু ‘যীশু খৃষ্ট’ ও ‘মেরী’কে নিয়েই কোটি কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বহু নামকরা ফিল্ম। এটা তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী তাদের কাজের পরিধি। আবার আরবী ভাষা ও সাহিত্যে ইসলাম পূর্বকালে একত্ববাদ-শূন্য যে পৌত্তলিক সামাজিকতা, জাহেলী চিন্তা-চেতনা, জীবনধারা ও সংস্কৃতির পরিচয় ফুটে ওঠেছে, ইসলাম পরবর্তী যুগে সেই আরবী ভাষায়ই ইসলামী চিন্তা-চেতনা, জীবনধারা ও সংস্কৃতির উৎকৃষ্ট প্রকাশ ঘটেছে। এ ছাড়া আসমানী  গ্রন্থ আলকুরআন নাযিল হওয়ার ফলে সমগ্র আরবী ভাষা ও সাহিত্যে এর এক স্থায়ী প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। কুরআনভিত্তিক এক বিশাল জীবনধর্মী সাহিত্যের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জীবনচরিত তথা সীরাত ও হাদীস শরীফ সমগ্র মানব জাতির সামনে ইসলামী আদর্শ ও সংস্কৃতির অত্যুজ্জ্বল নিদর্শন হিসাবে বিদ্যমান।

অন্য দিকে বাংলাভাষা ও সাহিত্য চর্চার ইতিহাসে প্রথমেই আসে বৌদ্ধদের কথা। বাংলাভাষার আদি নিদর্শন বৌদ্ধগান ও দোহা, যা চর্যাপদ নামে অত্যধিক পরিচিত। যে সময় এই পদ সাহিত্য রচিত হয় তখন ছিল বৌদ্ধ রাজাদের শাসনামল। এ চর্যাপদে বৌদ্ধধর্ম, জীবনাচার ও সংস্কৃতির পরিচয় সুস্পষ্ট। পদ রচয়িতাগণ এই পদ সাহিত্যে তাদের মনের ভাব প্রকাশের সময় ধর্মীয় পরিভাষা ও ধর্ম ভাবপূর্ণ ইঙ্গিতময় বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করেছেন। তাদের ধর্মানুভূতির কথা ব্যক্ত করেছেন অকপটে।

ঊনবিংশ শতাব্দীকে বাংলা সাহিত্যের রেনেসাঁর বা পুনঃজাগরণের সময় বলে অভিহিত করা হয়। আবার সেই সময়টাকে মধ্যযুগের অভিধায় চিহ্নিত করা হয়। কারণ চর্যাপদের পরে ঊনবিংশ শতাব্দীতে মুসলিম শাসনামল শুরু হওয়া পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের আর কোন নিদর্শন পাওয়া যায় না। এমনকি সেন বংশীয় রাজারা বাংলা ভাষা চর্চার উপর শাস্ত্রীয় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। মধ্যযুগে মুসলিম শাসনামলে বাংলা ভাষার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে সাহিত্য চর্চায় রাজ পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা হয়। হিন্দু মুসলিম উভয়েই এ পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে বিপুল উদ্যমে সাহিত্য চর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। এই মধ্যযুগে রাজা-বাদশাহদের পৃষ্ঠপোষকতায় মৃতপ্রায় বাংলাভাষার যখন পুনর্জন্ম ঘটে, তখন থেকেই বাংলা ভাষার মুসলমানী রূপ এবং বাংলা সাহিত্যের স্বতন্ত্র মুসলিম ধারা অনিবার্য হয়ে উঠে। তৎকালীন রাজভাষা ছিল প্রথমে তুর্কী ও পরবর্তীতে ফারসী। ফলে এসব ভাষার প্রভাব মুসলিম জনজীবনে দারুণভাবে পরিলক্ষিত হয়। আরবী-তুরকী-ফারসী ভাষার অসংখ্য শব্দ বাংলা ভাষায় প্রবিষ্ট হয়ে আমাদের ভাষাকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে। এসব শব্দের দ্বারা ইসলামী সভ্যতা-সংস্কৃতির প্রচ্ছন্ন আবহ সৃষ্টি হয়েছে। ভাষা-সাহিত্যে মুসলিম ভাবধারা, স্বতন্ত্র মুসলিম ধর্মীয় অনুপ্রেরণার উন্মেষ ঘটেছে।

ইংরেজ আমলে আমাদের মুসলিম ভাবধারায় ভাষা ও সাহিত্যের গতিপথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তারা সেন রাজাদের মত বাংলা ভাষা চর্চার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি বটে, তবে বাংলা ভাষাকে ‘সংস্কৃতের দুহিতা’ প্রমাণের প্রয়াশ চালায়। বাংলায় প্রবিষ্ট আরবী-ফারসী-তুর্কী শব্দ বাদ দিয়ে দুর্বোধ্য, দুর্জেয় সংস্কৃতি শব্দ নিয়ে কৃত্রিম সাধু বাংলা প্রচলন করা হয়। মুসলমানরা এ বাংলাকে গ্রহণ করেনি। হিন্দুরাও প্রথম প্রথম মেনে নেয়নি। পরবর্তীতে রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র এ ‘সাধু বাংলা’কে বহুলাংশে সহজবোধ্য ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলেন। পরবর্তীতে প্রমথ চৌধুরী, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র প্রমুখ সাধু বাংলার সরলীকরণ প্রক্রিয়ায় আরো অধিক সাফল্য অর্জন করেন। ধীরে ধীরে এ সাধু বাংলা একটা স্টান্ডার্ড রূপ ধারণ করে এবং ভাষার অনুষঙ্গ হিসেবে জীবন-বিশ্বাস, সংস্কৃতি, জীবনাচার ইত্যাদি সাহিত্যে সহজেই প্রবেশাধিকার লাভ করে। এরপর এ ভাষার সাহিত্যও হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে গণ্য হয়। ভাষা-সাহিত্যের হিন্দুয়ানী কর্তৃত্ব গগণচুম্বী রূপ ধারণ করে। এরই প্রতিক্রিয়া হিসেবে স্বাধীনতাকামী রণক্লান্ত মুসলিম মনীষীরা সাহিত্য সৃষ্টিরও তাগিদ অনুভব করেন। বিংশ শতাব্দীর শুরুতেই মুসলমানদের জাতীয় ভাষাতেই সাহিত্য রচনার প্রয়াশ লক্ষ্য করা যায়। হিন্দুদের ভাষা-সাহিত্যের পাষাণবেদীতে তখন মরু সাইমুম কিংবা প্রলয় ঝড় হয়ে সিডর-সুনামীর রূপ ধারণ করে আঘাত হানেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, সৃষ্টি করেন বাংলা ভাষা-সাহিত্যে পনশ্চ মুসলিম জাগরণ। এ সময় আরো এগিয়ে আসেন মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, মাওলানা আকরাম খাঁ, মীর মোশাররফ হোসেন, কবি ফররুখ আহমদ, কবি গোলাম মোস্তফা, জসীমউদ্দিন, বেনজীর আহমদ, মোফাখখারুল ইসলাম, মুঈনুদ্দীন, আরো বহু ভাষাবিদ, সাহিত্য-শিল্পী। এভাবে পাকিস্তান সৃষ্টির সময় পর্যন্ত এবং পাকিস্তান সৃষ্টির পরেও এক-দুই দশক পর্যন্ত আমাদের জাতীয় ভাষায় আমাদের জাতির সাহিত্য রচনার সচেতন প্রয়াস চলে। কিন্তু স্বাধীনতা-উত্তর সুদীর্ঘ সময়ে আমাদের জাতীয় মুসলিম ভাবধারা, কৃষ্টি-কালচার ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের আলোকে নতুন জীবনধর্মী সাহিত্য সৃষ্টির যে কক্ষপথ তৈরি হওয়ার কথা তা আজ অবধি হয়নি। আমাদের জাতীয় ভাষা ও সাহিত্যের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যপথ স্থির হয়নি। এর বিপরীতে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে হিন্দু ধর্ম, ধর্মাদর্শ, হিন্দুমতবাদ ও সাম্প্রদায়িক ভাবধারা ও তাদের সংস্কৃতির চর্চা তথা সাহিত্যে বাঙালী হিন্দুদের অবস্থান ও ক্ষেত্র বিবেচনা করতে গেলে এক কথায় তাদেরকে অগ্রসর বলতে হবে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে মুসলিম বাদশাহদের পৃষ্ঠপোষকতায় মৃতপ্রায় বাংলাভাষার যখন পুনর্জন্ম ঘটে, তখন মুসলমানদের পাশাপাশি হিন্দুরাও সমান্তরালে সর্বাত্মকভাবে বাংলা চর্চা শুরু করে। ফলে মুসলিম শাসনামলে যে বিশাল সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে সেখানে দুটি সুস্পষ্ট ধারা বা বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল। তার একটি মুসলিম ধারা অন্যটি হিন্দু ধারা। হিন্দুদের রচিত বাংলা সাহিত্যের বিষয়, ভাষা, জীবনদর্শন, সামাজিক মনোভাব সবই মুসলমানদের রচিত সাহিত্য থেকে ভিন্ন ও স্বতন্ত্র। একই ভৌগলিক পরিবেশ ও আবহাওয়ায় লালিত-পালিত হওয়া সত্ত্বেও উভয়ের ভাষিক ও সাহিত্যিক বৈশিষ্ট্য ছিল স্বতন্ত্র। এ স্বাতন্ত্র্য গড়ে উঠেছে উভয়ের স্ব স্ব ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চেতনার কারণে। ঐ হিন্দুদের রচিত সাহিত্যে শুধু তাদের ধর্ম ও সংস্কৃতির পরিচয় বিধৃত হয়েছে।

আর হিন্দু বাঙ্গালীরা মুসলিমদের ধর্মীয় পরিভাষা ও শব্দ পরিত্যাগ করে শুধু তারই প্রতিশব্দে মূলত সংস্কৃত শব্দ ব্যবহার করতেন এবং সেগুলোতে তাদের ধর্মীয় মনোভাব ও জীবনধারার প্রতিফলন ঘটেছে। এমনকি ইংরেজ আমলে ইংরেজদের পৃষ্ঠপোষকতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ব্রাক্ষ্মণ পন্ডিতদের দ্বারা যে সাধু বাংলা তৈরি হয়, তা ছিল সম্পূর্ণ হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী। বাঙালী মুসলমানগণ সে ভাষাকে সহজে মেনে নিতে পারেনি এবং মুসলমানদের ধর্ম ও সংস্কৃতির কোন প্রতিনিধিত্ব তাতে ছিল না।

তারপর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতির ইতিহাস, উপাখ্যান উত্তরোত্তর অগ্রগতিময় ও সমৃদ্ধ হয়েছে। হিন্দু সাহিত্যিকদের জীবনে, মানসে, আচরণে হিন্দু ধর্মের বিকাশ ঘটেছে দুর্জয় গতিতে। তাদের রচনাগুলোর মাঝে হিন্দুত্ববাদের গোঁড়ামী ও উগ্র মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। খ্যাতিমান উপন্যাসিক, লেখক শরৎচন্দ্র তার ‘বর্তমান হিন্দু-মুসলিম সমস্যা’তে তো উগ্র হিন্দুত্ববাদ ও তীব্র মুসলিম বিদ্বেষকেই উস্কে দিয়েছে রামরাজ্যের ভূমিতে। হিন্দু সাহিত্যিকরা তাদের রচনায়, সাহিত্য সম্ভারে হিন্দুত্ববাদের ভাবধারা ও হিন্দুধর্মমতের বৃক্ষকে ফুলে ফুলে সুশোভিত করেছে। এর চারাগাছকে সুবিশাল মহীরুহে পরিণত করেছে। সেই মধ্যযুগ হতে অবিরত ধারায় এর সাধনা চলে আসছে, যার প্রয়াস একই সমান্তরালে একই তেজস্ক্রিয়ায় আজো দেদীপ্যমান।

শত-শহস্র আফসোস ও দুঃখ নজরুল ফররুখ পরবর্তী বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যায়গুলোতে আমাদের জাতীয়তার মূলভিত্তি ও আত্মপরিচয়ের গৌরবময় ঐতিহ্য, স্বকীয় মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলেছি। কবিতা, গল্প, নাটক, উপন্যাস, ছোট গল্প, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ইতিহাস তথা ভাষা-সাহিত্যের সকল শাখা-প্রশাখায় ধর্ম, ধর্মীয় চেতনা, সংস্কৃতি তথা সামগ্রিক মুসলমানিত্বেরও কোন স্থান হচ্ছে না। যে ভাষা-সাহিত্য এক সময়ে মুসলিম অবদানে পূর্ণ ও গৌরবদীপ্ত ছিল, সেখানে এক বিরাট শূন্যতা এখন জায়গা করে নিয়েছে। সে শূন্যতা হচ্ছে মুসলিম মন-মানস চিন্তা-চেতনা ও সভ্যতার, সে শূন্যতা মুসলিম বোধ-বিশ্বাস ও মূল্যবোধের। এ শূন্যতা মেনে নেওয়ার মত নয়। তাই নতুন শতাব্দীতে আমাদের আসল পরিচয় ফিরে আসুক, ভাষা-সাহিত্যে মুসলিম ভাবধারার পুনর্জন্ম ঘটুক- এই আশাবাদই রইল।