মঙ্গলবার ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, মাঘ ১ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬

ব্রেকিং

৫ আগস্ট ‘সার্বক্ষণিক যোগাযোগে’ ছিলেন বাংলাদেশ ও ভারতের সেনাপ্রধান প্রতিবেশীদের মধ্যে বিদ্বেষ কারো জন্যই ভালো না: ভারতের সেনাপ্রধান প্রতিবেশীদের মধ্যে বিদ্বেষ কারো জন্যই ভালো না: ভারতের সেনাপ্রধান ২৫ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল শহিদ আবু সাঈদের পরিবারের গণহত্যা: হাসিনাসহ জড়িতদের কলরেকর্ডের ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ রেহানা ও ছেলেমেয়ের প্লটে অনিয়ম: দুদকের ৩ মামলায় হাসিনাও আসামি পুলিশের ৭৪ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বদলি এবার বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করল ভারত ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদন খণ্ডন সিএ প্রেস উইংয়ের ‘ভালো বন্ধু’ টিউলিপকে বরখাস্ত করার মত কঠোর হতে পারবেন স্টারমার? একের পর এক চালের জাহাজ আসছে বন্দরে

জাতীয়

চিন্ময় দাশের জামিন শুনানির জন্য ফের আবেদন

 প্রকাশিত: ১৪:৩৪, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

চিন্ময় দাশের জামিন শুনানির জন্য ফের আবেদন

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানি করতে আবারও আদালতে আবেদন জমা দিয়েছেন ঢাকা থেকে আসা আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের কাছে তিনি এই আবেদন জমা দেন।

এর আগে আদালতে আসেন আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ। এসময় আদালত ঘিরে ছিল কড়া নিরাপত্তা। আবেদন জমা দিয়ে বের হওয়ার সময় আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষের সঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরীসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আবেদন জমা দেওয়ার পর আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, “আমি গতকালকেও এসেছিলাম। গতকালকে শুনানি হয়নি আনফরচুনেটলি। আজকে উনি (আবেদন) অ্যাকসেপ্ট করেছেন। আমাকে শুনবেন।

“চিন্ময় প্রভু এবং আরো কিছু আইনজীবী ক্রিমিনাল কেইসে ইনভলভ হয়েছেন। এখানে উনার আইনজীবী যারা ছিলেন, তাদেরও ক্রিমিনাল কেইসে আসামি করা হয়েছে। উনারা যেহেতু আসতে পারছেন না, আমি উনাদের সহায়তা করতে এসেছি।”

চিন্ময় দাশের আইনজীবীরা কেন আসছেন না, ওনাদের সঙ্গে কথা হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “কথা হয়েছে, উনাদের বিরুদ্ধে যে মামলা আছে; ভয়ে আসছে না আরকি।”

আদালতের বৃহস্পতিবারের পরিবেশ ‘অনেক ভালো’ এবং নিরাপত্তা ‘সুন্দর’ মন্তব্য করে আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, “বিশেষ করে বারের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ দিতে হয়। উনি আমাকে ধরে নিয়ে আসছেন। বলে, চলেন আমি থাকব, অন্যরা কোনো কথা বলবেন না। পুলিশ সার্বক্ষণিক আমাকে সাহায্য করেছে।”

আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, “আমি এটার তীব্র নিন্দা করি। একজন আইনজীবীকে এভাবে রাস্তার মধ্যে মেরে ফেলা! এটা কত বড় নিন্দনীয় ও দণ্ডনীয়। নিশ্চয় এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

এসময় চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “উনি ঢাকা থেকে এসেছেন মামলা পরিচালনা করার জন্য। উনাকে সহযোগিতা করতে এসেছি। আমাদের বারে একজন অ্যাডভোকেট এসেছেন। উনাকে যতটুকু নিরাপত্তা বা সহযোগিতা দরকার আমরা দিতে প্রস্তুত।

“উনি ওনার মত আইনগতভাবে মোকাবেলা করবেন। আজকে উনি একটা দরখাস্ত নিয়ে এসেছেন। উনার ওকালতনামা ছিল সুপ্রিম কোর্ট বারের। আদালত বলেছেন, ‘এই বারের একটা ওকালতনামা যেকোনো আইনজীবী দিয়ে দিলে আমি শুনানি করব’। আপাতত এই অবস্থায় আছি।”

এর ঘণ্টাখানেক পর আবারও চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে যান আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ।

এর আগে বুধবার একই আদালতে আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষের করা তিনটি আবেদন খারিজ হয়েছিল।

বুধবার রাষ্ট্রপক্ষ ও আইনজীবী সমিতির নেতারা জানান, আসামি চিন্ময়ের পক্ষে আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষের কোনো ওকালতনামা না থাকায় তার আবেদন আদালত খারিজ করেছে। আর রবীন্দ্র ঘোষের দাবি ছিল, আদালতে আইনজীবীদের বাধায় তার আবেদনের শুনানি করা সম্ভব হয়নি।

বুধবারের আবেদন তিনটি ছিল- যে মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই মামলায় তার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে শুনানি করার অনুমতি প্রদান, ২৬ নভেম্বর করা মিস মামলার নথি উপস্থাপনের জন্য এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানির নির্ধারিত দিন এগিয়ে আনার বিষয়ে।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর পক্ষে আদালতে দাঁড়াতে আইনজীবীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও সমিতির সদস্যদেরকে এ সংক্রান্ত মামলার শুনানি থেকে বিরত থাকতে বলার কথা স্বীকার করেছে।

সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, জেলার বাইরে থেকে এসে শুনানি করতে কোনো নিষেধ নেই।

গত ৩ ডিসেম্বর চিন্ময়ের জামিন শুনানিতে কোনো আইনজীবী উপস্থিত না হওয়ার পর আগামী ২ জানুয়ারি ফের শুনানির দিন ঠিক হয়েছে। এর মধ্যে ওই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সেই শুনানির আগের দিনই সনাতনী জাগরণ জোট অভিযোগ করে, ৭০ জন আইনজীবীর নামে মামলা করা হয়েছে- যেন তারা চিন্ময়ের পক্ষে আদালতে হাজির হতে না পারে। কয়েকজন আইনজীবীর চেম্বারে হামলার অভিযোগও আনা হয়।

এর আগে ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের এ মামলায় জামিন নাকচ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম কাজী শরীফুল ইসলাম।

ওই আদেশের পর আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন। আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে নিয়ে যায়।

বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর করে। এরপর আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা মিলে তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়।

জামিন নামঞ্জুর হবার পর সেদিনই চিন্ময় দাশের আইনজীবীরা ওই আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন চেয়ে আবার জামিন আবেদন করেছিলেন। তবে সেদিন আর শুনানি হয়নি।

গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আট দফা দাবিতে সনাতনী সম্প্রদায়ের মুখপাত্র হিসেবে বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন চট্টগ্রামের ইসকন পরিচালিত মন্দির পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রক্ষচারী।

গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে জনসভার পর ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়, সেখানে চিন্ময় দাশকেও আসামি করা হয়।

মামলা হওয়ার এক মাসের মাথায় ২৫ নভেম্বর বিকালে ঢাকার শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে জানানো হয়, কোতোয়ালি থানার ওই মামলায় চিন্ময় দাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এর প্রতিবাদে ওইদিন রাতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা, দিনাজপুর, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ দেখানো হয়।

চিন্ময় দাশকে সেদিন রাতেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নেওয়া হয়।পরদিন আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয় কারাগারে।