এইচএসসি পরীক্ষা পেছাচ্ছে না বরং কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি সতর্কতা

করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নতুন করে উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ২৬ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক মহলে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরীক্ষার সময়সূচি পেছানো নিয়ে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়লেও শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পূর্বনির্ধারিত সময়েই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
শনিবার (১৪ জুন) আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার এক বিবৃতিতে বলেন, "দেশে করোনা ও ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ছে, এটা সত্য। তবে এখন পর্যন্ত পরীক্ষার সময়সূচি পেছানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ২৬ জুন থেকে পরীক্ষা শুরু হবে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ বুঝতে পারি। কিন্তু পরীক্ষা পেছানোর সুযোগ নেই। পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হবে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে আসন বিন্যাস করা হবে। পরীক্ষার্থীদের জন্য মাস্ক ও স্যানিটাইজার বাধ্যতামূলক করা হবে।"
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে জীবাণুনাশক ছিটানোর ব্যবস্থা থাকবে। পরীক্ষার্থীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক এবং প্রবেশপথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। পরীক্ষার হলে প্রবেশের আগে শরীরের তাপমাত্রা মাপার জন্য থাকবে থার্মাল স্ক্যানার। আসন বিন্যাসে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা হবে যাতে একজন পরীক্ষার্থী অন্যজনের সংস্পর্শে না আসে।
কেন্দ্র সচিবদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পরীক্ষার আগে ও পরে কেন্দ্র প্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় অতিরিক্ত চিকিৎসাকর্মী ও ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম রাখার কথাও বিবেচনায় রয়েছে।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, "বর্তমান সংক্রমণের মাত্রা পরীক্ষা পেছানোর মতো নয়। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছি। সংক্রমণের পরিস্থিতি যদি হঠাৎ খারাপের দিকে মোড় নেয়, তখন সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
তিনি জানান, পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হবে এবং পরীক্ষার্থীদের যেন কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে না পড়তে হয়, তা নিশ্চিত করতে বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
একাধিক অভিভাবক ও শিক্ষক ঢাকা পোস্টকে জানান, দ্রুততম সময়ে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো জরুরি। এতে করে পরীক্ষার্থীদের চাপ কমবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানা সহজ হবে।
মোহাম্মদপুরের এক অভিভাবক বলেন, “আমার ছেলে পুরো সিলেবাস শেষ করেছে। পরীক্ষা পিছিয়ে দিলে ওদের মানসিক চাপ আরও বাড়বে। বরং দ্রুত পরীক্ষা শেষ করা গেলে ভালো হয়। তবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সরকারকে কঠোর হতে হবে।”
অনেক শিক্ষকই জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালে যেভাবে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ‘অটোপাস’ দেওয়া হয়েছিল, সেই পদ্ধতি এবার গ্রহণযোগ্য হবে না।
ঢাকা কলেজের এক অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “অটোপাস সিদ্ধান্ত তখনকার প্রেক্ষাপটে যৌক্তিক ছিল। তবে এবারের বাস্তবতা ভিন্ন। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস ও প্রস্তুতির সুযোগ পেয়েছে। সুতরাং সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নেওয়াই হবে যথার্থ সিদ্ধান্ত।”
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তনের বিষয়ে কেউ যেন বিভ্রান্ত না হন, সে জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বোর্ডের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ করা হবে।
বোর্ডের প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী, উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা আগামী ২৬ জুন ২০২৫ থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। বোর্ড কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার পূর্ব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাসে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।